গেমিং মানে বেটিং নয়

দেশে তৈরি হচ্ছে অনেক জনপ্রিয় গেম। ছবি: সংগৃহীত
দেশে তৈরি হচ্ছে অনেক জনপ্রিয় গেম। ছবি: সংগৃহীত

দেশে একদিকে বাড়ছে গেমার আর অন্যদিকে বড় হচ্ছে গেমের বাজার। এ খাতকে আরও বড় করতে প্রয়োজন বিদেশি বিনিয়োগ। বিশ্বে গেম নিয়ে বেশ মাতামাতির কারণ হচ্ছে এর বাজার ১৬০ বিলিয়ন ডলারেরও বেশি। দেশের তথ্যপ্রযুক্তি খাতের অন্যতম সম্ভাবনাময় জায়গা এখন বর্ধনশীল এ গেম বাজার। কয়েক বছর ধরে বিশাল এ বাজার ধরতে বাংলাদেশি কোম্পানিগুলো কাজ করছে। সঠিকভাবে পরিচর্যা করতে পারলে ১৬০ বিলিয়ন ডলারের বাজারে থেকে বাংলাদেশ বৈদেশিক মুদ্রা আয় করতে পারবে।

তবে গেমের বাজার যত বড় হচ্ছে, সমস্যার জায়গাটাও তত বাড়ছে। কারণ ভিডিও গেমিংকে অনলাইন জুয়া বা অনলাইন বেটিংয়ের সঙ্গে অনেকে মিলিয়ে ফেলছেন। এ অবস্থায় তথ্যপ্রযুক্তি খাত থেকে বিলিয়ন ডলার আয় করা দুরূহ হবে, নিরুৎসাহিত হবে মেধাবী গেম ডেভেলপাররা। কারণ, গেমিং মানেই গ্যাম্বলিং বা জুয়া নয়। গেম, গেম ডেভেলপমেন্ট আর অনলাইন জুয়ার বিষয়টি নিয়ে বেশ কিছুদিন আলোচনা হচ্ছে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকেও বিষয়টি আলোচিত হচ্ছে।

বাংলাদেশের গেম নির্মাতা কয়েকটি প্রতিষ্ঠান সাড়াজাগানো বেশ কিছু গেম তৈরি করেছে। এসব গেম কয়েক মিলিয়ন ডাউনলোডের রেকর্ডও রয়েছে। গড়ে উঠেছে ছোট বড় অনেক গেমিং স্টার্টআপ। উল্কা গেমস বিশ্বের একটি বড় গেম নির্মাতা প্রতিষ্ঠান। ২০১৯ সালে বাংলাদেশে কাজ শুরু করে প্রতিষ্ঠানটি। ২২ জন কর্মী নিয়ে দেশে কাজ শুরু করা প্রতিষ্ঠানটিতে এক বছরের মধ্যেই কর্মীসংখ্যা বেড়ে ৯০–তে পৌঁছেছে। দেশে গেমিং খাতের অগ্রগতি হলে এ ধরনের প্রতিষ্ঠান আরও আসবে। তরুণেরা কাজের সুযোগের পাশাপাশি অভিজ্ঞতা অর্জন করতে পারবে। এ পথ ধরেই আসবে বিদেশি ডিরেক্ট ইনভেস্টমেন্ট (এফডিআই)। বিশ্বের বড় গেমিং কোম্পানিগুলো বাংলাদেশে কাজ শুরু করলে দেশের গেমিং খাত আরও বড় হবে।

অনলাইনে গেমের পাশাপাশি মোবাইল গেমিং বাড়ছে। গেম খেলার জন্য এখন মানুষ স্মার্টফোন ব্যবহার করেছে বেশি। তাই বিশ্বে গেমিং বিভাগে সবচেয়ে বেশি জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে মোবাইল গেমিং। জানা গেছে, ২০১৮ সালে স্মার্টফোন গেমিংয়ের বাজার দাঁড়িয়েছিল ৬৮ দশমিক ৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলারে। এর মধ্যে ৫৪ দশমিক ৯ বিলিয়ন গেমিংয়ের বাজার শুধু স্মার্টফোনের আর বাকি ১৩ দশমিক ৬ বিলিয়নের বাজার ট্যাবলেট কম্পিউটারের। বাজার গবেষণা প্রতিষ্ঠান গেমিং স্ক্যানের প্রতিবেদনে বলা হয়, স্মার্টফোন গেমিংয়ের আয়ের বেশির ভাগ আসে অ্যাপ থেকে কেনাকাটার মাধ্যমে।

তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ বলেছেন, মোবাইল অ্যাপসের একটি বড় অংশই হলো মোবাইল গেম। বিশ্বের মোবাইল অ্যাপস ও গেমের বিশাল বাজারে বাংলাদেশ অপার সম্ভাবনাময়। ধীরে ধীরে মোবাইল গেমের বাজার বড় হচ্ছে। তাই মোবাইল গেমের বৈশ্বিক মার্কেটকে যথাযথ গুরুত্ব দিয়ে বাংলাদেশের অবস্থানকে গড়ে নিতে কাজ করা হচ্ছে।

উল্কা গেমসের আইনি পরামর্শক এ বি এম হামিদুল মিসবাহ বলেন, ‘বাংলাদেশে গেমের বাজার অনেক বড়। সেখানে ইতিবাচক চিন্তা থাকতে হবে। এ খাতকে ইতিবাচকভাবে উপস্থাপন করতে হবে। দেশে ঘরে বসেই অনেক গেম ডেভেলপার গেম তৈরি করছে। যত গেম তৈরি হচ্ছে, এই সম্ভাবনা আরও বেড়ে যাচ্ছে। বিশ্ব বাজারে আমাদের গেমের চাহিদা বাড়লে আমাদের বাজার বড় হবে। বাজার বড় করতে গিয়ে ভয়ের সৃষ্টি হচ্ছে। অনেকে গেমিংকে জুয়ার সঙ্গে গুলিয়ে ফেলছে। এতে ডেভেলপাররা মুখ ফিরিয়ে নিলে এ খাত ক্ষতির মুখে পড়বে।’

হামিদুল মিসবাহ আরও বলেন, ‘বিশ্বের অন্য দেশে যখন গেমার, গেম ডেভেলপারদের বিশেষ দৃষ্টিতে দেখা হয় সেখানে আমরা আশানুরূপ জায়গায় যেতে পারেনি। সবাইকে মনে রাখতে হবে, গেমিং আর জুয়া কিন্তু এক বিষয় নয়। আইনপ্রণেতা, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী এবং নাগরিক সমাজের উচিত বিষয়টিকে ইতিবাচক হিসেবে দেখা এবং গেমিং নিয়ে ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি তৈরি করা। তা না হলে তথ্যপ্রযুক্তি খাতের গেমের এ সম্ভাবনাময় পথচলা বেশি দূর এগোবে না।