করোনাভাইরাস

চীনের উহান থেকে শুরু হয়ে এখন বিশ্বের অনেক দেশে করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়ছে। এটা শ্বাস-প্রশ্বাসসংক্রান্ত সংক্রমণ ব্যাধি। সামান্য জ্বর, শ্বাস-প্রশ্বাসে সমস্যা এবং এর সঙ্গে অন্য কিছু উপসর্গ শেষ পর্যন্ত মৃত্যু ঘটাতে পারে। শিশুদের চেয়ে বয়স্ক ব্যক্তিদের জন্য বেশি ভয়। কারণ, তাদের রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা কম।

চিকিৎসাবিজ্ঞানীরা এখনো এর প্রতিষেধক বের করতে পারেননি। হয়তো কয়েক মাস সময় লাগবে। ভাইরাসটির বিজ্ঞানসম্মত নাম ২০১৯-এনকোভ (2019-nCoV)। অবশ্য প্রচলিত করোনাভাইরাস নামটি এসেছে সূর্যের করোনার সঙ্গে মিল দেখে। সূর্যের চারপাশে যে আলোকোজ্জ্বল বলয় রয়েছে, মাইক্রোস্কোপে এই ভাইরাসেরও চারপাশে অগ্নিশলাকা দেখা যায়, মনে হয় যেন জ্বলন্ত মুকুট।

আমাদের দেশে এখনো কেউ আক্রান্ত না হলেও আমাদের কেউ করোনাভাইরাসের শিকার হবে না, তা তো বলা যায় না। সংক্রমণের পর লক্ষণগুলো পরিস্ফুট হতে ১০ দিন থেকে দুই সপ্তাহ পর্যন্ত সময় লাগতে পারে। জেনে রাখা ভালো কীভাবে ভাইরাসটি ছড়ায় এবং আমাদের করণীয় কী। রোগটি ছড়ায় মূলত আক্রান্ত কোনো ব্যক্তির হাঁচি-কাশি থেকে। তাই অসুস্থ ব্যক্তিদের সঙ্গে কথা বলার সময় কাপড়ের তৈরি বিশেষ ধরনের মাস্ক ব্যবহার করতে হবে। মুশকিল হলো আমরা হয়তো জানিই না করোনাভাইরাসে কে আক্রান্ত, কে নয়। তাই ভিড়ের মধ্যে না যাওয়াই ভালো। রোগী শনাক্ত করার জন্য ইতিমধ্যে দেশের বিমান, স্থল ও সমুদ্রবন্দরে বিদেশ থেকে আগত ব্যক্তিদের পরীক্ষা করে দেখা হচ্ছে।

রোগটি যেন না ছড়ায়, সে জন্য কিছু সময় পরপর আমাদের ভালোভাবে হাত ধোয়া দরকার। সামান্য জ্বর বা ঠান্ডা লাগা, কাশি, শ্বাস-প্রশ্বাসে সমস্যা, এমনকি পেটের অসুখ, ডায়রিয়া প্রভৃতি করোনাভাইরাসের লক্ষণ। এগুলো দেখা গেলে চিকিৎসার পাশাপাশি পূর্ণ বিশ্রাম ও বেশি করে পানি পান করতে হবে, যেন শরীরের রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা সক্রিয় হয়ে সুস্থ করে তুলতে প্রয়োজনীয় সময় পায়। পাশাপাশি প্রচুর অক্সিজেনের ব্যবস্থা করতে হবে। অক্সিজেন যেন ফুসফুস পর্যন্ত যেতে পারে, ভেন্টিলেটরের মাধ্যমে সে ব্যবস্থাও করতে হবে।

করোনাভাইরাস। প্রতীকী ছবি
করোনাভাইরাস। প্রতীকী ছবি

করোনাভাইরাস কতটা বিপজ্জনক? চিকিৎসা বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, এটা সার্স (সিভিয়ার অ্যাকিউট রেসপিরেটরি সিনড্রোম, সার্স) বা মার্স (মিডল ইস্ট রেসপিরেটরি সিনড্রোম, মার্স)-এর চেয়ে কম ভয়াবহ হতে পারে। এখন আমাদের সচেতন ও সতর্ক হতে হবে যেন দ্রুত প্রতিষেধক বের হয় এবং সেটা যেন সবার জন্য সহজলভ্য হয়।

দেশে ও বিদেশে পত্রপত্রিকায় প্রতিদিনই লেখা ছাপা হচ্ছে। পরিস্থিতির অবনতি হচ্ছে কি না, সেদিকে আমাদের সবার সজাগ দৃষ্টি রাখতে হবে।

[সূত্র: ‘নিউইয়র্ক টাইমস’–এর সায়েন্স টাইমস-এ (২১ জানুয়ারি ২০২০, এবং আপডেট সংস্করণ ৬ ফেব্রুয়ারি ২০২০) প্রকাশিত বিজ্ঞান নিবন্ধ।]

আব্দুল কাইয়ুম, মাসিক ম্যাগাজিন বিজ্ঞানচিন্তার সম্পাদক