উবার ছেড়ে 'পালালেন' সহ-প্রতিষ্ঠাতা

উবারের সাবেক প্রধান নির্বাহী ট্রাভিস কালানিক। ছবি: এএফপি
উবারের সাবেক প্রধান নির্বাহী ট্রাভিস কালানিক। ছবি: এএফপি

অ্যাপভিত্তিক পরিবহন সেবা উবারের সাবেক প্রধান নির্বাহী ট্রাভিস কালানিক উবারের পরিচালনা বোর্ড থেকে সরে দাঁড়ানোর ঘোষণা দিয়েছেন। গতকাল মঙ্গলবার উবারের এক বিবৃতিতে এ তথ্য জানানো হয়। উবারে থাকা সব শেয়ারও ছেড়ে দিচ্ছেন কালানিক। ফলে উবার থেকে একেবারেই আলাদা হয়ে যাচ্ছেন উবারের সহ-প্রতিষ্ঠাতা।

বিবিসি অনলাইনের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এ বছরের শেষ নাগাদ উবার থেকে সরে দাঁড়াবেন ট্রাভিস কালানিক। বেশ কিছু কেলেঙ্কারিতে জড়িয়ে ২০১৭ সালে উবারের প্রধান নির্বাহী পদ ছাড়তে বাধ্য হন ৪৩ বছর বয়সী এ উদ্যোক্তা। তবে উবারের নয়, সদস্যের পরিচালনা পর্ষদে নিজের পদ ধরে রেখেছিলেন তিনি। সম্প্রতি উবারে থাকা নিজের অধিকাংশ শেয়ার বিক্রি করে দেন তিনি। গত দুই মাসে আড়াই বিলিয়ন মার্কিন ডলার শেয়ার বিক্রি করেছেন। একসময় উবারে ৯০ শতাংশের বেশি শেয়ার ছিল কালানিকের।

কালানিকের বরাত দিয়ে উবার এক বিবৃতিতে বলেছে, এ দশকের শেষে এবং প্রতিষ্ঠানটি পাবলিক লিমিটেড প্রতিষ্ঠান হিসেবে কাজ শুরু করায় এটাই তাঁর সরে যাওয়ার জন্য উপযুক্ত সময়। তিনি এখন তাঁর বর্তমান ব্যবসা ও দাতব্য কাজগুলোতে গুরুত্ব দিতে পারবেন।

কালানিক বলেছেন, সামনে না থেকে পাশ থেকেই উবারের ভবিষ্যতের জন্য আনন্দ প্রকাশ করবেন তিনি।

কালানিক বর্তমানে সিটি স্টোরেজ সিস্টেমস নামের নতুন একটি উদ্যোগের নেতৃত্ব দিচ্ছেন। যুক্তরাষ্ট্রের লস অ্যাঞ্জেলেসভিত্তিক ওই স্টার্টআপটি জমি কিনে সেখানে রান্নাঘর বা রেস্তোরাঁ স্থাপন করে। এসব রেস্তোরাঁ থেকে অনলাইনে খাবার সরবরাহ করা হয়। উবার ইটসেও খাবার সরবরাহ করে এসব রেস্তোরাঁ।

এর আগে কালানিক বলেছিলেন, ‘পৃথিবীর সবকিছুর চেয়ে উবারকে বেশি ভালোবাসি।’ তবে বেশ কয়েকবার উবার নিয়ে বিতর্ক সৃষ্টি হওয়ায় উবার ছাড়ার জন্য বিনিয়োগকারীদের কাছ থেকে তাঁর ওপর চাপ বাড়ছিল।

উবারের বর্তমান প্রধান নির্বাহী দারা খোশরেশাহী কালানিকের প্রশংসা করে বলেছেন, ‘খুব কম উদ্যোক্তাই আছেন, যাঁরা ট্রাভিস কালানিকের উবারের মতো গুরুত্বপূর্ণ কিছু সৃষ্টি করতে পেরেছেন। আমি ট্রাভিসের লক্ষ্যের প্রতি, উবার গঠনে তাঁর আত্মনিয়োগ ও বোর্ড সদস্য হিসেবে তাঁর বিশেষজ্ঞ মতামতের জন্য দারুণ কৃতজ্ঞ। উবারের প্রত্যেকের পক্ষ থেকে তাঁর জন্য শুভকামনা থাকবে।’

বিশ্লেষকেরা বলছেন, কালানিক এমন একসময়ে উবারের সঙ্গে সম্পর্ক ছাড়ছেন, যখন প্রতিষ্ঠানটি বিভিন্ন দেশের নিয়ন্ত্রকদের কাছ থেকে অস্তিত্ব হুমকির মুখে পড়ছে। এ ছাড়া প্রতিদ্বন্দ্বীদের চাপ, ব্যবসার মডেলের কারণে কোটি কোটি ডলার খরচ মিলিয়ে হুমকির মুখে উবার। এ বছরের আইপিওতে যুক্তরাষ্ট্রের স্টক মার্কেটের ইতিহাসে সবচেয়ে বাজে ফলাফল করার পাশাপাশি শেয়ারের নিম্নমুখী দামে কঠিন চাপে রয়েছে উবার।

প্রযুক্তিবিষয়ক ওয়েবসাইট গিজমোডো এক প্রতিবেদনের শিরোনামে লিখেছে, ‘ডুবন্ত জাহাজ থেকে পালালেন ট্রাভিস কালানিক’। ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, গত কয়েক বছরে চালকের সঙ্গে দুর্ব্যবহার, যৌন নিপীড়নের অভিযোগ, অ্যালফাবেটের সঙ্গে মামলার মতো নানা কেলেঙ্কারিতে জড়িয়ে পড়েন কালানিক। ২০১৭ সালের জুন মাসে উবারের প্রধান নির্বাহীর পদ ছাড়লেও উবারের বোর্ডে থেকে অন্য সদস্যদের উদ্বেগের কারণ হয়ে উঠেছিলেন। সবার ধারণা ছিল, আবার উবারের ক্ষমতায় ফিরতে প্রচেষ্টা চালাচ্ছেন তিনি। তবে বোর্ড সদস্যরা ভোট দিয়ে তাঁর ক্ষমতা কমান। এরপর থেকে নিজের বিনিয়োগ তহবিল ও ক্লাউড কিচেন নিয়ে নতুন উদ্যোগে নেমে পড়েছেন উবারের সহ-প্রতিষ্ঠাতা।