সাক্ষাত্কারের জটিল ১০ প্রশ্ন

গুগলে চাকরির জন্য সাক্ষাত্কারে জটিল সব প্রশ্নের মুখে পড়তে হয়
গুগলে চাকরির জন্য সাক্ষাত্কারে জটিল সব প্রশ্নের মুখে পড়তে হয়

চাকরির জন্য সাক্ষাত্কার দেওয়ার বিচিত্র অভিজ্ঞতা অনেকেরই রয়েছে। সাক্ষাত্কারের সময় এমন সব প্রশ্নের উত্তর দিতে বলা হয় যা শুনে অনেকেই চমকে ওঠেন। প্রযুক্তি-ক্ষেত্রে বড় বড় প্রতিষ্ঠান মাইক্রোসফট, অ্যাপল, গুগল, ফেসবুকে যাঁরা সাক্ষাত্কার দিতে যান তাঁদেরও নানা আজব সব প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার জন্য প্রস্তুত থাকতে হয়। হয়তো আপনাকে জিজ্ঞাসা করে বসা হবে, একটি বৃত্তাকার কেককে সমান আট ভাগে কীভাবে কাটবেন? কিংবা একজন এস্কিমোর কাছে কীভাবে ফ্রিজ বিক্রি করবেন?
বিশ্বের শীর্ষ প্রযুক্তি-প্রতিষ্ঠানগুলো তাদের কর্মী নিয়োগের সময় যেসব প্রশ্ন করে তার মধ্যে সবচেয়ে জটিল ১০ টি প্রশ্ন নিয়েই একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে ব্যবসা ও প্রযুক্তি বিষয়ক ওয়েবসাইট বিজনেস ইনসাইডার। আপনারাও দেখুন এই ১০ টি প্রশ্নের মধ্যে কতটির উত্তর আপনাদের জানা আছে। অবশ্য এই প্রশ্নগুলোর সঠিক উত্তর দিতে না পারলেও হতাশ হওয়ার কিছু নেই। এই প্রশ্নগুলোর উত্তর দিতে আপনার কী অবস্থা হয় তা পর্যবেক্ষণ করতেই এ ধরনের প্রশ্নগুলো করা হয়।
প্রশ্ন ১: আপনাকে যদি এক বাক্স পেনসিল দেওয়া হয় তবে এই পেনসিল সচরাচর যে কাজে লাগে তার চেয়ে ব্যতিক্রমী যেসব কাজ আপনি করবেন সেরকম ১০টি কাজের তালিকা তৈরি করুন। গুগলে সহকারী প্রশাসনিক কর্মকর্তাদের নিয়োগের ক্ষেত্রে এই প্রশ্নটি প্রায়শই করা হয়।

প্রশ্ন ২: আপনি যদি মঙ্গল গ্রহের বাসিন্দা হন তবে আপনি কীভাবে বিভিন্ন সমস্যার সমাধান করবেন? আমাজনের সিনিয়র রিক্রুটিং ম্যানেজার নিয়োগে এই প্রশ্ন করা হয়।

প্রশ্ন ৩: সবচেয়ে সৃজনশীল কোন পদ্ধতি ব্যবহার করে আপনি একটি ঘড়ি ভেঙে ফেলতে পারবেন? অ্যাপলে ইন্টার্ন হিসেবে কাজ করতে হলে এই প্রশ্নের উত্তর দিয়ে তবেই কাজ পাওয়া যাবে।

প্রশ্ন ৪: একটি পিনের মাথায় একটি ডিস্ক ঘুরছে। এটি কোনদিকে ঘুরছে আপনি তা জানেন না। আপনাকে এক সেট পিন দেওয়া হল। আপনি কীভাবে এই পিনগুলো ব্যবহার করবেন এবং কীভাবে বুঝবেন যে ওই ডিস্ক কোনদিকে ঘুরছে?
মাইক্রোসফটের সফটওয়্যার ডেভেলপমেন্ট ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে যোগ দিতে হলে সাক্ষাত্কারে এ ধরনের প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করা হয়।

প্রশ্ন পাঁচ: আপনার ব্যাগে ‘এন’ সংখ্যক দড়ি আছে। এলোমেলোভাবে আপনি যেকোনো একটি দড়ির মাথা তুললেন। এরপর আরও একটি মাথা তুলে দুই মাথা একসঙ্গে বেধে দিলেন। এভাবে ব্যাগে যতক্ষণ পর্যন্ত দড়ির মাথা ছিল সবগুলো বেঁধে ফেললেন। কতগুলো সম্ভাব্য ফাঁস তৈরি হল? ফেসবুকে বিজনেস অপারেশন্স ইন্টার্নদের সাক্ষাত্কারে এই প্রশ্ন করা হয়।

প্রশ্ন ৬: আপনি শ্রবণ প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের জন্য একটি ফোনের নকশা করবেন—কীভাবে এই নকশা বানাবেন? গুগলের প্রোডাক্ট ম্যানেজারদের এই প্রশ্ন করা হয়।

প্রশ্ন ৭: কীভাবে একটি এলিভেটর ডিজাইন করবেন? মাইক্রোসফটের ইন্টার্নদের এই প্রশ্নটি করা হয়।

প্রশ্ন ৮: আপনাকে চাকরিতে আমরা কেন নেব না? টুইটারে নিয়োগের ক্ষেত্রে সাক্ষাত্কারে এ প্রশ্ন করা হয়।

প্রশ্ন ৯: দুটি চলমান গোলকের সংঘর্ষের গাণিতিক হিসাব কীভাবে করবেন? সমাধানের গাণিতিক সূত্র ও অ্যালগরিদমিক রূপ উভয়ই দেখান। সিনিয়র সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ারদের এভাবেই প্রশ্ন করে ইলেকট্রনিকস আর্টস।

প্রশ্ন ১০: মাইক্রোসফটের যতগুলো পণ্যের নাম জানেন বলতে থাকেন। মাইক্রোসফটের সহযোগী পরামর্শক পদে নিয়োগ পেতে গেলে এই প্রশ্নের উত্তর দিতে হয়।


সম্ভাব্য উত্তরগুলো
: প্রশ্নগুলো মূলত করা হয় চাকরিপ্রার্থীর সৃজনশীলতা যাচাই করতে বা তাঁর চিন্তা-প্রকৃতি কেমন তা জানতে। একেক মানুষের চিন্তার ধরন একেকরকম বলে এই প্রশ্নের উত্তরগুলোও একেকরকম হতে পারে।

নিরাল্যান্ড নামের একটি ফোরামে এই প্রশ্নগুলোর উত্তর নিয়ে আলোচনা করেছেন অনেকেই। সেখান থেকে এই দশটি প্রশ্নের উত্তর পাঠকদের জন্য তুলে আনা হল:

১. অস্ত্র হিসেবে আত্মরক্ষা করা যেতে পারে। পেনসিল টুকরো করে স্পট মার্কার বানানো যায়। এর গ্রাফাইট থেকে পরীক্ষাগারে লুব্রিকেন্ট বানানো যায়। প্যান্টের জিপার আটকে গেলে খুলতে ব্যবহার করা যায়। কোনো কিছু বাজাতে পেনসিল কাজে লাগাতে পারেন প্রভৃতি।

২. আমি যদি মঙ্গল থেকে আসি তাহলে আমি হব এলিয়েন। পৃথিবীর সবকিছু আমার কাছে এলিয়েন মনে হবে। সমস্যাগুলোও তাই। সমস্যা আগে বিশ্লেষণ করতে পরীক্ষাগারে ছুটতে হবে।

৩. সৃজনশীল উপায়ে ঘড়ি ভাঙতে হলে শুধু ব্যাটারি খুলে নিলেই হবে।  ব্যাটারি না থাকলেও ঘড়ি প্রতিদিন দুবার সঠিক সময় দেখাবে।

৪. ডিস্ক কোনদিকে ঘুরছে বুঝতে ডিস্কের ওপর একটি পিন ছেড়ে দিলে তা ধরতে পারবেন।

৫. ফাঁস বের করার সূত্র হচ্ছে, লুপের সংখ্যা সমান এন বাই টু মাইনাস এক্স। এক্ষেত্রে যাঁরা গণিতে দক্ষ তাঁরা ভালো বলতে পারবেন।

৬. ফোন ডিজাইনের জন্য বিশেষ ভাইব্রেটর, হার্ডওয়্যার ও সফটওয়্যার ব্যবহার করতে হবে যা শ্রবণ প্রতিবন্ধীর জন্য সহায়ক হবে।

৭. এলিভেটর নকশার জন্য প্রচলিত পদ্ধতির সঙ্গে আর কী কী করা যায় তা নিয়ে ভাবতে হবে। যেমন এলিভেটরে যাঁরা চড়বেন তাঁদের জন্য বিশেষ ব্যবস্থা নিতে হবে।

৮. আপনারা কেন আমাকে চাকরিতে নেবেন না তার কারণ হচ্ছে এই প্রতিষ্ঠানটিকে আরও বড় হতে দিতে চান না তাই।

৯. দুঃখিত আমি এই পড়াশোনা করেছি অন্য ক্ষেত্র নিয়ে। তবে এটি সম্ভবত রিকয়েল গতির সঙ্গে সম্পর্কিত। পদার্থবিদদের সাহায্য দরকার হবে।

১০. মাইক্রোসফটের পণ্যের নাম হচ্ছে মাইক্রোসফট ওয়ার্ড, পাওয়ার পয়েন্ট, এক্ষের স্পেয়াডশিট, উইন্ডোজ ৯৭, ৯৮, ভিস্তা, উইন্ডোজ ৭, উইন্ডোজ ৮, ইন্টারনেট এক্সপ্লোরার, উইন্ডোজ ফোন ওএস প্রভৃতি।