খুঁজে পাওয়া গেল 'চিকন' হওয়ার উপায়

গবেষকেরা চিকন থাকার জিন সংস্করণ খুঁজে পেয়েছেন। ছবি: রয়টার্স
গবেষকেরা চিকন থাকার জিন সংস্করণ খুঁজে পেয়েছেন। ছবি: রয়টার্স

কিছু মানুষ ইচ্ছেমতো খেয়েও মোটা হন না। শরীরচর্চা না করেও শুকনা বা চিকন থাকেন। এতে তাঁদের ওজন বাড়ে না। অন্যদিকে কিছু মানুষ আছেন মেপে মেপে খাবার খেয়েও মোটা হয়ে যান। নিয়মিত ব্যায়াম করে ঘাম ঝরিয়েও ওজনটাকে বাগে আনতে পারেন না।তাঁদের জন্য সুখবর দিতে যাচ্ছেন গবেষকেরা। সম্প্রতি চিকন থাকার কারণ একটি জিন আবিষ্কার করেছেন তাঁরা।

আন্তর্জাতিক গবেষক দলটির সদস্যরা আশার কথা শোনাচ্ছেন। তাঁরা বলছেন, নতুন আবিষ্কৃত জিনটি স্থূলতা বা মেদ কমানোর চিকিৎসার ক্ষেত্রে নতুন সম্ভাবনা খুলতে পারে।

গতকাল বৃহস্পতিবার 'সেল' সাময়িকীতে গবেষণা সংক্রান্ত প্রাথমিক তথ্য প্রকাশিত হয়েছে।


গবেষকেরা বলছেন, চিকন বা কম ওজনের ব্যক্তিদের ক্ষেত্রে অনন্য এ জিনের সংস্করণটিকে বলা হয় 'এএলকে' জিন। এ জিনটি এক ধরনের প্রোটিন তৈরি করে যার নাম 'অ্যানাপ্লাস্টিক লিম্ফোমা কিনেস' যা কোষের বৃদ্ধির সঙ্গে যুক্ত থাকে।

গবেষকেরা এস্তোনিয়ার ২০ থেকে ৪৪ বছর বয়সী ৪৭ হাজারের বেশি স্বাস্থ্যবান মানুষের চিকিৎসাগত তথ্য ও ডিএনএ নমুণা বিশ্লেষণ করে জিনের এ সংস্করণটি শনাক্ত করেন।

ব্রিটিশ কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের লাইফ সায়েন্সেস ইনস্টিটিউটের পরিচালক ও মেডিকেল জেনেটিকস বিভাগের অধ্যাপক জোসেফ পেনিনগার বলেন, 'এস্তেোনিয়ান বায়োব্যাংক বিশদ গবেষণার ক্ষেত্রে অনন্য। আমরা মানুষের জেনেটিক ম্যাপের সঙ্গে যাদের বডি মাস ইনডেক্স (বিএমআই) ১৮ এর কম তাদের তথ্য স্বাভাবিক ওজনের মানুষের সঙ্গে তুলনা করি। এতে দেখা যায়, চিকন হওয়ার জন্য জেনেটিক সংস্করণের সম্পর্ক রয়েছে।'

গবেষকেরা এলকে জিন কীভাবে কাজ করে, তা বুঝতে ইঁদুর ও মাছি নিয়ে গবেষণা করেন।

কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের মেটাবলিক ডিজিজ বিভাগের পরিচালক স্টিফেন ও'রাহিলি বলেন, গবেষণাটি চূড়ান্ত নয় তবে অত্যন্ত আকর্ষণীয় ছিল। স্থূলত্বের চিকিৎসার থেরাপিউটিক কৌশল হিসেব একেএল-৭ সংস্করণের প্রতি নিশ্চয়ই আগ্রহ বেড়ে যাবে।

গবেষকেরা বলেন, বিজ্ঞানীরা আগে থেকেই জানেন এএলকে জিনের এক ধরনের রূপান্তর (মিউটেটেড ফর্ম) ও বিশেষ প্রোটিন ক্যানসার টিউমার তৈরিতে কাজ করে। ফুসফুসের ক্যানসার কিংবা মস্তিষ্কের ক্যানসারে এদের উপস্থিতি পাওয়া যায়। নতুন এ গবেষণায় দেখা গেছে, ওই জিনটির একটি আলাদা মিউটেশন চিকন থাকার ও ওজন বাড়ার ক্ষেত্রে বাধা দিতে বড় ভূমিকা রাখতে পারে। ইঁদুর ও মাছিতে গবেষণা করে এর প্রমাণ মিলেছে। গবেষকেরা ও জিনটি সরিয়ে দিয়ে চিকন ইঁদুর ও মাছি দেখতে পান।'

গবেষকেদের ইঁদুর নিয়ে গবেষণায় দেখা যায়, জিনটি খাদ্য থেকে আরও চর্বি পোড়াতে ফ্যাট টিস্যুগুলোকে নির্দেশ দেয়।

গবেষক পেনিনগার বলেন, এই জিন আবিষ্কার ভবিষ্যতে স্থূলত্বের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে চিকিৎসা বিজ্ঞানীদের সহায়তা করতে পারে। এটা এখন বাস্তব যে, গবেষকেরা এএলেকে বন্ধ করে দেওয়া বা এএলকের কার্যক্ষমতা কমিয়ে চিকন থাকা যায় কি না, তা দেখতে পারেন। ইতিমধ্যে ক্যানসার চিকিৎসায় এটি ব্যবহৃত হচ্ছে, ভবিষ্যতে মেদ কমাতে এটির ব্যবহার নিয়ে ভাবতে পারেন চিকিৎসকেরা।