প্রতিবন্ধীদের জন্য ইলেকট্রনিক পাঠ্যবই

.
.

ভাস্কর ভট্টাচার্য পোষ মানিয়ে নিয়েছেন দৃষ্টিশক্তির প্রতিবন্ধকতাকে। দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী এবং ক্ষীণ দৃষ্টিপ্রতিবন্ধীদের জন্য তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তির (আইসিটি) ব্যবহারকে সহজ করতে নিরলস কাজ করে যাচ্ছেন তিনি। ‘জস ফর উইন্ডোজ’ সফটওয়্যার ব্যবহার করে ল্যাপটপের কি-বোর্ড চেপে দক্ষ হাতে ব্যবহার করছেন প্রযুক্তি। ফেসবুক থেকে শুরু করে ই-মেইল, স্কাইপ ব্যবহার করছেন সাবলীলভাবেই। এমনকি মোবাইল ফোনে রিং বেজে উঠলেই বুঝতে পারেন, কে ফোন করেছেন। বর্তমানে প্রকল্প ব্যবস্থাপক হিসেবে কাজ করছেন চট্টগ্রামের বেসরকারি সংস্থা ইয়ং পাওয়ার ইন সোশ্যাল অ্যাকশনে (ইপসা)। এ ছাড়া তিনি ডিজিটাল অ্যাকসেসিবল ইনফরমেশন সিস্টেমের (ডেইজি) একজন প্রতিনিধি। ঢাকায় ইপসার শাখা কার্যালয়ে ৫ আগস্ট কথা হয় তাঁর সঙ্গে। ঢাকায় এসেছেন ভিসা নিতে। আগামী সেপ্টেম্বরের প্রথম সপ্তাহে যাবেন তুরস্কের রাজধানী ইস্তাম্বুলে। দি ইনফরমেশন সোসাইটি উদ্ভাবনী তহবিল (আইএসআইএফ) এশিয়ার দেওয়া একটি পুরস্কার গ্রহণ করতে যাবেন সেখানে। দৃষ্টিপ্রতিবন্ধীদের জন্য মাল্টিমিডিয়া ডেইজি মানের ই-বুক তৈরির জন্য ইপসা পেয়েছে এ পুরস্কার। প্রাথমিক পর্যায়ের ৩৩টি বইকে ই-বুকে রূপান্তর করা হয়েছে। এই বইগুলো প্রতিবন্ধীরা ব্যবহার করতে পারবেন।

ভাস্কর ভট্টাচার্য
ভাস্কর ভট্টাচার্য

ভাস্কর জানান, দৃষ্টিপ্রতিবন্ধীদের শিক্ষা নেওয়ার পদ্ধতিকে সহজ করতে প্রথম থেকে পঞ্চম শ্রেণি প্রর্যন্ত সব পাঠ্যপুস্তককে মাল্টিমিডিয়া বইতে রূপান্তর করা হয়েছে। ‘আমরা নতুন বছরের শুরুতে সকল দৃষ্টিপ্রতিবন্ধীর হাতে বই তুলে দিতে চাই। বাংলাদেশে নীরবে একটি বিপ্লব হচ্ছে, প্রযুক্তিবিপ্লব। এ সময়ে এসে প্রতিবন্ধীরা কারও করুণার পাত্র কিংবা গলগ্রহ হয়ে থাকতে চায় না। তারা কোনো কিছুতেই অপারগ নন। তাদেরকে পর্যাপ্ত সুযোগ দিলে নিজেদের মেলে ধরতে পারে। “সবার জন্য শিক্ষা” নিশ্চিত করতে হলে সবাইকে বই পড়ার সুযোগ দিতে হবে।’ বললেন ভাস্কর।

প্রাথমিক পর্যায়ের পাঠ্যবইগুলো ই–বুকে রূপান্তরিত হয়েছে, ফলে প্রতিবন্ধীরা পড়াশোনা করতে পারছেন সহজেই
প্রাথমিক পর্যায়ের পাঠ্যবইগুলো ই–বুকে রূপান্তরিত হয়েছে, ফলে প্রতিবন্ধীরা পড়াশোনা করতে পারছেন সহজেই

দৃষ্টিপ্রতিবন্ধীদের জন্য প্রাথমিক শিক্ষার বই
ভাস্কর ভট্টাচার্যের নেতৃত্বে ১০ জনের একটি দল ছয় মাসে প্রতিবন্ধীদের জন্য প্রাথমিক শ্রেণির ৩৩টি বইয়ের ইলেকট্রনিক বই তৈরি করেছেন। এই দলের চারজন দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী ও দুজন শারীরিক প্রতিবন্ধী। জাতীয় ই-তথ্য কোষে পাওয়া যাবে বইগুলো www.infokosh.gov.bd। ডিজিটাল ব্রেইল সফটওয়্যারের মাধ্যমে প্রিন্ট করে পড়াও যাবে বইগুলোর ব্রেইল সংস্করণ। অডিও সংস্করণগুলো শুনে পড়া যাবে, আর মাল্টিমিডিয়া সংস্করণগুলো দেখেও পড়া যাবে এগুলো। এ ছাড়া বইগুলোর লেখা ইউনিকোডে আছে, যা নন-ভিজিবল ডেস্কটপ অ্যাকসেস (এনভিডিএ) সফটওয়্যারের মাধ্যমে ব্যবহার করতে পারবে দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীরা। ভাস্কর বলেন, বইগুলো সাধারণ শিক্ষার্থীরাও ব্যবহার করতে পারবে। বইগুলো অ্যান্ড্রয়েড ও আইফোনে ডেইজি গো রিড অ্যাপের মাধ্যমে বাজানো যাবে। এ ছাড়া মাল্টিমিডিয়া শ্রেণিকক্ষেও বইগুলো ব্যবহার করা যাবে অনেক সহজ উপায়ে।
ইপসা এ কাজের জন্য ২০১৩ সালে অ্যাকসেস টু ইনফরমেশন (এটুআই) প্রকল্পের ডিজিটাল উদ্ভাবনী তহবিল থেকে অনুদানও পেয়েছে। প্রাথমিক পর্যায়ের পর সরকারি সহযোগিতায় মাধ্যমিক স্তরের বইগুলোকেও ই-বুকে রূপান্তর করার প্রক্রিয়া চলছে।
ভাস্কর ভট্টাচার্য আরও বললেন, ‘উচ্চমাধ্যমিকের বইগুলো প্রকাশ করেন বিভিন্ন প্রকাশক। আমরা সবার অনুমতি পাচ্ছি না, যাঁরা অনুমতি দিয়েছেন তাঁদের বইগুলোকে ই-বুক করা হচ্ছে। এদিকে ট্রাস্টেড ইন্টারমিডিয়ারি গ্লোবাল অ্যাকসেসেবল রিসোর্সেস (টাইগার) প্রকল্পের মাধ্যমে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের দুই লাখ বইকে ডিজিটাল টকিং বুকে তৈরি করা হচ্ছে। এরই মধ্যে শুধু বাংলাদেশিদের জন্য বানানো হয়েছে শেক্সপিয়ারের হ্যামলেট-এর ই-বুক সংস্করণ। সম্পূর্ণ বিনা মূল্যে যেকোনো দৃষ্টিপ্রতিবন্ধীই এ বই ব্যবহার করতে পারবেন।

ভাস্কর এবং তাঁর দলের চাওয়াটা হলো, প্রযুক্তির সুবিধা নিয়ে ধীরে ধীরে প্রতিবন্ধীদের জন্য সব ধরনের বই ও ডিজিটাল শিক্ষা উপকরণ তৈরি করা, যাতে প্রতিবন্ধীদের শিক্ষা গ্রহণের বিষয়টা সহজ হয়।