এ বছরেই ভ্যাকসিন: চীন

ভ্যাকসিন তৈরিতে কাজ করছেন চীনা গবেষকেরা। ছবি: রয়টার্স
ভ্যাকসিন তৈরিতে কাজ করছেন চীনা গবেষকেরা। ছবি: রয়টার্স

চীন বলেছে, একটি করোনভাইরাস ভ্যাকসিন এই বছর প্রস্তুত হতে পারে। দেশটির একটি সরকারি সংস্থা ঘোষণা দিয়েছে, এ বছরের শেষ নাগাদ কোভিড-১৯ ঠেকাতে একটি ভ্যাকসিন পাওয়া যেতে পারে। যে ভাইরাসে ৬০ লাখ মানুষ সংক্রমিত হয়েছে এবং বিশ্ব অর্থনীতি বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে তার ভ্যাকসিন তৈরির দৌড়ে প্রথম হতে চাইছে চীন। ফোর্বসের এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
চীনের রাষ্ট্রনিয়ন্ত্রিত অ্যাসেটস সুপারভিশন অ্যান্ড অ্যাডমিনিস্ট্রেশন কমিশন (এসএএসএসি) শুক্রবার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে পোস্ট দিয়ে বলেছে, ২০২০ সালের শেষের দিকে বা ২০২১ সালের শুরুতে রাষ্ট্র-অনুমোদিত দুটি সংস্থার দ্বারা তৈরি একটি ভ্যাকসিন প্রস্তুত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
চীনের রাষ্ট্রনিয়ন্ত্রিত ওই দুটি প্রতিষ্ঠান হচ্ছে উহান ইনস্টিটিউট অব বয়োলজিক্যাল প্রোডাক্টস ও বেইজিং ইনস্টিটিউট অব বায়োলজিক্যাল প্রোডাক্টস।
বার্তা সংস্থা রয়টার্স জানিয়েছে, চীনা দুটি প্রতিষ্ঠান দ্বিতীয় ধাপের পরীক্ষা শুরু করেছে এবং দুই হাজার ব্যক্তিকে ভ্যাকসিন দিয়েছে।
এসএএসএসির তথ্য অনুযায়ী, বেইজিং ইনস্টিটিউট অব বায়োলজিক্যাল প্রোডাক্টসের উৎপাদনের সক্ষমতা প্রতিবছরে ১০ কোটি থেকে ১২ কোটি ডোজ।
এখন পর্যন্ত চীনের ৫টি ভ্যাকসিন মানুষের ওপর প্রয়োগ করা হয়েছে, যা বিশ্বের অন্য দেশের তুলনায় সবচেয়ে বেশি।
চীনের উহান থেকে উৎপন্ন হওয়া ভাইরাসটি থেকে মুক্তি পেতে দেশটির স্বাস্থ্য সংস্থা, নিয়ন্ত্রক, গবেষক দল থেকে শুরু করে ছোট ব্যক্তিমালিকানাধীন প্রতিষ্ঠান পর্যন্ত দলগতভাবে অতিরিক্ত সময় পরিশ্রম করে ভ্যাকসিন তৈরির কাজ চালিয়ে যাচ্ছে।
উল্লেখ্য, রাষ্ট্রনিয়ন্ত্রিত এ দুটি প্রতিষ্ঠান ছাড়াও বেইজিংভিত্তিক জৈবপ্রযুক্তি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সিনোভ্যাকের গবেষকেরা তাঁদের করোনাভ্যাক নামের ভ্যাকসিনটি প্রায় শতভাগ সফল হবে বলে দাবি করেছেন। সংস্থাটি ১০ কোটি ভ্যাকসিন ডোজ সরবরাহের লক্ষ্য নিয়ে একটি বাণিজ্যিক প্ল্যান্ট তৈরি করছে।
বর্তমানে সিনোভ্যাকের তৈরি করোনাভাইরাস ভ্যাকসিনটি ক্লিনিক্যাল পরীক্ষার দ্বিতীয় ধাপে রয়েছে।
ক্লিনিক্যাল পরীক্ষার তৃতীয় ধাপ শুরু করতে তাঁরা যুক্তরাজ্যে সরকারের সঙ্গে প্রাথমিক আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছেন।
চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং কোনো ভ্যাকসিন তৈরিতে সফল হলে তা অন্য দেশকে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। অতীতে অবশ্য চীনা পণ্য নিয়ে উৎপাদন মান ও নিরাপত্তা কেলেঙ্কারির ঘটনা রয়েছে বলে ব্লুমবার্গ এক প্রতিবেদনে উল্লেখ করেছে।
ফোর্বস জানিয়েছে, ২০২০ সালের মধ্যে কোনো চীনা ভ্যাকসিনের প্রত্যাশা–পূর্ববর্তী অনুমানের তুলনায় আগ্রাসী মনে হচ্ছে। কারণ, ধারণা করা হচ্ছিল ভ্যাকসিন তৈরিতে এক বছরের বেশি সময় লাগবে।
চলতি সপ্তাহে যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব অ্যালার্জি অ্যান্ড ইনফেকশাস ডিজিজেসের (এনআইএআইডি) পরিচালক অ্যান্থনি ফাউসি বলেছেন, এফডিএর দ্রুত ভ্যাকসিন পরীক্ষাগুলেোর পর্যবেক্ষণ বলছে, কোভিড-১৯–এর ভ্যাকসিন নভেম্বরের মধ্যে তৈরি হতে পারে। ভ্যাকসিন কর্মসূচি চালাতে হেলথ অ্যান্ড হিউম্যান সার্ভিস বিভাগ ১০ কোটি ডলারের সিরিঞ্জ ও সুই ফরমাশ দিয়েছে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, ১০০টির বেশি সম্ভাব্য কোভিড-১৯ ভ্যাকসিন নিয়ে পরীক্ষা চলছে। এর মধ্যে ১০টি মানবদেহে পরীক্ষার পর্যায়ে এসেছে।
টানা দুই বছর ধরে যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের মধ্যকার বাণিজ্যযুদ্ধের পর এবারে করোনাভাইরাস ভ্যাকসিন তৈরির প্রতিযোগিতা শুরু হয়েছে। এ সপ্তাহে চীনকে আক্রমণ করে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেছেন, তারা উহান ভাইরাস প্ররোচিত করেছে এবং তারপরে গোপন রেখেছিল। গত শুক্রবার চীনের পক্ষে কথা বলার অভিযোগ তুলে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা থেকে সরে যাওয়ার কথাও বলেছেন তিনি।