করোনা কবে দূর হবে?

লাখ টাকার প্রশ্ন। বিশ্বের বড় বড় বিজ্ঞানী গবেষণা করে এখনো এর কূলকিনারা খুঁজে পাননি। তবে অনেক গবেষক দাবি করছেন, তাঁরা ওষুধ বের করে ফেলেছেন। প্রাথমিক পরীক্ষায়ও পাস। এখন কোনো কোনো রোগীর ওপর পরীক্ষা চলছে। ওষুধ বা টিকা এসে গেল বলে। আর টিকা আবিষ্কার হলেই তো করোনার দিন শেষ। অবশ্য কিছু সময় লাগবে। এই ধরুন এক-দেড় বছর! এটাই নিয়ম। কারণ মানুষের ওপর কোনো ওষুধ বা টিকার পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া যাচাই না করে তো বাজারে ছাড়া যায় না।

ওদিকে চীনে শেষ হয়ে আবার নতুন করে সংক্রমণ শুরু হয়েছে। সে জন্য এখন বাইরের দেশ থেকে কারও চীনে প্রবেশ এক মাসের জন্য বন্ধ রাখা হয়েছে। কারণ ওরা বলছে, নতুন করে বাইরের কারও থেকে না এলে নতুন করে চীনে করোনা ছড়ানোর কথা না। অবশ্য কোনো কোনো বিশেষজ্ঞ বলছেন, করোনা এমন ভয়াবহ রোগ, যার একবার হয়েছে, তার যে আবার হবে না, সে ব্যাপারে কোনো গ্যারান্টি নেই। তাহলে কি সারা বছরই চলতে থাকবে করোনাভাইরাসের এই সংক্রমণ?

তবে সুসংবাদও আসছে। চীনেরই একজন বিশেষজ্ঞ দাবি করেছেন, এপ্রিলের শেষ দিকে করোনা মহামারি নিয়ন্ত্রণে আসবে। আমরা আশাবাদী হতে চাই। কারণ ব্রিটেন-আমেরিকাসহ বিশ্বের প্রতিটি দেশ করোনা সংক্রমণ রোধে কঠোর ব্যবস্থা নিচ্ছে। করোনা কোণঠাসা হয়ে পড়বে। এটাই স্বাভাবিক।

রোগের বিস্তার

এখন পর্যন্ত প্রায় ২০০ দেশ কমবেশি করোনায় আক্রান্ত। প্রতিদিন রোগের বিস্তার ঘটছে। মানুষ মারা যাচ্ছে। নিউইয়র্ক, যুক্তরাষ্ট্রের অন্যান্য অঙ্গরাজ্য, ফ্রান্স, ইতালি ও যুক্তরাজ্যে এই ভাইরাসের ব্যাপক সংক্রমণের সংবাদ পাওয়া যাচ্ছে। আবার হঠাৎ করে হংকং, সিঙ্গাপুর, তাইওয়ান, জাপানের রাজধানী টোকিওতে রোগের সংক্রমণ বাড়ছে বলেও খবর এসেছে।

গতকাল পর্যন্ত সারা বিশ্বে আক্রান্তের সংখ্যা ছিল ১১ লাখেরও বেশি। মৃত্যুর সংখ্যা ৬০ হাজার ছাড়িয়ে গেছে।

সব দেশই কি আক্রান্ত?

না, সব দেশে কিন্তু করোনা বিস্তার লাভ করতে পারেনি। এখন পর্যন্ত দেখা গেছে করোনামুক্ত দেশের সংখ্যা ১৮। কারণটা কী? সেখানে কেন নেই? প্রধান কারণ হলো, দেশগুলোর বেশির ভাগই বিচ্ছিন্ন ছোট ছোট দ্বীপ রাষ্ট্র। আবার কয়েকটি দেশে করোনা না থাকলেও ওরা জাতীয় জরুরি অবস্থা ঘোষণা করেছে।

তাহলে এটা পরিষ্কার যে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখলে করোনায় আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা কমে যায়। এই ১৮টা দেশ আমাদের এ শিক্ষাই দেয়। এবং আজ যে সারা বিশ্বের করোনা-আক্রান্ত সব দেশ লকডাউনে যাচ্ছে, তার সুফল নিশ্চয়ই পাওয়া যাবে। চীনের বিশেষজ্ঞ যে বলেছেন, এপ্রিলের শেষ দিকে প্রকোপ কমে আসতে পারে, তার সূত্র এখানেই।

জুতা ফ্ল্যাটের বাইরে রাখুন

দূরত্ব বাজায় রাখা, বারবার হাত ধোয়া, হাঁচি-কাশির সময় হাতের কনুই ভাঁজ করে ঢেকে রাখা ইত্যাদি তো আমরা জানিই। এর সঙ্গে বিশেষভাবে যোগ করতে চাই, যদি বাধ্য হয়ে বাইরে যেতেই হয়, তাহলে বাইরে থেকে এসে জুতা ফ্ল্যাটের বাইরে রাখুন এবং ঘরের ভেতরে স্যান্ডেল ব্যবহার করুন। এটা আমাদের অনেকে খেয়াল করি না। কিন্তু যখন স্বপ্ন, মীনা বাজার, বিগ বাজার বা এ ধরনের শপিং সেন্টার যাই, ওরা প্রথমে জুতার নিচের অংশ স্প্রে করে এবং হাতে স্যানিটাইজার দিয়ে জীবাণুমুক্ত করে দেয়। এর আগে দোকানে ঢোকা যায় না। আমরা ভাবতে পারি কেন শুধু জুতার তলায় স্প্রে করে, পুরো জুতা কেন নয়? কারণ পাকা রাস্তার অ্যাসফেল্ট বা আলকাতরায় করোনা ভাইরাস পাঁচ-সাত দিন পর্যন্ত টিকে থাকে। এই জন্যই আমরা দেখতাম, চীনে বড় রাস্তাগুলো গাড়ি থেকে স্প্রে করে জীবাণুমুক্ত করছে। রাস্তার পাশের দেয়ালগুলোতে স্প্রে করছে। আমাদের দেশেও এটা ভালোভাবে চালানো দরকার। না হলে করোনার জীবাণু সহজে ধ্বংস হবে না।

তা ছাড়া লকডাউন তো সবাইকে কঠোরভাবে মানতে হবেই। আর যে বলা হয় গরম পানিতে দু বেলা গড়গড়া করা, ভাপ নেওয়া, দিনে তিন-চার বার রং চা পান করা, বেশি বেশি পানি পান, ভিটামিন সি, ডি-সমৃদ্ধ খাবার খাওয়া—এগুলো তো করতেই হবে। গরম পানির চিকিৎসা তো আমরা সাধারণ সর্দি-কাশিতেও চালাই। এর ওপর যদি করোনাতেও কাজে লাগে, সমস্যা কী?

কিন্তু যদি শুকনা কাশি বা জ্বর ৩৭.৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস বা ৯৯.৩ ডিগ্রি ফারেনহাইট বা তারও বেশি থাকে, তাহলে অবশ্যই বাসার ভেতর আইসোলেশনে থাকবেন। সমস্যা বাড়লে ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে।

শেষ কোথায়?

যদি আবারও বলি, যদি সব দেশ লকডাউন কঠোরভাবে মানে, আর আমরা যদি বহুল প্রচারিত সব স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলি, তাহলে হয়তো এ মাসের মধ্যেই করোনার প্রকোপ নিয়ন্ত্রণে আনা যাবে। আর ইতিমধ্যে যদি ওষুধ বের হয়ে যায়, সবার জন্য সহজলভ্য করা হয়, তাহলে তো কথাই নেই।

আব্দুল কাইয়ুম, মাসিক ম্যাগাজিন বিজ্ঞানচিন্তার সম্পাদক