হ্যাক করেই বছরে কোটি টাকা আয় যে যুবকের

এশিয়া প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে সিস্টেমের নিরাপত্তা ত্রুটি খুঁজে বের করলে অর্থ পুরস্কার দেওয়ার কর্মসূচি বাড়ছে। ছবি: রয়টার্স
এশিয়া প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে সিস্টেমের নিরাপত্তা ত্রুটি খুঁজে বের করলে অর্থ পুরস্কার দেওয়ার কর্মসূচি বাড়ছে। ছবি: রয়টার্স

হ্যাকিং যে শুধু অনৈতিক, তা নয়। নৈতিক হ্যাকিংয়ের পথে থেকেও লাখ লাখ টাকা আয় করা যেতে পারে। ডিজিটাল রূপান্তরের এ যুগে তাই অনেকেই শুরু করেছেন এথিক্যাল বা নৈতিক হ্যাকিং। এ পথেই সিস্টেমের বাগ বা নিরাপত্তা ত্রুটি খুঁজে বের করে এক বছরেই প্রায় কোটিপতি হয়ে গেছেন ভারতের ২৩ বছর বয়সী এক যুবক। তিনি বেছে নিয়েছেন এথিক্যাল হ্যাকিংয়ের পথ। শিভাম ভাসিস্ট নামের ওই হ্যাকার যুক্তরাষ্ট্রের সান ফ্রান্সিসকোভিত্তিক হ্যাকারওয়ানের সঙ্গে যুক্ত।

হ্যাকারওয়ান মূলত কোনো সিস্টেমের দুর্বল দিকগুলো খুঁজে বের করে এবং বাগ বাউন্টি বা নিরাপত্তা ত্রুটি বের করে পুরস্কারের অর্থ গ্রহণ করে। স্টারবাকস, ইনস্টাগ্রাম, গোল্ডম্যান স্যাচ, টুইটার, জোমাটো ও ওয়ানপ্লাসের মতো প্রতিষ্ঠান তাদের গ্রাহক।

ভারতের এনডিটিভি অনলাইনের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, টুইটারে ‘বুল’ নামের প্রোফাইল দিয়ে পরিচিত ভাসিস্ট। পুরোপুরি হ্যাকার হিসেবে পেশাজীবন শুরু করা ভাসিস্ট চলতি বছরে এখন পর্যন্ত ১ লাখ ২৫ হাজার ডলার বা প্রায় ১ কোটি ৬ লাখ টাকা আয় করেছেন। গত কয়েক বছরে নিজের ছোট ভাইকেও হ্যাকিংয়ের পদ্ধতিগুলো শিখিয়েছেন। তাঁর বাবা কাজ থেকে অবসর নিতে পেরেছেন। পরিবার নিয়ে বিভিন্ন দেশ ঘুরতে পেরেছেন।

ভাসিস্ট বলেন, সপ্তাহে গড়ে ১৫ ঘণ্টা সময় হ্যাকিংয়ের পেছনে ব্যয় করেন। কর্মঘণ্টার ওপর নির্ভর করে সময়ের হেরফের হতে পারে। অনেক সময় টানা কয়েক দিন কাজ করে যেতে হয় আবার অনেক সময় কয়েক সপ্তাহ বসে কাটাতে হয়।

গত এক বছরে এশিয়া–প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে হ্যাকার চালিত নিরাপত্তা কর্মসূচি ৩০ শতাংশ বেড়ে গেছে। গত বছরে নিরাপত্তা ত্রুটি খুঁজে বের করে পুরস্কারের অর্থ পাওয়ার ক্ষেত্রে শীর্ষে ছিল যুক্তরাষ্ট্র। ১৯ শতাংশ আয় করেছেন দেশটির হ্যাকাররা। ১০ শতাংশ আয় করে দ্বিতীয় অবস্থানে ছিলেন ভারতের হ্যাকাররা।

হ্যাকারওয়ানের ‘হ্যাকার-পাওয়ার্ড সিকিউরিটি রিপোর্ট ২০১৯’ প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০১৮ সালে ২৩ লাখ ৩৬ হাজার ২৪ মার্কিন ডলার ভারতের এথিক্যাল হ্যাকার কমিউনিটি আয় করেছে। মাত্র ১৯ বছর বয়স থেকেই কম্পিউটার ও এথিক্যাল হ্যাকিং বিষয়ে পড়তে শুরু করেন ভাসিস্ট। শুরুতে অবশ্য তাঁর পরিবার দুশ্চিন্তাগ্রস্ত হয়ে পড়েছিল।

ভাসিস্ট বলেন, ‘আমি তাঁদের বোঝাতে পেরেছিলাম যে আমি যা করছি তা পুরোপুরি বৈধ। এ খাতে কেরিয়ার গড়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এর পর থেকে পরিবারের সমর্থন পেয়েছি। মাত্র ২০ বছর বয়সেই ইনস্টাকার্ট ও মাস্টারকার্ডের নিরাপত্তা ত্রুটি খুঁজে বের করে পুরস্কার পান তিনি। ভাসিস্ট বলেন, ওই অনুভূতি বোঝানোর মতো নয়। কয়েক রাত ঘুমাতে পারিনি।

ভাসিস্টের ভাষ্য, বিশ্বের বড় বড় প্রতিষ্ঠানগুলো এখন বাগ বাউন্টি পোগ্রাম চালু করছে। তাই এ ক্ষেত্রে সচেতনভাবে এগিয়ে যেতে পারলে অনেকেই কাজ করতে পারেন। নিরাপত্তা সেবার বিষয়ে আরও বেশি পড়াশোনা ও জানানো ও এথিক্যাল হ্যাকারদের কমিউনিটিতে যুক্ত হতে পারলে সিস্টেমের দুর্বলতাগুলো সহজে বের করা সম্ভব হবে।