উইন্ডোজ ৭ কে বিদায় দিন

উইন্ডোজ ৭। ছবি: মাইক্রোসফটের সৌজন্যে
উইন্ডোজ ৭। ছবি: মাইক্রোসফটের সৌজন্যে

সাইবার নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞরা মাইক্রোসফটের উইন্ডোজ ৭ অপারেটিং সিস্টেম ব্যবহারকারীদের সিস্টেম হালনাগাদ করে নেওয়ার পরামর্শ দিচ্ছেন। আজ মঙ্গলবার ১৪ জানুয়ারি থেকে ‘মাইক্রোসফট উইন্ডোজ ৭’ থেকে সমর্থন সরিয়ে নিচ্ছে মাইক্রোসফট। অর্থাৎ, এ সিস্টেমের জন্য আর নিরাপত্তা প্রোগ্রাম হালনাগাদ করবে না বিশ্বের বৃহত্তম সফটওয়্যার নির্মাতা প্রতিষ্ঠানটি। তারা এখন থেকে নতুন প্রযুক্তির দিকে বেশি মনোযোগী হবে।

বিবিসি অনলাইনের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, উইন্ডোজ ৭ থেকে সমর্থন প্রত্যাহারের ফলে এ অপারেটিং সিস্টেম ব্যবহারকারীদের পিসি নিরাপত্তা ঝুঁকির মধ্যে পড়ে যাবে।

স্ট্যাটকাউন্টের তথ্য অনুযায়ী, প্রতি চার মেশিনের অন্তত একটি এখনো উইন্ডোজ ৭-এ চলছে।

বিবিসির তথ্য অনুযায়ী, উইন্ডোজ ৭-এ সমর্থন দেওয়া বন্ধ করার মাধ্যমে হ্যাকারদের সঙ্গে ইঁদুর-বিড়াল খেলার সমাপ্তি টানল মাইক্রোসফট। হ্যাকাররা উইন্ডোজ ৭ এর সফটওয়্যার ত্রুটি ব্যবহার করার অপচেষ্টা চালাচ্ছে দীর্ঘদিন ধরেই। এখন থেকে উইন্ডোজ ৭ এর নিরাপত্তা ত্রুটি খুঁজে পেলেও মাইক্রোসফট আর তা ঠিক করবে না।

মাইক্রোসফট তাদের ওয়েবসাইটে লিখেছে, হালনাগাদ সফটওয়্যার ও নিরাপত্তা প্রোগ্রাম হালনাগাদ না থাকলে উইন্ডোজ ৭ মেশিনে ভাইরাস ও ম্যালওয়্যার আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি তৈরি হয়।

সফটওয়্যার নিরাপত্তা প্রতিষ্ঠান ট্রেন্ড মাইক্রো ভাইস-প্রেসিডেন্ট রিক ফার্গুসন বলেন, আক্রান্ত পিসি ব্যবহার করলে দ্রুত আক্রমণ হতে পারে।

ক্যাসপারস্কি ল্যাবের জ্যেষ্ঠ গবেষক ডেভিড এম বলেছেন, ব্যবহারকারীদের দ্রুত মাইক্রোসফট সমর্থন করে এমন অপারেটিং সিস্টেমে চলে যাওয়া উচিত।

উইন্ডোজ ৭ ব্যবহারকারীদের লক্ষ্য করে ম্যালওয়্যার ছাড়তে পারে সাইবার দুর্বৃত্তরা, যা কম্পিউটার অচল করে ফেলতে পারে। এ ছাড়া ব্যক্তিগত তথ্য চুরি, ব্যবহারকারীর অজান্তে নজরদারি ও র‌্যানসমওয়্যার আক্রমণ ঘটতে পারে।

মাইক্রোসফট বলছে, ১৪ তারিখের পর উইন্ডোজ ৭ চালিত পিসি পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যাবে না, তবে তা আর নিরাপদ থাকবে না। তাই মাইক্রোসফট দ্রুত উইন্ডোজ ১০ সফটওয়্যার হালনাগাদ করে নেওয়ার পরামর্শ দিচ্ছে। মাইক্রোসফট তাদের নতুন অপারেটিং সিস্টেমের দাম রাখছে ১২০ মার্কিন ডলার। এ ছাড়া নতুন পিসি কেনার পরামর্শও দিচ্ছে প্রতিষ্ঠানটি।

পুরোনো অনেক পিসিতে উইন্ডোজ ১০ ইনস্টল করা গেলেও তা ঠিকমতো চলে না। এক গিগাহার্টজ প্রসেসর ও এক জিবি র‍্যামের কম হলে সে পিসিতে উইন্ডোজ ১০ সমর্থন করবে না। তবে, যাঁরা শুধু অফলাইনে উইন্ডোজ ৭ ব্যবহার করেন, তাঁদের দুশ্চিন্তা না করলেও চলবে।

যুক্তরাজ্যের কর্তৃপক্ষ উইন্ডোজ ৭ ব্যবহারকারীদের পিসি থেকে ইন্টারনেট ব্যাংকিং ও ই-মেইল পাঠানোর বিষয়ে সতর্ক করেছে। দেশটির সাইবার নিরাপত্তা কেন্দ্রের পরামর্শ হচ্ছে, ১৪ জানুয়ারি ডেডলাইনের পর থেকে অসমর্থিত ডিভাইস যত দ্রুত সম্ভব বদলে ফেলতে হবে। এ ছাড়া স্পর্শকাতর অ্যাকাউন্ট এসব পিসি থেকে না চালানোই ভালো।

কিছু পরামর্শ:
মনে রাখবেন, উইন্ডোজ ৭ থেকে যাঁরা ইন্টারনেট ব্রাউজ করেন, তাঁদের ক্ষেত্রে চুপচাপ বসে থাকলে কম্পিউটার নিরাপত্তা ঝুঁকিতে থাকবে। ম্যালওয়্যার আক্রমণের আশঙ্কা দিন দিন বেড়ে যাবে। তবে এভাবেও কম্পিউটার চালানো যাবে। শুধু মাইক্রোসফটের সফটওয়্যারগুলোর হালনাগাদ পাওয়া যাবে না। তা ছাড়া অন্য যেকোনো সফটওয়্যার বা তৃতীয় পক্ষের কোনো অ্যান্টি-ভাইরাস সফটওয়্যার ব্যবহার করা যাবে। ২০২৩ সালের জানুয়ারি পর্যন্ত পুরোনো সংস্করণের উইন্ডোজও ব্যবহার করা যাবে। তবে সর্বাধিক নিরাপত্তার জন্য ভালো হলো, নতুন সংস্করণে হালনাগাদ করে নেওয়া।

নতুন সংস্করণে হালনাগাদ
বর্তমানে প্রায় ৮০ কোটি যন্ত্রে উইন্ডোজ ১০ ব্যবহৃত হচ্ছে। জনপ্রিয়তার দিক থেকে এই সংস্করণটি গত বছরের শুরুর দিকে উইন্ডোজ ৭ অপারেটিং সিস্টেমকে ছাড়িয়েছে। চাইলে উইন্ডোজ ১০ ব্যবহার করতে পারেন।

উইন্ডোজ ৭ ও ৮.১ ব্যবহারকারীদের বিনা মূল্যে উইন্ডোজ ১০-এ হালনাগাদ করার সুযোগ দিয়েছিল মাইক্রোসফট। সে সুযোগ বেশ আগেই শেষ হয়েছে। তবে অনেকে জানিয়েছেন, সময় পার হলেও এখনো বিনা মূল্যে উইন্ডোজ ৭ বা ৮.১ অপারেটিং সিস্টেম থেকে উইন্ডোজ ১০-এ হালনাগাদ করে নেওয়া যাচ্ছে।

কাজটি করার জন্য উইন্ডোজ ইনস্টলেশন টুল নামিয়ে ইনস্টল করে নিন (ঠিকানা: bit. ly/2 FksJuI)। সেখানে ‘আপগ্রেড দিস পিসি’ অপশন পাওয়া যাবে। তবে অবশ্যই উইন্ডোজ ৭ বা ৮.১-এর বৈধ লাইসেন্স থাকতে হবে। প্রক্রিয়াটি শুরু করার আগে প্রয়োজনীয় ফাইল অন্য কোথাও সংরক্ষণ (ব্যাকআপ) করে রাখার পরামর্শ দেওয়া হয়।

চাইলে নতুন কম্পিউটার কিনুন
মানে নতুন কম্পিউটার কেনার পরিকল্পনা যদি থাকে। নতুন কম্পিউটারগুলোতে সাধারণত আগে থেকেই উইন্ডোজের সর্বশেষ সংস্করণটি দেওয়া থাকে। সূত্র: টেক অ্যাডভাইজর