কৃত্রিম সূর্য

আমরা যদি কৃত্রিম সূর্য পৃথিবীতে বানাতে পারি, যা আমাদের পুড়িয়ে মারবে না বরং আমরা তার অফুরন্ত তাপশক্তি নিরাপদে ব্যবহার করতে পারব, তাহলে আজকের পৃথিবীর সবচেয়ে বড় একটা চ্যালেঞ্জের সহজ সমাধান হবে। চ্যালেঞ্জটা হলো বিদ্যুতের জন্য জ্বালানি তেল-কয়লা পোড়ানো ন্যূনতম মাত্রায় নামিয়ে আনা এবং বিকল্প কার্বনমুক্ত নবায়নযোগ্য শক্তির ব্যবহার সহজলভ্য করা। সৌরশক্তি এ কাজ করতে পারে। কিন্তু সেটা আমরা সহজে কাজে লাগাতে পারি কীভাবে?

এখন অবশ্য সৌরবিদ্যুৎ প্যানেলে সৌরশক্তি ধরে ব্যাটারির মাধ্যমে আমরা অল্পস্বল্প বিদ্যুৎ ব্যবহার করতে পারি। দু-চারটা বাল্ব জ্বালাই, টিভি দেখি। তা ছাড়া জলবিদ্যুৎ, বায়ুবিদ্যুতের ব্যবহারও আজকাল বাড়ছে। কিন্তু চাহিদা তো অনেক বেশি। তাই তেল-কয়লা প্রভৃতি জীবাশ্ম জ্বালানি পুড়িয়ে বিদ্যুৎ উৎপাদন বেড়ে চলেছে। বিপদটা হলো এর ফলে বৈশ্বিক উষ্ণায়ন বিপজ্জনক মাত্রায় চলে যাচ্ছে। পৃথিবীতে প্রাণের অস্তিত্ব থাকবে কি না, সেটাই প্রশ্ন। কী করা যায়?

এই অবস্থায় চীন কৃত্রিম সূর্য তৈরির পথে অনেক দূর এগিয়ে গেছে। চায়না ইনস্টিটিউট অব প্লাজমা ফিজিকসের একদল বিজ্ঞানী সম্প্রতি ঘোষণা করেছেন যে তাঁদের এক্সপেরিমেন্টাল অ্যাডভান্সড সুপারকন্ডাকটিং টোকামাকের (ইএএসটি-ইস্ট) ভেতরের প্লাজমা ১০ কোটি সেলসিয়াস তাপমাত্রায় পৌঁছিয়েছে। ওরা এটাকে ‘কৃত্রিম সূর্য’ নাম দিয়েছে। কারণ, সূর্যের ভেতরে যে ফিউশন রিঅ্যাকশনে প্রচণ্ড তাপশক্তি তৈরি হয়, এই তাপমাত্রায় সেই প্রক্রিয়া চালানো সম্ভব এবং এই ফিউশন রিঅ্যাকশন থেকে কম শক্তি ব্যবহার করে বেশি শক্তি পাওয়া যাবে। পরে এই তাপশক্তি বিদ্যুতে রূপান্তরিত করে আমরা কার্বন নিঃসরণের বিপদমুক্ত বিদ্যুৎশক্তি পাব।

সূর্যের ভেতর নিউক্লিয়ার ফিউশনের মাধ্যমে প্রচণ্ড তাপ উৎপন্ন হয়। টোকামাক কৃত্রিম উপায়ে সেই কাজই করে। আয়ন সম্মিলিত হওয়ার সময় প্রচণ্ড তাপ বের হয়। বর্তমানে নিউক্লিয়ার পাওয়ার প্ল্যান্টগুলো ‘নিউক্লিয়ার ফিশন’-এর ওপর নির্ভরশীল। এতে চেইন রিঅ্যাকশনের মাধ্যমে ইউরেনিয়াম অ্যাটম ভেঙে শক্তি বের হয়। কিন্তু ‘নিউক্লিয়ার ফিউশন’ কার্যত উল্টো কাজটি করে, অ্যাটমকে চাপ দিয়ে সম্মিলিত করে। এর সুবিধা হলো পারমাণবিক বর্জ্যের সমস্যা নেই এবং আকস্মিক দুর্ঘটনার আশঙ্কাও কম। এই গবেষণা এককভাবে চীন করছে না। ১৯৮৫ সাল থেকে যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপীয় ইউনিয়ন, ভারত প্রভৃতি দেশের বিজ্ঞানীরা ‘ইন্টারন্যাশনাল থার্মোনিউক্লিয়ার এক্সপেরিমেন্টাল রিঅ্যাকটার (ইটার)’ প্রকল্পে গবেষণা করছেন। ২০০৬ সালে চীন সেখানে যোগ দেয়। টোকামাকের মাধ্যমে নিরাপদ বিদ্যুৎ তৈরি এখন সময়ের ব্যাপার বলে জানাচ্ছেন বিজ্ঞানীরা।

এর আগে চীন ‘কৃত্রিম চাঁদ’–এর মাধ্যমে তাদের বিস্তীর্ণ গ্রামাঞ্চলের রাস্তাঘাট রাতে আলোকিত রাখার পরিকল্পনার কথা জানিয়েছে। এখন দেশটি ঘোষণা করেছে ‘কৃত্রিম সূর্য’ তৈরির কথা।

আগামী রোববার অনলাইনে পড়ুন ‘মেশিন লার্নিং বিগ ডেটা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা এবং’