করোনা নিয়ে গুজব, নজরদারিতে হোয়াটসঅ্যাপ

করোনাভাইরাস-সংক্রান্ত সঠিক এবং সময়োপযোগী তথ্য দিতে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সরকার এবং স্বাস্থ্য বিভাগের কর্মীরা কঠোর পরিশ্রম করে যাচ্ছেন। কিন্তু তাঁদের এই চেষ্টা বিফল করে দিচ্ছে স্বাস্থ্যসংক্রান্ত ভুল ও মিথ্যা তথ্য। আর এ কাজে ব্যবহৃত হচ্ছে বিশ্বের সবচেয়ে জনপ্রিয় মেসেজিং প্ল্যাটফর্ম। এর নাম হোয়াটসঅ্যাপ। এর মালিক ফেসবুক। এখন করোনা-সংক্রান্ত ভুল তথ্য ছড়ানোর জন্য হোয়াটসঅ্যাপকে নতুন করে নজরদারির মধ্যে আনা হচ্ছে। সিএনএনের এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়েছে।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) ঘোষিত মহামারি করোনায় এ পর্যন্ত দুই লাখের বেশি মানুষ আক্রান্ত হয়েছে। মারা গেছে আট হাজারের বেশি মানুষ। কিন্তু করোনাভাইরাস-সংক্রান্ত ভুল তথ্য স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের চিন্তায় ফেলে দিয়েছে। পরিস্থিতি এমন অবস্থায় পৌঁছে গেছে যে বিশ্বনেতারাও মানুষের কাছে আহ্বান জানাচ্ছেন গুজবে কান না দিতে। আয়ারল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী লিও ভারাডকার টুইটারে আহ্বান জানিয়ে লিখেছেন, ‘আমি সবার প্রতি আহ্বান জানাই, হোয়াটসঅ্যাপে ভুল তথ্য ছড়াবেন না। এসব গুজবনির্ভর বার্তা মানুষকে আতঙ্কিত করছে, দ্বিধাগ্রস্ত করছে। বড় ক্ষতিটাই হচ্ছে এসব গুজব ছড়ানোর ফলে।’ প্রধানমন্ত্রী লিও আরও লিখেছেন, ‘যে তথ্য দিচ্ছেন, তা দায়িত্বপ্রাপ্ত কোনো কর্মকর্তার কাছে থেকে নিন, বিশ্বস্ত সূত্র থেকে দিন।’

স্মার্টফোনে হোয়াটসঅ্যাপ ব্যবহারকারীদের মাধ্যমে বন্ধু, আত্মীয়স্বজনের মাধ্যমে নেমেছে করোনা-সংক্রান্ত তথ্য চালাচালির ঢল। কেউ কেউ এসব তথ্য পাঠানোর সময় খ্যাতনামা চিকিৎসক, সরকারি দপ্তরের চাকরি করা বন্ধুর নাম ব্যবহার করছেন। কেউ কেউ রেকর্ড করা শব্দ শোনাচ্ছেন। যেখানে নানা উপদেশের কথা আছে। কীভাবে হাত ধুতে হবে বা হবে না, এমন হিতোপদেশ দিচ্ছেন। এমন একটি ভুল বার্তা হলো: ‘করোনাভাইরাস থেকে রক্ষা পেতে প্রতি ১৫ মিনিট অন্তর গরম পানি পান করুন।’

হোয়াটসঅ্যাপ তাদের প্ল্যাটফর্ম থেকে পাঠানো এসব বার্তা নজরদারি করছে না। তবে তারা বলেছে, ভুল তথ্য রোধ করতে তারা পদক্ষেপ নিয়েছে। যারা তথ্যের ওপর নজরদারি করে, এসব প্রতিষ্ঠানে অর্থ দিয়েছে। হোয়াটসঅ্যাপের প্রধান উইল ক্যাচকার্ট গতকাল বুধবার টুইট করেছেন, ‘স্থানীয়ভাবে এক ডজনের বেশি তথ্য নিরীক্ষক প্রতিষ্ঠান আছে। আমরা আরও বেশি প্রতিষ্ঠান নিয়োগের কথা ভাবছি, যাতে গুজব শনাক্ত করা সম্ভব হয়।’

ইউরোপীয় কমিশনের ভাইস প্রেসিডেন্ট ভি আর জুরভ বলেছেন, ‘জনপরিসরে বিপুল পরিমাণ গুজব ছড়িয়ে পড়ছে।’

হোয়াটসঅ্যাপ বিভিন্ন তথ্য নিরীক্ষাকারী প্রতিষ্ঠান এবং বিভিন্ন দেশের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য বিনা পয়সায় ফেসবুকে বিজ্ঞাপন আকারে দেওয়ার ব্যবস্থা করেছে। জুরভ এ উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েছেন।

হোয়াটসঅ্যাপে ছড়ানো গুজবে আক্রান্ত যুক্তরাষ্ট্রও। এমন একটি মেসেজে বলা হয়, দ্রুতই কিছু এলাকা একেবারে বন্ধ ঘোষণা করা হবে। এ জন্য সবাইকে প্রয়োজনীয় দ্রব্য মজুত করে রাখতে হবে। যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় নিরাপত্তা কাউন্সিল টুইটারে জানিয়ে দিয়েছে, এটা নিছক গুজব।

পরিস্থিতি বিবেচনা করে স্বাস্থ্য বিভাগের কর্মীরা যেন মানুষকে সঠিক তথ্য দিতে পারেন, সে জন্য হোয়াটসঅ্যাপ একটি উদ্যোগ নিয়েছে। গতকাল তারা ইন্টারন্যাশনাল ফ্যাক্ট-চেকিং নেটওয়ার্ককে (আএফসিএন) এক মিলিয়ন ডলার দিয়েছে। তারা করোনাভাইরাসের তথ্য প্যাকেজ তৈরি করবে। এসব তথ্য ডব্লিউএইচও এবং ইউনিসেফের মতো প্রতিষ্ঠানকে হটলাইনের মাধ্যমে জনগণকে দিতে সহায়তা করবে।