ফেসবুকে 'ফেক' চেহারা চিনবেন যেভাবে

ফেসবুকে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ব্যবহার করে এ ধরনের চেহারা তৈরি করা হচ্ছে। বাস্তবে এ ধরনের কোনো ব্যক্তির অস্তিত্ব নেই। ছবি: সিনেটের সৌজন্যে
ফেসবুকে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ব্যবহার করে এ ধরনের চেহারা তৈরি করা হচ্ছে। বাস্তবে এ ধরনের কোনো ব্যক্তির অস্তিত্ব নেই। ছবি: সিনেটের সৌজন্যে

ফেসবুকে সুন্দর নারীর ছবি দেখলেই পটে যাবেন না। আবার সুদর্শন ছেলের ছবি মানেই তা আসল ছবি নয়। ফেসবুকে এখন চলছে ভুয়া ছবির কারবার। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা দিয়ে তৈরি করা হচ্ছে ভুয়া ছবি। বাস্তবে ছবির মানুষের কিন্তু কোনো অস্তিত্ব পাওয়া যাবে না। এ ধরনের ভুয়া চেহারার অ্যাকাউন্টগুলো ধরতে কাজ করছে ফেসবুক।

ফেসবুক কর্তৃপক্ষ বলছে, নানা চেষ্টা করেও ফেসবুকে ভুয়া ব্যক্তিদের ধরা যাচ্ছে না। গত শুক্রবার ফেসবুক শত শত ভুয়া অ্যাকাউন্ট, পেজ ও গ্রুপ বন্ধ করার কথা জানিয়েছে। এসব অ্যাকাউন্ট ও পেজ থেকে ফেসবুক ব্যবহারকারীদের ভুল পথে নেওয়া হচ্ছিল। এসব অ্যাকাউন্টে অধিকাংশ ক্ষেত্রেই যে ছবি ব্যবহার করা হয়েছে, তা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ব্যবহার করে তৈরি করা।

যে গবেষকেরা এসব অ্যাকাউন্ট নিয়ে গবেষণা করেছেন তাঁরা বলছেন, প্রথমবারের মতোই কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) ব্যবহার করে তৈরি করা ছবি এত বেশি ফেসবুকে ব্যবহারের প্রমাণ পাওয়া গেল। আগামী বছর মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের আগে ফেসবুকের মতো সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমগুলো কীভাবে এ সমস্যা ঠেকাবে, তা নিয়ে উদ্বেগ তৈরি হচ্ছে।

ফেসবুকের পাশাপাশি ইনস্টাগ্রাম থেকেও ভুয়া অ্যাকাউন্ট সরানোর কথা বলেছে ফেসবুক কর্তৃপক্ষ। ফেসবুক কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, তারা ৬১০ ফেসবুক অ্যাকাউন্ট, ৮৯ পেজ, ১৫৬ গ্রুপ ও ৭২ ইনস্টাগ্রাম অ্যাকাউন্টের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিয়েছে। এগুলো যুক্তরাষ্ট্র ও ভিয়েতনাম থেকে তৈরি করা হয়েছিল। যেসব পেজ বন্ধ করা হয়েছে এর মধ্যে একটিতে সাড়ে ৫ কোটি ফলোয়ার ছিল। এর অধিকাংশই যুক্তরাষ্ট্রের বাইরে।

ফেসবুকের ভুয়া অ্যাকাউন্টগুলোতে যে প্রোফাইল পিকচার ব্যবহার করা হয়, তা মূলত কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ব্যবহার করে তৈরি করা হয়। তবে ভালোভাবে খেয়াল করলে এসব ছবিতে কিছু খুঁত দেখতে পাওয়া যায়। বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ হচ্ছে, ফেসবুকে সব ছবি দেখেই এখন আর বিশ্বাস করবেন না। প্রতিটি ছবি ভালোভাবে খেয়াল করতে হবে।

ফেসবুক এক ব্লগ পোস্টে বলেছে, ‘এ ধরনের ভুয়া কার্যক্রম শনাক্ত এবং তা বন্ধ করতে আমরা নিয়মিত কাজ করে যাচ্ছি। আমাদের সেবা ব্যবহার করে যাতে মানুষের সঙ্গে প্রতারণা করা না হয়, সেটাই আমাদের চাওয়া।’

ফেসবুক কর্তৃপক্ষ আরও জানিয়েছে, তারা সরকারসংশ্লিষ্ট বা সরকারি কাজে বাইরে থেকে বাধা সৃষ্টি করে এমন অ্যাকাউন্টও বন্ধ করে দিতে ব্যবস্থা নিচ্ছে। এ ধরনের ভুয়া অ্যাকাউন্ট থেকে সমন্বিত ভুয়া কর্মসূচি ছড়ানোর আচরণ করা হয়। এ ক্ষেত্রে নিজের পরিচয় লুকিয়ে ব্যবহারকারীকে নানাভাবে বিভ্রান্ত করা হয়।

যেসব অ্যাকাউন্ট বন্ধ করা হয়েছে সেগুলো থেকে যুক্তরাষ্ট্র, ভিয়েতনাম, স্পেন ও চীনের নাগরিকদের লক্ষ্য করে নানা মিম ও কনটেন্ট ছড়ানো হচ্ছিল। যুক্তরাষ্ট্রের রাজনৈতিক খবর, ইমপিচমেন্টসহ নানা বিতর্কিত মতবাদ, রাজনীতিবিদ, নির্বাচন, বাণিজ্য, পারিবারিক মূল্যবোধ, ধর্মের স্বাধীনতাসহ নানা বিষয় নিয়ে ভুয়া তথ্য ছড়ানো হচ্ছিল। এ ছাড়া বিউটি অব লাইফ (বিএল) নামে যুক্তরাষ্ট্রের এক মিডিয়া থেকে ট্রাম্পের সমর্থনে নানা কনটেন্ট ছড়ানো হচ্ছিল। ফ্যাক্ট চেকিং সংস্থা স্নোপস বিএলের বিরুদ্ধে অভিযোগ করেছিল।

সোশ্যাল মিডিয়া অ্যানালাইসিস প্রতিষ্ঠান গ্রাফিকা ও আটলান্টিক কাউন্সিলের ডিজিটাল ফরেনসিক ল্যাব ভুয়া অ্যাকাউন্টের এসব নেটওয়ার্ক পরীক্ষা করে দেখেছে যে এসব অ্যাকাউন্ট থেকে ট্রাম্পের সমর্থনে ইংরেজিতে নানা কনটেন্ট প্রকাশ করা হয়। এমনকি ট্রাম্পের প্রতিদ্বন্দ্বীদের আক্রমণ করে নানা পোস্ট করা হয়। এসব অ্যাকাউন্টে মার্কিন নাগরিকদের ছদ্মবেশে ভুয়া প্রোফাইল পিকচার দিয়ে নানা গ্রুপে যুক্ত হওয়ার আহ্বান জানানো হয়। এআই ব্যবহার করে তৈরি করা এসব প্রোফাইল পিকচারের ছবিগুলোর সঙ্গে বাস্তবের কোনো মানুষের অস্তিত্ব পাওয়া যাবে না।

এসব ছবি ভালোভাবে খেয়াল করলে দেখা যাবে, তাতে ব্যবহার করা চশমা বা কানের দুল ঠিকমতো বসানো হয়নি। কারও ঘাড় যথাস্থানে নেই। কোনো ছবির ব্যাকগ্রাউন্ডে অমিল রয়েছে। তবে চেহারা এমনভাবে তৈরি করা হয়েছে যাতে তা আসল ব্যক্তি বলে মনে হতে পারে।

গ্রাফিকার বিশ্লেষকেরা বলেন, যেভাবে ভুয়া চেহারা বিশ্বাসযোগ্য করে তোলা হচ্ছে, সেটিই উদ্বেগের কারণ। কিছু কিছু ক্ষেত্রে অনলাইন থেকে সুদর্শন কারও ছবি নিয়ে ভুয়া প্রোফাইল তৈরির ঘটনাও ঘটেছে।

ফেসবুক জর্জিয়া থেকেও ভুয়া অ্যাকাউন্টের একটি নেটওয়ার্ক সরিয়েছে। দেশটি থেকে ৩৯ অ্যাকাউন্ট, ৩৪৪ পেজ, ১৩ গ্রুপ ও ২২টি ইনস্টাগ্রাম অ্যাকাউন্ট বাতিল করার কথা বলেছে প্রতিষ্ঠাটি। বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, সংবাদমাধ্যম, ও রাজনীতিবিদের ছদ্মবেশে এসব প্রোফাইল তৈরি করা হয়।

শুক্রবার টুইটারের পক্ষ থেকেও সৌদি আরব থেকে তৈরি করা ৫ হাজার ৯২৯টি অ্যাকাউন্ট বাতিল করার ঘোষণা দেওয়া হয়। এসব অ্যাকাউন্ট থেকে তথ্য হেরফের করে প্রকাশের অভিযোগ রয়েছে। টুইটারে যে ৮৮ হাজার অ্যাকাউন্ট থেকে স্প্যাম ছড়ানো হচ্ছিল তার মধ্যে ৫ হাজার ৯২৯টি অ্যাকাউন্ট ছিল মূল অংশ। এসব অ্যাকাউন্ট টুইটার থেকে পুরোপুরি বাতিল করা হয়েছে।

ফেসবুকে সতর্কতা
ফেসবুকে কোনো অপরিচিত কারও কাছ থেকে বন্ধুত্বের অনুরোধ এলে তা প্রকৃত কারও অ্যাকাউন্ট কি না, খেয়াল করুন। তাঁর ছবিটি প্রকৃত মানুষের ছবি কি না, তা ভালোভাবে খেয়াল করবেন। এখন যেহেতু কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ব্যবহার করে ছবি তৈরি করা হচ্ছে, তাই কারও চেহারা সুন্দর দেখে বিশ্বাস করবেন না। ছবিটি ভালোভাবে খেয়াল করুন। ছবিতে কোনো খুঁত দেখলে সন্দেহ করবেন। গুগলে ওই ব্যক্তি সম্পর্কে অনুসন্ধান করে দেখতে পারেন। অনেক ভুয়া অ্যাকাউন্ট অনলাইন থেকে সুদর্শন কোনো ছেলে বা মেয়ের ছবি নিয়ে তৈরি করা হয়। ভালোভাবে সার্চ দিলেই প্রকৃত বিষয়টি ধরতে পারবেন।