সাফল্য বদলে দিয়েছিল জবসকে

অ্যাপলের প্রতিষ্ঠাতা স্টিভ জবস ও স্টিভ ওজনিয়াক। ছবি: রয়টার্স
অ্যাপলের প্রতিষ্ঠাতা স্টিভ জবস ও স্টিভ ওজনিয়াক। ছবি: রয়টার্স

স্টিভ জবস ও স্টিভ ওজনিয়াক—নামে মিল আছে, কাজেও আছে। দুজনে মিলে গড়ে তুলছেন অ্যাপলের মতো বিশাল প্রযুক্তিসাম্রাজ্য। যার বাজারমূল্য এখন এক ট্রিলিয়ন ডলারের বেশি। তবে টাকার প্রশ্নে দুজন ছিলেন দুই মেরুর মানুষ। সম্প্রতি এক পডকাস্ট সাক্ষাৎকারে স্টিভ ওজনিয়াক জানিয়েছেন, টাকা নিয়ে কোনো কালেই তাঁর মাথাব্যথা ছিল না, কিন্তু স্টিভ জবস ছিলেন পুরোপুরি বিপরীত এক মানুষ।

কেবল টাকাই নয়, শুরু থেকেই গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিত্ব হয়ে উঠতে চেয়েছিলেন জবস। ওজনিয়াকের ভাষায়, ‘জবসের পকেটে কোনো টাকাই ছিল না, কিন্তু তারপরও সে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠতে চেয়েছিল। ফলে সে সব সময় টাকা বানানোর জন্য একের পর এক পথ খুঁজত। মাঝেমধ্যে সাধ্যের বাইরেও অনেক কিছু করতে চাইত সে।’

মানুষ যে তার স্বপ্নের সমান বড়, জবস তা প্রমাণ করে গেছেন। যা হতে চেয়েছিলেন, হয়তোবা তার বেশিই হয়েছেন। এখনো তাঁর প্রতিষ্ঠান মেশিনের মতো টাকা বানিয়ে চলেছে। আর যশ-খ্যাতি? স্টিভ জবসকে দুনিয়ার কে না চেনে? পৃথিবীর বাইরে বুদ্ধিমান প্রাণীর কোনো গ্রহ থাকলে সেখানেও নিশ্চয়ই জবসের নামটি ভালোভাবে চেনা।

তবে টাকা যে মানুষকে বদলে দেয়, তারও বড় প্রমাণ স্টিভ জবস। এমন মন্তব্যই করেছেন ওজনিয়াক। সাফল্য লাভের পর বন্ধুর বদলে যাওয়া সম্পর্কে বলেছেন, ‘সে কঠোর হয়ে উঠেছিল।’ এমনকি জবসের সামনে কোনো রকম ঠাট্টা-মশকরাও করা যেত না। ওজনিয়াক অবশ্য তাতে খুব একটা বিস্মিতও হননি। কারণ, পয়লা মোলাকাতের দিন থেকেই খেয়াল করেছিলেন, জবস কাজের কথাই বেশি বলতেন।

স্টিভ ওজনিয়াক পেশাজীবন শুরু করেছিলেন এইচপির প্রকৌশলী হিসেবে। তারপর থেকেই জবসের সঙ্গে তাঁর মনেও অ্যাপলের স্বপ্ন দানা বাঁধতে শুরু করে। তবে কেবল অ্যাপলের হয়েই কাজ করবেন কি করবেন না, তা নিয়ে বেশ দোটানা অবস্থায় ছিলেন ওজনিয়াক। স্মৃতিচারণা করেছেন এভাবে, ‘চেনাজানা সবাইকে বলতাম, আমি সারা জীবনের জন্য হিউলেট প্যাকার্ডের (এইচপি) প্রকৌশলী হতে যাচ্ছি। সারা জীবন এই কাজই করতে চাই। কারণ, কাজটা আমি ভালোবাসি এবং কখনোই বড় অঙ্কের টাকার কাছে নিজেকে বিকাতে চাই না।’

কিন্তু ওজনিয়াকের মতো অর্থকড়ির বেলায় জবসের কোনো অরুচি ছিল না। অ্যাপলের হয়ে কাজ করার ব্যাপারে ওজনিয়াক যখন ঢাকঢাক–গুড়গুড় করছেন, তখন জবস বাধ্য হয়ে তাঁর আত্মীয়স্বজনের দ্বারস্থ হন। তাঁদের অনুরোধ করেন, ওজনিয়াককে যেন অ্যাপলে কাজ করার ব্যাপারে বোঝানো হয়। জবস রীতিমতো কচ্ছপের কামড় দিয়ে ঝুলেছিলেন। কে না জানে, ওজনিয়াক শেষমেশ রাজি হয়ে সঠিক সিদ্ধান্তই নিয়েছিলেন।

অ্যাপল বিশ্বজোড়া নাম করার পর এবং জবসের মানসিকতায় ব্যাপক পরিবর্তন আসায় ওজনিয়াক নিজেকে গুটিয়ে নিতে থাকেন। শিল্পীদের যেমনটা হয় আরকি, অর্থকড়ির চেয়ে শিল্পের প্রতি টানটা ছিল বেশি। আর এ তো মানতেই হবে, ওজনিয়াক একজন খাঁটি প্রযুক্তিশিল্পী। ফলে মধ্যে অনেক তেতো অভিজ্ঞতা হয়েছে তাঁর। অ্যাপল ছেড়ে নিজের প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলেছেন। তারপরও প্রতিষ্ঠানটির কর্মীর তালিকায় নিজের নামটি এখনো রেখেছেন ওজনিয়াক। অ্যাপলের শেয়ারও পাচ্ছেন নিয়মিত। মজার ব্যাপার হলো, ওজনিয়াকই অ্যাপলের একমাত্র কর্মী, যিনি শুরু থেকে এখনো প্রতি সপ্তাহে একটি করে পে-চেক পাচ্ছেন। টাকার অঙ্কটা খুব বড় নয়, করটর কাটার পর ৫০ ডলারের মতো হাতে পান। তাতেও দারুণ খুশি ওজনিয়াক বলছিলেন, ‘টাকার অঙ্কটা ছোট। তবে এটা একজন কর্মীর প্রতি একটি প্রতিষ্ঠানের আনুগত্যের চেয়ে বেশি কিছু। সব মিলিয়ে অ্যাপলের বেলায় আমি ভীষণ দুর্বল।’ সূত্র: সিনেট