স্টেম সেল প্রতিস্থাপনে এইচআইভি নিরাময়?

রক্তের ক্যানসার চিকিত্সায় স্টেম সেলের ব্যবহার
রক্তের ক্যানসার চিকিত্সায় স্টেম সেলের ব্যবহার

স্টেম সেল প্রতিস্থাপনের মাধ্যমে প্রাণঘাতী এইডস রোগ নিরাময়ের সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে বলে বিজ্ঞানীরা দাবি করেছেন। এই রোগের জন্য দায়ী এইচআইভি ভাইরাসে আক্রান্ত দুই ব্যক্তির রক্তের ক্যানসার (লিম্ফোমা) চিকিৎসার জন্য স্টেম সেল প্রতিস্থাপন করা হয়েছিল। এতে ওই ভাইরাসের কার্যকারিতা অনেকাংশেই কমে এসেছে। মালয়েশিয়ার রাজধানী কুয়ালালামপুরে অনুষ্ঠিত ইন্টারন্যাশনাল এইডস সোসাইটি কনফারেন্সে বিজ্ঞানীরা এ তথ্য জানিয়েছেন। দুই দিনব্যাপী ওই সম্মেলন গতকাল বুধবার শেষ হয়। যুক্তরাষ্ট্রের বোস্টনে ওই দুই ব্যক্তির একজনের অস্থিমজ্জা প্রতিস্থাপনের জন্য তিন বছর আগে স্টেম সেল চিকিৎসা দেওয়া হয়েছিল। অপর রোগীকে পাঁচ বছর আগে একই চিকিৎসা দেওয়া হয়। এরপর তাঁদের এইডসের ওষুধ যথাক্রমে ১৫ সপ্তাহ ও সাত সপ্তাহ বন্ধ রাখার পরও এইচআইভির উপস্থিতি পাওয়া যায়নি। ধারণা করা হচ্ছে, রোগমুক্তির পথে তাঁদের অগ্রগতি অনেকটা জার্মানির টিমোথি রে ব্রাউনের মতো, যাঁকে এইডস থেকে আরোগ্যলাভকারী বিশ্বের একমাত্র পূর্ণবয়স্ক ব্যক্তি হিসেবে ছয় বছর আগে ঘোষণা দেওয়া হয়। স্টেম সেল থেকে তৈরি হয় মানবদেহের সব কোষ, কলা, অঙ্গপ্রত্যঙ্গ।
এইচআইভিকে অকার্যকর করার চেষ্টায় নতুন আরও বেশ কয়েকটি সম্ভাবনার কথা শুনিয়েছেন সংশ্লিষ্ট গবেষকেরা। যুক্তরাষ্ট্রের মিসিসিপি অঙ্গরাজ্যে এইচআইভি আক্রান্ত একটি শিশুর ওপর বিশেষ ওষুধ প্রয়োগ করা হয়েছিল। ১৫ মাস পর ওষুধটি বন্ধ করে দেওয়ার পর তার শরীরে ভাইরাসটি ফিরে আসার লক্ষণ পাওয়া যায়নি। একসময় এইডসকে একেবারেই অপ্রতিরোধ্য বলে মনে করা হতো। তবে রোগটিকে ‘কার্যত’ থামিয়ে রাখার চেষ্টায় বিজ্ঞানীরা এখন অনেক দূর এগিয়ে গেছেন। অস্থিমজ্জা প্রতিস্থাপনকারী বোস্টনের ওই দুই রোগীকে নিয়ে গবেষণাকারী ব্রিংহ্যাম অ্যান্ড ওমেনস হসপিটালের চিকিৎসক টিমোথি হেনরিক বলেন, রোগীদের অবস্থাকে আরোগ্য হয়তো বলা যায় না। কিন্তু তাঁরা তো এইচআইভি প্রতিরোধী ওষুধ ছাড়াই এক বছরেরও বেশি সময় ধরে সুস্থ রয়েছেন। চিকিৎসা বন্ধ করে দেওয়ার পরও তাঁদের শরীরে ভাইরাসটি ফিরে আসার লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না।
এইচআইভি প্রতিরোধে ১৯৯৬ সাল থেকে একটি বিশেষ ওষুধ ব্যবহার করে লাখ লাখ এইডস রোগীর জীবনসীমা বাড়ানো সম্ভব হয়েছে। তবে ওষুধটি বন্ধ করে দিলে রোগীর অবস্থা দ্রুত অবনতির দিকে যায়।
বিশ্বজুড়ে বর্তমানে প্রায় তিন কোটি ৪০ লাখ মানুষ এইচআইভিতে আক্রান্ত। এইডস রোগে প্রতিবছর প্রায় ১৮ লাখ মানুষের মৃত্যু হয়। এইচআইভি ভাইরাসটি প্রথম শনাক্ত করা হয় ১৯৮১ সালে। এতে আক্রান্ত ব্যক্তির রোগ প্রতিরোধের ক্ষমতা নষ্ট হয়ে যায় এবং নিউমোনিয়া বা অন্যান্য রোগে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুর ঝুঁকি বেড়ে যায়। এএফপি, বিবিসি ও নেচার।