ইন্টারনেট ব্যবহারে মানুষ দিন দিন বোকা হচ্ছে?

.
.

ইন্টারনেট ব্যবহারের কারণে মানুষ কি দিন দিন বোকা হয়ে যাচ্ছে? নিউজিল্যান্ডের ওয়েলিংটনে অবস্থিত ভিক্টোরিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল বিজ্ঞানী মানুষের পড়াশোনাসংক্রান্ত আচরণের ওপর গবেষণা করতে গিয়ে এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজে পেয়েছেন। আর সেটি হলো, হ্যাঁ।
ইন্টারনেটের বিশাল জগৎ আমাদের আগের যেকোনো সময়ের চেয়ে বেশি এবং এককথায় সীমাহীন তথ্যভান্ডারে বিচরণের সুযোগ করে দিয়েছে। কিন্তু অনলাইনে বিভিন্ন বিষয় পড়লে মানুষের চেতনা বা বোধশক্তির ওপর নেতিবাচক প্রভাব পড়ে। ভিক্টোরিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের সহযোগী অধ্যাপক ভ্যাল হুপার ও তাঁর সহযোগী গবেষক চান্না হেরাথ অনলাইনে পড়াশোনা এবং অফলাইনে (ইন্টারনেটের বাইরে বইপত্র, সাময়িকী ও অন্যান্য) পড়াশোনার ধরন ও প্রভাব বিশ্লেষণ করেন। এতে দেখা যায়, ইন্টারনেটভিত্তিক পড়াশোনায় মানুষের মনে রাখার সামর্থ্যের ওপর কোনো ইতিবাচক প্রভাব পড়ে না। তাঁরা অনেক সময় নির্বুদ্ধিতার পরিচয় দেন।
অনলাইনভিত্তিক পড়াশোনায় মানুষ যে পরিমাণ গভীর মনোযোগ, উপলব্ধি, তথ্যধারণ ও স্মৃতিচারণা করতে পারেন, সাধারণ বইপত্র পড়াশোনার ক্ষেত্রে তার চেয়ে অনেক বেশি। তা ছাড়া ইন্টারনেটে মানুষ নিবিড় পড়াশোনার পরিবর্তে সাধারণত দ্রুত পড়ার প্রতি আকৃষ্ট হন। আবার ই-মেইল, সংবাদ অনুসন্ধান, বিভিন্ন লিংকে ঢুঁ মারা ও ভিডিও ক্লিপস দেখতে গিয়ে অনলাইনে নিবিড় পড়াশোনায় বিঘ্ন ঘটতে পারে। হুপার বলেন, কম্পিউটারে পড়াশোনা করতে গেলে মাঝখানে মনোযোগ অন্যদিকে যাবেই। আর ব্যাপারটা অনেকের কাছে প্রত্যাশিতই থাকে।
গবেষণায় অংশগ্রহণকারীদের অনেকে ইন্টারনেটে দ্রুত ও অনেক বেশি বাছাইকৃত পড়াশোনার কৌশল শিখে গেছেন। তবে তাঁরা স্বীকার করেন, সাধারণ বইপত্রে পড়া বিষয়বস্তুই তাঁদের মনে থাকে বেশি।
গবেষণায় আরও দেখা যায়, মনে রাখার সুবিধার্থে অনেকে ইন্টারনেটের বিভিন্ন বিষয় কাগজে প্রিন্ট করে নিয়ে তারপর পড়েন। এতে তাঁদের মনোযোগ বেশি থাকে এবং পড়াশোনার সুফলও পুরোপুরি পাওয়া যায়। আর সে কারণেই লোকজন এখনো কাগজে ছাপা অক্ষর পড়তেই বেশি সাচ্ছন্দ্য বোধ করে, যদিও তা সবসময় চাহিদার তুলনায় পর্যাপ্ত নয়।
হুপার মনে করেন, মানুষ পড়াশোনার সেই চিরায়ত পদ্ধতিতে অভ্যস্ত হয়ে গেছে। তাই ইন্টারনেটে পড়াশোনার অভ্যাস গড়ে তুললেও সেটি তাদের চেতনায় যথেষ্ট জোরালো প্রভাব ফেলতে পারছে না। ব্যাপারটা পরিবর্তন হতে অন্তত একটা প্রজন্ম সময় লেগে যেতে পারে। লোকজন ছেলেমেয়েদের পড়তে শেখায় এখনো বইপত্রের মাধ্যমে, ইন্টারনেটের মাধ্যমে নয়।
সূত্র: সিডনি মর্নিং হেরাল্ড।