অক্সফোর্ড ভ্যাকসিনের তৃতীয় ধাপের পরীক্ষা এবার ব্রাজিলে

করোনাভাইরাসের ভ্যাকসিন তৈরিতে কাজ করছেন গবেষকেরা। ছবি: রয়টার্স
করোনাভাইরাসের ভ্যাকসিন তৈরিতে কাজ করছেন গবেষকেরা। ছবি: রয়টার্স

ব্রাজিলে স্বেচ্ছাসেবকেরা যুক্তরাজ্যের অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের কোভিড-১৯ প্রতিরোধী পরীক্ষামূলক ভ্যাকসিন গ্রহণ করতে শুরু করেছেন। লাতিন আমেরিকায় এ ধরনের ভ্যাকসিনের প্রথম পরীক্ষা এটি। এতে দেশটির পাঁচ হাজার স্বেচ্ছাসেবী অংশ নিচ্ছেন। মূলত, সাও পাওলে, রিও ডি জেনিরো ও উত্তর ব্রাজিলের একটি অঞ্চলে পরীক্ষামূলকভাবে অক্সফোর্ডের ভ্যাকসিনের তৃতীয় ধাপের পরীক্ষা চলছে।

অক্সফোর্ড জেনার ইনস্টিটিউটের তৈরি ভ্যাকসিনটি বর্তমানে যুক্তরাজ্যেও পরীক্ষা চলছে। সেখানে চার হাজার স্বেচ্ছাসেবী ইতিমধ্যে ভ্যাকসিনটি নিয়েছেন এবং আরও ১০ হাজারজনকে পরীক্ষায় যুক্ত করার পরিকল্পনা করা হচ্ছে।

ব্রাজিলিয়ান হেলথ অথোরিটি এজেন্সি (এএনভিআইএসএ) ২ জুন দেশটিতে করোনাভাইরাস টিক পরীক্ষার অনুমোদন দেয়। ব্রিটিশ ওষুধ কোম্পানি অ্যাস্ট্রাজেনেকার সঙ্গে মিলে এ ভ্যাকসিন তৈরি করছে অক্সফোর্ড।

বার্তা সংস্থা রয়টার্স সম্প্রতি জানিয়েছে, করোনাভাইরাস প্রতিরোধে ভ্যাকসিন খোঁজার দৌড়ে সামনের সারিতেই রয়েছে অক্সফোর্ডের পরীক্ষামূলক ভ্যাকসিনটি। ব্রাজিলে সংক্রমণের হার বাড়তে থাকায় সেখানে পরীক্ষার পরিকল্পনা করেন গবেষকেরা। ব্রাজিলের পক্ষ থেকে এ ভ্যাকসিন উৎপাদনের বিষয়েও আগ্রহ দেখানো হয়েছে। গত শনিবার ব্রাজিলের পক্ষ থেকে ১২ কোটি ৭০ লাখ ডলারের চুক্তি করে স্থানীয় পর্যায়ে ভ্যাকসিনটি উৎপাদনের কথা বলা হয়।

অ্যাস্ট্রাজেনেকার লাইসেন্সকৃত সিএইচএডিওএক্সওয়ান এনকোভ-১৯ (ChAdOx1 nCoV-19) নামের ভ্যাকসিনটি নিয়ে বিশ্বজুড়ে আগ্রহ রয়েছে। ভ্যাকসিন তৈরিতে ব্যবহার করা হচ্ছে ‘সিএইচএডিওএক্সওয়ান’ ভাইরাস, যা মূলত সাধারণ সর্দিকাশির দুর্বল ভাইরাস (অ্যাডেনোভাইরাস) হিসেবে পরিচিত। এটি শিম্পাঞ্জিকে সংক্রমিত করে। গবেষকেরা এ ভাইরাসের জেনেটিক পরিবর্তন করেছেন, যাতে তা মানুষের ক্ষতি না করে।

অক্সফোর্ড ভ্যাকসিন গ্রুপের প্রধান অ্যান্ড্রু পোলার্ড গত বুধবার এক বিবৃতিতে বলেন, ‘ক্লিনিক্যাল পরীক্ষাগুলো খুব ভালোভাবে এগোচ্ছে। আমরা এখন পরীক্ষা পর্যালোচনা করে দেখছি যে ভ্যাকসিনটি বয়স্ক ব্যক্তিদের বেলায় কতটা কার্যকরভাবে প্রতিরোধ ক্ষমতা তৈরি করতে পারে। এটি ব্যাপক জনসংখ্যার মধ্যে সুরক্ষা দিতে পারবে কি না, তা পরীক্ষা করে দেখছি।’

হিন্দুস্তান টাইমসের খবরে জানানো হয়, পরীক্ষা সফল হলে অক্সফোর্ড ভ্যাকসিন গ্রুপ আশা করছে, চলতি বছরের শেষ নাগাদ তারা কোভিড-১৯ ভ্যাকসিন ছেড়ে দিতে পারবে। ভ্যাকসিনটির কার্যকারিতা প্রমাণিত হলেই এটি হবে সবচেয়ে দ্রুত তৈরি করা ভ্যাকসিন, যা পরীক্ষাগার থেকে ব্যবহারের জন্য অনুমোদন পাবে।

দ্রুত ভ্যাকসিন তৈরির ক্ষেত্র অবশ্য শুধু অক্সফোর্ড চেষ্টা করছে না; বিশ্বের বিভিন্ন দেশের ভ্যাকসিন উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানগুলো সবার আগে ভ্যাকসিন আনার জন্য প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্য অনুযায়ী, এখন পর্যন্ত ১৩টি ভ্যাকসিন ক্লিনিক্যাল পরীক্ষা পর্যায়ে রয়েছে এবং ১২৯টি ভ্যাকসিন প্রি-ক্লিনিক্যাল বিবর্তন পর্যায়ে রয়েছে। ১২ জুন পর্যন্ত ১০টি ভ্যাকসিন ক্লিনিক্যাল পরীক্ষা পর্যায়ে ছিল। ১১৫টি ভ্যাকসিন পরীক্ষা শুরু করার আগের পর্যায়ে। অর্থাৎ ১০ দিনেই ভ্যাকসিন পরীক্ষা দ্রুত এগিয়ে গেছে।