ফেসবুক-টুইটারের রাজনৈতিক খবরে কেউ আর বিশ্বাস করেন না

ভুয়া খবরের জন্য মানুষের অবিশ্বাসের শীর্ষে ফেসবুক। ছবি: রয়টার্স
ভুয়া খবরের জন্য মানুষের অবিশ্বাসের শীর্ষে ফেসবুক। ছবি: রয়টার্স

সাম্প্রতিক সময়ে বিভিন্ন নির্বাচন ঘিরে ভুয়া তথ্য ছড়ানো ঠেকাতে ব্যর্থতার কারণে ফেসবুক ও টুইটারের মতো সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের ওপর মানুষের আস্থা কমে গেছে। সাম্প্রতিক এক সমীক্ষায় এ তথ্য উঠে এসেছে। মার্কিন নাগরিকদের মধ্যে চালানো ওই সমীক্ষায় দেখা গেছে, অধিকাংশ মানুষ রাজনৈতিক খবরের উৎস হিসেবে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমকে বিশ্বাস করেন না।

পিউ রিসার্চ সেন্টারের করা সমীক্ষা অনুযায়ী, ৫৯ শতাংশ প্রাপ্তবয়স্ক মানুষ ফেসবুককে বিশ্বাস করেন না, যা প্রধান সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমগুলোর মধ্যে সর্বনিম্ন। আস্থাহীনতার জায়গা থেকে ফেসবুকের পরই আছে টুইটার। ৪৮ শতাংশ মানুষের টুইটারের খবরে কোনো বিশ্বাস নেই। এরপর ৪২ শতাংশ মানুষ ইনস্টাগ্রামে তাঁদের আস্থাহীনতার কথা বলেছেন।

পিউয়ের সংবাদ গবেষণাবিষয়ক পরিচালক অ্যামি মিশেল বলেন, তাঁদের প্রতিবেদনে একটি পরিপূর্ণ চিত্র উঠে এসেছে, যেখানে সংবাদ সরবরাহকারীর হিসেবে সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে সাধারণ বিশ্বাসের অভাব দেখা গেছে।

সোশ্যাল মিডিয়া সংস্থাগুলো তাদের সাইটে ভুল তথ্য, স্প্যাম এবং অপপ্রচার নিয়ন্ত্রণ করতে লড়াই করার সময় এ ফলাফলগুলো এসেছে। ২০১৬ সালের মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের সময় রুশদের রাজনৈতিক প্রচার চালানোর অনুমতি দেওয়ার জন্য এসব সাইটের বিরুদ্ধে তদন্তও করা হয়েছে।

এ ছাড়াও সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমগুলোতে রাজনৈতিক বিজ্ঞাপন প্রচারের ক্ষেত্রে ভুয়া তথ্য ছড়ানোর জন্য ছাড়ও দেওয়া হচ্ছে। এ ক্ষেত্রে ফেসবুক বিতর্কিত অবস্থান নিয়েছে।
ফেসবুকের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, তাদের নতুন নিয়ম অনুযায়ী, রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বরা চাইলে তাঁদের বিজ্ঞাপনে মিথ্যা দাবিও করতে পারবেন। ফেসবুকে তাঁরা অর্থ খরচ করে খুশিমতো প্রচার চালাতে পারবেন। অপর দিকে ফেসবুক ব্যবহারকারীদের জন্য কিছু নিয়ন্ত্রণের সুবিধা দিচ্ছে প্রতিষ্ঠানটি। ব্যবহারকারী কী ধরনের বিজ্ঞাপন দেখতে চান, তা ঠিক করে নেওয়ার সুযোগ থাকবে।

প্রযুক্তিবিষয়ক ওয়েবসাইট দ্য ভার্জের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, ফেসবুকের বর্তমান বিজ্ঞাপন নীতিমালা গত বছর থেকেই কঠোর সমালোচনার মুখে পড়ে। রাজনীতিবিদদের বিজ্ঞাপনে মিথ্যা ও ভুয়া তথ্য প্রচারে ছাড় দেওয়ার ঘোষণা আসার পর থেকেই এ সমালোচনার শুরু। মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচন ঘিরে এ ধরনের ভুয়া বিজ্ঞাপন কনটেন্ট প্রচার নিতে সরব ডেমোক্র্যাটরা।

পিউয়ের করা সমীক্ষা অনুযায়ী, যাঁরা অধিকাংশ সময় সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যম ব্যবহার করেন তাঁদের ক্ষেত্রে আবার ভুয়া রাজনৈতিক খবর নিয়ে মাথাব্যথা কম। তাঁরা ভুয়া তথ্য বা খবর নিয়ে খুব বেশি উদ্বেগ দেখান না।

পিউ যুক্তরাষ্ট্রে ২৯ অক্টোবর থেকে ১১ নভেম্বর পর্যন্ত ১২ হাজার প্রাপ্তবয়স্ক মানুষকে নিয়ে এ সমীক্ষা চালায়। এতে ফেসবুক ছাড়াও ফেসবুকের অধীনে থাকা ইনস্টাগ্রাম, টুইটার, ইউটিউব, লিংকডইন ও রেডিটক নিয়ে প্রশ্ন করা হয়েছিল। সমীক্ষায় ৩৭ শতাংশ মানুষ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের খবরের সত্যতা নিয়ে অতি উদ্বেগ প্রকাশ করেন। এর বাইরে টিভি, প্রিন্ট ও নিউজ সাইট থেকে খবর পড়া অর্ধেকের বেশি মানুষ সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে ভুয়া খবরের প্রভাব নিয়ে নিজের উদ্বেগের কথা জানান। তবে আশার কথা হচ্ছে, অধিকাংশ মানুষই এখন আর ফেসবুক, ইনস্টাগ্রাম বা টুইটারকে রাজনৈতিক খবরের প্রাথমিক উৎস হিসেবে বিশ্বাস করেন না। মাত্র ১৮ শতাংশ মানুষ বলেছেন, তাদের খবরের প্রাথমিক উৎস সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যম। অধিকাংশ মানুষ আসল খবর জানতে সংবাদমাধ্যমকেই বিশ্বাস করেন।

রাজনৈতিক খবরের উৎস হিসেবে মাত্র ১৭ শতাংশ মানুষ ইউটিউবকে অবিশ্বাস করার কথা বলেছেন। তবে লিংকডইনকে বিশ্বাস ও অবিশ্বাসের মাঝামাঝিতে রেখেছেন অধিকাংশ উত্তরদাতা। রেডিটকের ক্ষেত্রে অনেকেই বলেছেন, এর নাম শোনেননি।