ফুসফুসের ক্যানসার নিরাময়ে সুখবর

প্রতিবছর বিশ্বে ফুসফুসের ক্যানসারে মারা যান অনেক মানুষ। এই সংখ্যা যাতে ব্যাপকভাবে কমানো যায়, সে জন্য এর চিকিৎসায় সুখবর দিচ্ছেন গবেষকেরা। ফুসফুসে ক্যানসারের নতুন চিকিৎসার ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালে মৃত্যুর ঝুঁকি হ্রাসে অভূতপূর্ব ফল পাওয়ার দাবি করেছেন সুইস-ব্রিটিশ ওষুধ কোম্পানি অ্যাস্ট্রাজেনেকার গবেষকেরা। নতুন এই চিকিৎসাপদ্ধতিতে মৃত্যুঝুঁকি ৮৯ শতাংশ পর্যন্ত কমতে দেখেছেন তাঁরা।

তৃতীয় ধাপের পরীক্ষা শুরু করার পরে অ্যাস্ট্রাজেনেকার ‘টেগ্রিসো’ নামের ওষুধের প্রাথমিক ফলাফল এমন অসাধারণ কার্যকারিতা অর্জন করেছে যে পরীক্ষার তথ্য পর্যবেক্ষণকারী স্বাধীন কমিটি এই পরীক্ষাকে সামনে এগিয়ে নিতে অনুমোদন দিয়েছে। এখন তৃতীয় ধাপের পরীক্ষায় রোগী ও চিকিৎসক আগে থেকেই জানতে পারবেন, তিনি ‘টেগ্রিসো’ পাচ্ছেন, নাকি প্লাসেবো বা অন্য ওষুধ পাচ্ছেন।

টেগ্রিসোর আরেক নাম ওসিমেরটিনিব। দুই বছরে টেগ্রিসো দিয়ে পরীক্ষাধীন থাকা রোগীর ৮৯ শতাংশই বেঁচে রয়েছেন এবং রোগমুক্ত হয়েছে, যা প্লেসেবোর বা অন্য ওষুধের ক্ষেত্রে ৫৩ শতাংশ ফল পাওয়া যায়। ধারাবাহিক রোগমুক্তি ও বেঁচে যাওয়া রোগীর এ হার সব ধরনের গ্রুপের ক্ষেত্রেই লক্ষ করা গেছে, যার মধ্যে সার্জারির পর কেমোথেরাপি গ্রহণ করা রোগী, শুধু সার্জারির রোগী, এশিয়া ও এশিয়ার বাইরের বিভিন্ন রোগী রয়েছে।

টেগ্রিসোর উন্নয়নকারী অ্যাস্ট্রাজেনেকার অনকোলজি গবেষণা ও উন্নয়ন বিভাগের নির্বাহী ভাইস প্রেসিডেন্ট জস বাসেলগা বলেছেন, ‘আমরা প্রত্যাশার চেয়ে অনেক আগে তৃতীয় ধাপের “অ্যাডাউরা ট্রায়াল” আনব্লাইন্ড করার পরামর্শ পেয়ে রোমাঞ্চিত হয়েছি। রোগীদের ক্ষেত্রে অভূতপূর্ব ফলাফল জানতে পেরেও রোমাঞ্চিত বোধ করছি।’ অ্যাডাউরা ট্রায়াল বা এডিএইউআরএ পরীক্ষা হচ্ছে যথেচ্ছভাবে ডাবল ব্লাইন্ড, বৈশ্বিক প্লেসেবো নিয়ন্ত্রিত তৃতীয় ধাপের পরীক্ষা, যাতে ৬৮২ রোগীর ক্ষেত্রে গৌণ টিউমার গঠনের চিকিৎসা করা হয়।

গবেষকেরা বলছেন, ফুসফুসের ক্যানসারের চিকিৎসা মারাত্মক হতে পারে এবং প্রথমবারের মতো কোনো ইজিএফআর লক্ষ্যযুক্ত ওষুধ এখন নিরাময়ের আশা জোগাতে পারে।

প্রকৃতপক্ষে, ফুসফুসের ক্যানসার বিশ্বজুড়ে নারী ও পুরুষ উভয় ক্ষেত্রেই সবচেয়ে বেশি ক্যানসারের মৃত্যুর জন্য দায়ী, যার পরিমাণ ক্যানসারে মোট মৃত্যুর এক-পঞ্চমাংশ। স্তন, প্রোস্টেট ও কোলোরেক্টাল ক্যানসারে মৃত মানুষের সংখ্যা একত্র করলে তার চেয়েও বেশি মৃত্যু হয় ফুসফুসের ক্যানসারে।

ইয়েল ক্যানসার সেন্টারের মেডিকেল অনকোলজি বিভাগের প্রধান রয় এস. হার্বস্ট তৃতীয় ধাপের পরীক্ষার প্রধান তদন্তকারী ছিলেন। তিনি দাবি করেছেন, এটা ওষুধের চর্চা বদলে দিতে পারে। তথ্য দেখে বোঝা গেছে, সফল সার্জারি ও কেমোথেরাপির পরেও প্রাথমিক পর্যায়ে ইজিএফআর-রূপান্তরিত কোষের ফুসফুস ক্যানসারে আক্রান্ত রোগীদের জন্য ভালো ছিল।

এটি কোনো দূরবর্তী নিরাময় বা স্রেফ পরীক্ষার জন্য আসা ওষুধের কথা বলছে না। টেগ্রিসো ৪০ এমজি ও ৮০ এমজি দৈনিক একটি মুখে খাওয়ার বড়িও ৮০টি দেশে অনুমোদন পাচ্ছে, যার মধ্যে যুক্তরাষ্ট্র, চীন ও ইউরোপের অনেক দেশ রয়েছে।

অ্যাস্ট্রাজেনেকা বলেছে, তাদের লক্ষ্যই হলো ক্যানসারের চিকিৎসার নতুন সংজ্ঞা নির্ধারণ এবং একদিন মানুষের মৃত্যুর কারণের তালিকা থেকে ক্যানসারকে বাদ দেওয়া।