সাইবার সেনা নিয়ন্ত্রণ করতে চাইছে সৌদি

সৌদি সরকার সাইবার সেনা নিয়ন্ত্রণ করতে চাইছে। ছবি: এএফপি
সৌদি সরকার সাইবার সেনা নিয়ন্ত্রণ করতে চাইছে। ছবি: এএফপি

সৌদি আরবে নিজস্ব ধরনের জাতীয়তাবাদ প্রদর্শনকারী একদল সাইবার সেনা তৈরি হয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে সরকারি মদদ পাওয়ার অভিযোগও রয়েছে। সরকারের বিরুদ্ধে কেউ কোনো সমালোচনা করলে সঙ্গে সঙ্গে ঝাঁপিয়ে পড়ে এই সাইবার সেনাদল। সমালোচককে জাতীয় ‘বেইমান’ হিসেবে তুলে ধরার চেষ্টা চালায়। কিন্তু তাদের এই বাড়াবাড়িই এখন সৌদি সরকারের জন্য অস্বস্তিকর হয়ে দাঁড়িয়েছে। এখন সরকার তা নিয়ন্ত্রণ করতে চাইছে।

বার্তা সংস্থা এএফপির প্রতিবেদনে জানানো হয়, সৌদি বাদশাহ সালমান বিন আবদুল আজিজ আল সৌদ তাঁর ছেলে মোহাম্মদ বিন সালমানকে ২০১৫ সালে সিংহাসনের উত্তরাধিকার ঘোষণা করেন। এরপর রক্ষণশীল দেশটিতে বিন সালমানের অর্থনৈতিক ও সামাজিক সংস্কারের উদ্যোগ আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বেশ সুনাম কুড়ায়। সালমানের অতি জাতীয়তাবাদী পরিবর্তনের পথ ধরেই এই সাইবার সেনাদলের উত্থান। অনেক দেশে রাজনৈতিক বক্তৃতা নিয়ে বিকৃত ট্রল প্রচলিত রয়েছে। তবে সৌদি আরবে তথাকথিত সাইবার ‘মাছি’ হিসেবে রাষ্ট্রীয় নীতির পক্ষের কাজ করার কথা বলে সৌদি শাসকদের ছবি ব্যবহার করে থাকেন। এ সাইবার সেনাদল এখন দ্রুত ক্ষমতাশালী শক্তি হয়ে উঠছে।

এই সেনাদলের বিভিন্ন পোস্টে সৌদির নিরাপত্তা সংস্থাকে ট্যাগ করা হয়। একসঙ্গে সবাই কারও বিরুদ্ধে অভিযোগ দেওয়ার ফলে তার জন্য জিজ্ঞাসাবাদ, চাকরিচ্যুতি, এমনকি নিপীড়নের কারণ হয়ে দাঁড়ায়।

সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যম ও অনলাইনর অ্যাকাউন্টগুলোর সঙ্গে সরকারের যোগসূত্র রয়েছে বলে দীর্ঘদিন থেকে ধারণা করা হয়। এগুলো রাজকীয় আদালতের সাবেক উপদেষ্টা সৌদ আল-কাহতানি পরিচালিত নীতিমালার অংশ হিসেবে পরিচালিত হয়ে আসছে। কাহতানি ২০১৮ সালের অক্টোবরে সাংবাদিক জামাল খাসোগির মৃত্যুর ঘটনায় বরখাস্ত হন। তিনি এই সাইবার বাহিনী ব্যবস্থাপনার জন্য ‘মি.হ্যাশট্যাগ’ ও ‘লর্ড অব দ্য ফ্লাইজ’ নামে পরিচিত হয়ে উঠেছিলেন।

গত জুনে দেশটির রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনের বিরল এক বিতর্কে সরকারের সঙ্গে এই সাইবার সেনাদলের দূরত্ব তৈরির বিষয়টি তুলে ধরা হয়। বলা হয়, এসব অ্যাকাউন্ট থেকে এমনভাবে হুমকি দেওয়া হয় এবং রাষ্ট্রীয় প্রতীক ব্যবহার করা হয় যেন এগুলো সরকার–সমর্থিত। তারা সরকারের চেয়ে বেশি শক্তিশালী—এমন ভাব দেখায়।

সৌদি একাডেমিক সালিহ আল-আসিমি আরও বলেন, এসব অ্যাকাউন্ট তাদের দৃষ্টিতে যথেষ্ট দেশপ্রেম না দেখালে নিজেদের ক্ষমতা দেখায়। পুরোনো টুইট তুলে ধরে আক্রমণ চালাতে থাকে। সরকার–সমর্থিত বিভিন্ন গণমাধ্যম এ সুরে সুর মেলায়।

ওয়াশিংটনভিত্তিক সৌদি বিশেষজ্ঞ আনাস সাকের বলেন, ‘এ অ্যাকাউন্টগুলো সৌদি নেতৃত্বের জন্য মূল্যবান হিসেবে বিবেচিত হয়েছে। তবে তারা আরও ক্ষমতাশালী হয়ে ওঠায় সরকার এখন নিয়ন্ত্রণ করার ইচ্ছা পোষণ করে বলতে চাইছে, তারাই প্রকৃত কর্তৃপক্ষ।’