সবুজ পৃথিবীর পথে মাইক্রোসফট

মাইক্রোসফটের লোগো
মাইক্রোসফটের লোগো

মাইক্রোসফটের যাত্রা শুরু ১৯৭৫ সালে। বয়স ৪৫ ছুঁইছুঁই। মার্কিন প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানটি ঘোষণা দিয়েছে, এই ৪৫ বছরে পরিবেশে তারা যত কার্বন ছড়িয়েছে, তার সব সরিয়ে ফেলবে। কাজটি তারা ২০৫০ সাল নাগাদ শেষ করতে চায় বলে জানিয়েছেন প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা সত্য নাদেলা। অর্থাৎ, সামনে তাঁর তিন দশকের লক্ষ্য।

মাইক্রোসফটের সামনে আরেকটি লক্ষ্য হলো, ২০৩০ সালের মধ্যে ‘কার্বন ঋণাত্মক’ হওয়া। মানে নিত্য কাজকর্মে যে পরিমাণ কার্বন নিঃসরণ হবে, পরিবেশ থেকে তার চেয়ে বেশি কার্বন অপসারণ করবে প্রতিষ্ঠানটি। ক্লাউড কম্পিউটিং খাতে মাইক্রোসফটের প্রতিদ্বন্দ্বী আমাজনও একই ধরনের প্রতিজ্ঞা করেছে। তবে ২০৪০ সালের মধ্যে আমাজন নিজেদের ‘কার্বন ভারসাম্য’ প্রতিষ্ঠান হিসেবে গড়ে তুলতে চেয়েছে। অর্থাৎ যে পরিমাণ কার্বন তারা নিঃসরণ করবে, পরিবেশ থেকে তা সরিয়ে ফেলবে।

তা ছাড়া কার্বন নিঃসরণ কমানোর প্রযুক্তি উদ্ভাবনে ১০০ কোটি ডলারের জলবায়ু উদ্ভাবন তহবিল গঠন করার ঘোষণাও দিয়েছে মাইক্রোসফট।

মাইক্রোসফটের উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েছেন পরিবেশবিদেরা। বিশেষ করে শুধু নিজেদের কথা না ভেবে, জলবায়ু পরিবর্তনের বৃহত্তর প্রেক্ষাপটের ভাবনা সমাদৃত হয়েছে। তবে জলবায়ু পরিবর্তন ঠেকাতে ‘আরও এক হাজার প্রতিষ্ঠানকে’ এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়েছেন তাঁরা। তবে গ্রিনপিস নামের এক বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা জানিয়েছে, মাইক্রোসফটের এ উদ্যোগে উদ্যাপনের অনেক কিছুই আছে। তবে তেল ও গ্যাস নিয়ে কাজ করা প্রতিষ্ঠানগুলোকে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার মতো প্রযুক্তি দিয়ে সাহায্য করা বন্ধ করতে হবে।

তথ্যপ্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানগুলোর কারখানা ও তথ্য প্রক্রিয়াজাতকরণ কেন্দ্রগুলো (মূলত সার্ভার) বড় পরিমাণের কার্বন ডাই-অক্সাইড নিঃসরণের জন্য দায়ী। এক সমীক্ষায় বলা হয়েছে, চলতি বছরে বিশ্বের মোট গ্রিনহাউস গ্যাস নিঃসরণের ৩ দশমিক ৬ শতাংশ হবে তথ্যপ্রযুক্তি খাত থেকে, যা ২০০৭ সালের তুলনায় দ্বিগুণ। অবস্থা বেশি খারাপ হলে ২০৪০ সাল নাগাদ পরিমাণটা ১৪ শতাংশে উঠতে পারে।

বলা বাহুল্য, হুট করে কার্বন ডাই-অক্সাইড গ্যাস নিঃসরণ শতভাগ বন্ধ করা মাইক্রোসফটের পক্ষে সম্ভব নয়। তবে তারা এমন প্রযুক্তিতে বিনিয়োগ করবে, যা এই গ্যাস ধারণ করে রাখবে যেন পরিবেশে ছড়িয়ে না পড়ে। তা ছাড়া প্রতিষ্ঠানটির পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, ২০২৫ সালের মধ্যে তাদের সব ডেটা সেন্টার ও অন্যান্য ভবন শতভাগ নবায়নযোগ্য শক্তিতে চলবে।

লক্ষ্য অর্জন কীভাবে হবে?
বেশ কিছু পদ্ধতির উল্লেখ করেছে মাইক্রোসফট। এর মধ্যে রয়েছে—
নতুন বন সৃষ্টি এবং বিদ্যমান বনের পরিধি বাড়ানো।
ভূমিতে কার্বন আবদ্ধ করে রাখার ‘সয়েল কার্বন সেকোসট্রেশন’ পদ্ধতি প্রয়োগ করে। এর আরেকটা সুবিধা হলো, ভূমি উর্বর এবং কম ধ্বসপ্রবণ হবে।
বায়ুমণ্ডল থেকে সরাসরি কার্বন ডাই-অক্সাইড টেনে নেওয়া একটা সমাধান হতে পারে। বড় ফ্যানের সাহায্যে কাজটি করে ফিলটারের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত করা যেতে পারে।
কার্বন আবদ্ধ করে তা পুনরায় উদ্ভিদের খাদ্যে পরিণত করা। সূত্র: বিবিসি