আয়রনম্যানের মতো উড়ছে মানুষ

প্রযুক্তির ডানা পিঠে নিয়ে আকাশ মন্থন এখন আর শুধু কল্পনা নয়। ছবি: সংগৃহীত
প্রযুক্তির ডানা পিঠে নিয়ে আকাশ মন্থন এখন আর শুধু কল্পনা নয়। ছবি: সংগৃহীত

পিঠে প্রযুক্তির ডানা লাগিয়ে মানুষ উড়ছে আকাশে। এমন দৃশ্যের কথা বললে সবার মাথায় নিশ্চিতভাবেই চলে আসবে রুপালি পর্দার হালের জনপ্রিয় চরিত্র আয়রনম্যানের কথা। হলিউডি সিনেমার কল্যাণে আয়রনম্যানকে সবাই চেনে। পর্দার আয়রনম্যান অনেকের দীর্ঘশ্বাসেরও কারণ নিশ্চয়, বিশেষত যাঁরা পাখির উড়ান-কৌশল আয়ত্ত করতে উদ্‌গ্রীব। কিন্তু ‘হায়, মানুষের তো ডানা নেই’—এমন দীর্ঘশ্বাসের দিন ফুরাল বলে।

না, মানুষ কোনো প্রাকৃতিক ডানার খোঁজ পায়নি। তবে তার তো রয়েছে প্রযুক্তি। আর এই প্রযুক্তির কল্যাণেই ভিন্স রেফেট নামের এক ব্যক্তি উড়ে বেড়ালেন দুবাইয়ের আকাশে। ১৪ ফেব্রুয়ারির ঘটনা এটি। ওই দিন জেটম্যান দুবাইয়ের তৈরি করা প্রযুক্তির ডানা পিঠে নিয়ে জেটম্যান পাইলট ভিন্স রেফেট সংযুক্ত আরব আমিরাতের (ইউএই) দুবাই স্কাইডাইভ থেকে উড়াল দেন আকাশে। একেবারে পাখির উড়ান। উড়োজাহাজের মতো তাঁকে কিছু পথ ছুটে যেতে হয়নি। দাঁড়িয়ে থাকা অবস্থা থেকেই উড়তে শুরু করেন তিনি। কতটা উড়লেন? প্রায় ৬ হাজার ফুট উচ্চতায় ওঠেন তিনি। শুধু তা-ই নয়, এর মধ্যে তিনি দিক পরিবর্তন করেন, স্থির হয়ে ভেসে থাকলেন, দেখালেন নানান কসরত।

মার্কিন সংবাদমাধ্যম সিএনএনের প্রতিবেদনে বলা হয়, জেটম্যান পাইলটদের আকাশে ওড়া নতুন কিছু নয়। এর আগেও অনেকেই উড়েছেন। কিন্তু ১৪ ফেব্রুয়ারির উড্ডয়নটি ছিল একেবারে আলাদা। কারণ, এবারই প্রথম কোনো জেটম্যান ভূমি থেকে সোজা উড়ে গেলেন আকাশে। আগে যতগুলো পরীক্ষা হয়েছে, তার সবই হয়েছিল হেলিকপ্টার থেকে অনেকটা প্যারাট্রুপারদের মতো করে।

সিএনএন জানায়, ১৪ ফেব্রুয়ারি জেটম্যান পাইলট ঘণ্টায় দেড় শ মাইল (২৪১ কিলোমিটার) বেগে ৩০ সেকেন্ডের মধ্যেই প্রায় হাজার মিটার উচ্চতায় পৌঁছান। ভিন্স রেফেট ওই দিন আকাশে অবস্থান করেন তিন মিনিটের কিছু বেশি সময়। নিরাপদে ভূমিতে অবতরণের জন্য দেড় হাজার ফুট উচ্চতায় থাকতে তিনি তাঁর প্যারাস্যুটটি খোলেন।

এ সম্পর্কিত এক বিবৃতিতে রেফেট বলেন, ‘এ অবিশ্বাস্য সাফল্য পাওয়ায় আমরা ভীষণ খুশি। দলগত চেষ্টাতেই এটি সম্ভব হয়েছে। প্রতিটি ছোট ছোট পদক্ষেপের সমন্বয়েই এ সাফল্য এসেছে। দীর্ঘমেয়াদি এ প্রকল্পে এটি অনেক বড় অগ্রগতি। আমাদের পরের লক্ষ্য হচ্ছে প্যারাস্যুট ছাড়াই নিরাপদ অবতরণের কৌশল রপ্ত করা।’

প্রযুক্তির এ ডানা তৈরি করা হয়েছে কার্বন-তন্তু দিয়ে। এর শক্তির উৎস হিসেবে কাজ করছে জারটি মিনি জেট ইঞ্জিন। গতি ও দিক নিয়ন্ত্রণের জন্য এতে রয়েছে একটি ‘ভেক্টরিং নজল’। তবে সাম্প্রতিক এ সফল উড্ডয়নের জন্য ভিন্স রেফেটকে কম পরিশ্রম করতে হয়নি। ১৪ ফেব্রুয়ারির উড্ডয়নের আগে তিনি প্রস্তুতি হিসেবে শতাধিকবার উড্ডয়ন ও অবতরণ করেছেন।