তথ্যপ্রযুক্তি খাতে বড় বিপর্যয়ের আশঙ্কা

প্রতীকী ছবি
প্রতীকী ছবি

রোবাস্ট ল্যাব নামের একটি সফটওয়্যার কোম্পানির সহপ্রতিষ্ঠাতা আবু হায়দার সিদ্দিক। তাঁদের গ্রাহক যুক্তরাষ্ট্রে থাকেন। বিশ্বজুড়ে করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়ায় ধাক্কা লেগেছে তাঁদের প্রতিষ্ঠানটিতে। গত জানুয়ারির শেষ সপ্তাহ থেকে নতুন কাজ পাচ্ছেন না। যেসব অর্ডার (সফটওয়্যার তৈরির কাজ) পেয়েছিলেন, তা-ও স্থগিত হয়ে গেছে। এমন পরিস্থিতিতে রোবাস্ট ল্যাবের ১২ কর্মীর বেতন-ভাতা নিয়ে অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে।

আগামী মে মাস পর্যন্ত বর্তমান পরিস্থিতি অব্যাহত থাকলে দেশের সফটওয়্যার কোম্পানিগুলো বড় ধরনের বিপর্যয়ের মুখে পড়বে বলে আশঙ্কা করছেন এ খাতের সঙ্গে যুক্ত ব্যক্তিরা। এ বিষয়ে বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব সফটওয়্যার অ্যান্ড ইনফরমেশন সার্ভিসেসের (বেসিস) সভাপতি সৈয়দ আলমাস কবির প্রথম আলোকে বলেন, বর্তমান পরিস্থিতিতে সরকার এ শিল্পকে বাঁচাতে বিশেষ উদ্যোগ না নিলে আগামী দুই মাসের মধ্যে অন্তত ৫০ শতাংশ কোম্পানি বন্ধ হয়ে যাবে। এখনই দেশের বাইরের অনেক গ্রাহক সফটওয়্যারের কাজ বাতিল করছেন, বিল দেওয়াও বন্ধ করে দিয়েছেন। বিভিন্ন কোম্পানির প্রকৌশলী ও কর্মীরা বসে আছেন। এ অবস্থায় বেসিসের সদস্য প্রতিষ্ঠানগুলোকে সরকারি সহায়তা দিতে আইসিটি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহ্‌মেদের কাছে চিঠি দিয়েছেন তাঁরা।

শুধু সফটওয়্যার কোম্পানি নয়, তথ্যপ্রযুক্তিসংশ্লিষ্ট (আইটি) খাতের সব সংগঠনও এখন আর্থিক সংকটে পড়েছে। কারওয়ান বাজারের সফটওয়্যার টেকনোলজি পার্ক ঘুরে দেখা যায়, অধিকাংশ প্রতিষ্ঠানই বন্ধ। ফিফোটেক নামে একটি আইটি প্রতিষ্ঠানের (কল সেন্টার) প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা তৌহিদ হোসেন বলেন, ১৫০ জন কর্মী কাজ করেন তাঁর প্রতিষ্ঠানে। আতঙ্কে অনেকে ছুটি নিয়েছেন। এখন কাজ করছেন ৫০ জনের মতো। আবার যাঁরা কাজ করছেন, প্রতিষ্ঠানের খরচে তাঁদের থাকা-খাওয়ার ব্যবস্থা করতে হচ্ছে। অনেককে বাসায় রেখে কাজ করানো হচ্ছে। সংকটের এই সময়ে একদিকে ব্যয় বেড়ে গেছে, অন্যদিকে নতুন কাজের অর্ডার পাওয়া যাচ্ছে না।

>

দেশে তথ্যপ্রযুক্তি খাতের সঙ্গে প্রত্যক্ষভাবে যুক্ত মানুষের সংখ্যা এখন প্রায় ১০ লাখ

তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি বিভাগের প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহ্‌মেদ প্রথম আলোকে বলেন, তথ্যপ্রযুক্তি খাতের উদ্যোক্তা ও প্রতিষ্ঠানগুলোকে কীভাবে সহায়তা করা যায়, তা নিয়ে সরকারের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ে কথা বলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

বেসিসের তথ্য অনুযায়ী, দেশে তথ্যপ্রযুক্তি খাতের সঙ্গে প্রত্যক্ষভাবে যুক্ত মানুষের সংখ্যা এখন প্রায় ১০ লাখ। এই খাতের বাজার হিস্যা ২১ হাজার ২৫০ কোটি টাকা। এর মধ্যে স্থানীয় বাজার ১১ হাজার ৫০ কোটি টাকা। তথ্যপ্রযুক্তি খাতে বছরে রপ্তানির পরিমাণ ১০ হাজার ২০০ কোটি টাকা।

করোনাভাইরাসের প্রভাবে বিপদে পড়েছে মোবাইল, কম্পিউটারসহ হার্ডওয়্যার খাতও। এই খাতে দেশে মাসে বিক্রির পরিমাণ এক হাজার কোটি টাকা বলে জানান বাংলাদেশ কম্পিউটার সমিতির সভাপতি শাহিদ–উল–মুনীর। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, বর্তমান পরিস্থিতিতে হার্ডওয়্যার খাতের ছোট–বড় সব ব্যবসায়ী সংকটে পড়েছেন।

আগামী দুই মাস এমন পরিস্থিতি থাকলে দেশের ৮০ শতাংশ কল সেন্টার বন্ধ হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা করছেন বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব কল সেন্টার অ্যান্ড আউটসোর্সিংয়ের (বাক্কো) সভাপতি ওয়াহিদুর রহমান। তিনি প্রথম আলোকে জানান, দেশে ১৫০টি কল সেন্টার প্রতিষ্ঠান রয়েছে। এ খাতে প্রায় ৫০ হাজার জনবল কাজ করে। সরকারের বিশেষ প্রণোদনা ছাড়া এই শিল্পকে টিকিয়ে রাখা কঠিন হবে।

অনলাইনে বিভিন্ন পণ্যের ক্রয়-বিক্রয়ের ব্যবসা ই-কমার্স খাতও সংকটে পড়েছে। গত ২৬ মার্চ থেকে সাধারণ ছুটি ঘোষণার পর মানুষ এ খাতের ওপর নির্ভরশীল হয়েছে বেশি। কিন্তু পণ্য সরবরাহের জন্য লোকবলের (ডেলিভারিম্যান) সংকটে পড়েছে খাতটি। যে কারণে অর্ডার পেলেও পণ্য সরবরাহ করা কঠিন হয়ে পড়েছে বলে জানান ই-কমার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ই-ক্যাব) সভাপতি শমী কায়সার।

তবে আইটি খাতের উদ্যোক্তাদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি সমস্যায় পড়েছেন ফ্রিল্যান্সাররা (যাঁরা কোনো সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত না থেকে স্বাধীনভাবে কাজ করেন)। এর কারণ, সরকার কোনো প্রণোদনা দিলেও সেটি বেসিস, বাক্কো, ই-ক্যাবসহ সংশ্লিষ্ট অ্যাসোসিয়েশনের মাধ্যমে দেবে বলে শোনা যাচ্ছে। বিলাস সিদ্দিকী নামের একজন ফ্রিল্যান্সার ফেসবুকে লিখেছেন, ‘ইউরোপ-আমেরিকা যেহেতু লকড ডাউন, তাই আগামী ছয় মাস কোনো প্রজেক্ট (কাজ) পাব কি না, জানি না। বিগত বছরগুলোতে সরকারকে ন্যায্য ট্যাক্স দিয়েছি। এখন কি সরকারের উচিত না আমার মতো ক্ষুদ্র লোকেদের প্রণোদনা দেওয়া?...’