আরও বিস্তার ঘটছে ইবোলা ভাইরাসের

বন্য প্রাণী ও মানব পর্যায়ে যেভাবে ছড়ায় ইবোলা ভাইরাস
বন্য প্রাণী ও মানব পর্যায়ে যেভাবে ছড়ায় ইবোলা ভাইরাস

পশ্চিম আফ্রিকায় মহামারি আকারে ছড়িয়ে পড়া ইবোলা ভাইরাসের আরও বিস্তার ঘটতে যাচ্ছে। এতে এরই মধ্যে দেড় হাজারের বেশি মানুষের মৃত্যু হয়েছে। আর বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) গতকাল বৃহস্পতিবার হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেছে, পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে আসার আগে এই ভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা ২০ হাজার ছাড়িয়ে যেতে পারে।
আফ্রিকা থেকে ইবোলা ভাইরাস বাইরেও পৌঁছে গেছে। এর মধ্যে লাইবেরিয়াতেই আক্রান্ত হয়ে দেশে ফিরেছেন দুই মার্কিন নাগরিক। এঁদের একজন চিকিৎসক, অন্যজন মিশনারি। তবে তাঁদের দুজনই চিকিৎসা নিয়ে সুস্থ হয়েছেন। তবে ইবোলায় আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন স্পেনের এক যাজক।
আর ভারতেও ইবোলা পৌঁছে গেছে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। গত মঙ্গলবার লাইবেরিয়া থেকে নয়াদিল্লিতে ফেরেন ১৭ ভারতীয় নাগরিক। তাঁদের পরীক্ষা করে একজন ইবোলা আক্রান্ত বলে সন্দেহ করা হয়। ইবোলার অন্যতম লক্ষ্য জ্বর ও গলাব্যথায় ভুগছেন তিনি। তাঁকে বিমানবন্দরের চিকিৎসা বিভাগে রেখে সেবা দেওয়া হচ্ছে। আর ইবোলার বিষয়টি নিশ্চিত হওয়ার জন্য তাঁর রক্তের নমুনা পরীক্ষা করতে পাঠানো হয়েছে।
প্রকৃতিতে ইবোলা ভাইরাসের মূল বাহক বাদুড়, বিশেষ করে ফলভুক বাদুড়। বাদুড় থেকে এই ভাইরাস ছড়ায় অন্যান্য বন্য প্রাণী যেমন হরিণ ও শিম্পাঞ্জিতে। এরপর ওই সব প্রাণীর সংস্পর্শে বা সরাসরি বাদুড় থেকে মানুষ ইবোলা ভাইরাসে আক্রান্ত হতে পারে। আবার ইবোলায় আক্রান্ত মানুষের ঘাম, লালা বা শরীরের অন্যান্য তরলের সংস্পর্শে আক্রান্ত হতে পারে অন্যরা। তবে ইবোলা ভাইরাস বাতাসের মাধ্যমে ছড়ায় না।
ইবোলায় আক্রান্ত হওয়ার পর আট দিনের মধ্যে লক্ষণ প্রকাশ পায়। তবে ক্ষেত্রবিশেষে তা দুই থেকে ২১ দিনের মধ্যেও হতে পারে। প্রাথমিক লক্ষণ জ্বর, মাথাব্যথা, মাংসপেশির খিঁচুনি ও পেটব্যথা অনুভূত হতে পারে। কখনো কখনো গলাব্যথা, হেঁচকি ওঠা ও শ্বাস-প্রশ্বাসের কষ্টও হতে পারে। প্রাথমিক লক্ষ্য প্রকাশ পাওয়ার পাঁচ থেকে সাত দিনের মাথায় শরীরের বিভিন্ন অংশে ফোসকা ওঠা ও বমি, বিশেষ করে রক্তবমি হতে পারে। দ্রুত চিকিৎসায় সুস্থ করা না গেলে লক্ষণ দেখা দেওয়ার সাত থেকে ১৬ দিনের মাথায় রোগীর মৃত্যু হতে পারে।
ইবোলা ভাইরাসে প্রথম আক্রান্তের ঘটনা শনাক্ত করা হয় ১৯৭৬ সালে সুদান (বর্তমান দক্ষিণ সুদান) ও কঙ্গো প্রজাতন্ত্রে। চলতি বছর পশ্চিম আফ্রিকার লাইবেরিয়া, সিয়েরা লিওন, গায়ানা ও নাইজেরিয়ায় এই ভাইরাস ছড়িয়ে পড়েছে মহামারি আকারে।
ডব্লিউএইচওর হিসাব অনুযায়ী, ১৯৭৬ সালের পর থেকে এ পর্যন্ত ইবোলায় মারা গেছে এক হাজার সাত শতাধিক মানুষ। এর মধ্যে শুধু চলতি বছরের মহামারিতে মারা গেছে প্রায় দেড় হাজার। এর মধ্যে লাইবেরিয়ার অবস্থা সবচেয়ে ভয়াবহ। সেখানে এ পর্যন্ত মারা গেছে ৬২৪ জন এবং আক্রান্ত হয়েছে এক হাজার ৮২ জন।
ইবোলায় আক্রান্ত ব্যক্তিদের মধ্যে ৫০ থেকে ৯০ শতাংশের মৃত্যু হয়। ডব্লিউএইচওর তথ্য অনুযায়ী চলতি বছর তিন হাজার ৬৯ জন আক্রান্ত হওয়ার খবর মিলেছে। তবে সংস্থাটির আশঙ্কা, এই সংখ্যা দুই থেকে চার গুণ বেশি হতে পারে। কারণ, আফ্রিকার প্রত্যন্ত অনেক অঞ্চলে মানুষ আক্রান্ত হলেও সে খবর পাওয়া যাচ্ছে না। আর এই ভাইরাস পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে আসার আগে আক্রান্তের সংখ্যা ২০ হাজার ছাড়িয়ে যেতে পারে।
ডব্লিউএইচওর মতো মার্কিন রোগ নিয়ন্ত্রণকেন্দ্রও (সিডিসি) আশঙ্কা করছে, ইবোলার আরও বিস্তার ঘটতে পারে। সংস্থাটির পরিচালক টম ফ্রাইডেন গতকাল বলেছেন, ‘আক্রান্তের ঘটনা বাড়ছে। আশা করেছিলাম, এ কথা আমাকে বলতে হবে না। কিন্তু এর পরও বলতে হচ্ছে, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসার আগে তা আরও ভয়াবহ আকার ধারণ করতে পারে।’
টম ফ্রাইডেনের মতে, ইবোলা মহামারি আকারে ছড়িয়ে পড়ার জন্য কিছু ভুল ধারণাও দায়ী। আর চিকিৎসকদের আন্তর্জাতিক সংগঠন ডক্টরস উইদাউট বর্ডারস বলেছে, পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার জন্য এ পর্যন্ত যেসব পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে, তা একেবারেই অপর্যাপ্ত। এই অবস্থায় ঘানার রাজধানী আক্রায় গতকাল বৈঠক করেছেন পশ্চিম আফ্রিকার বিভিন্ন দেশের স্বাস্থ্যমন্ত্রীরা।
কিন্তু এখন পর্যন্ত ইবোলার কোনো বৈজ্ঞানিক চিকিৎসা নেই। গবেষকেরা দু-একটি ভ্যাকসিন (যেমন যুক্তরাষ্ট্রে জিম্যাপ) আবিষ্কার করেছেন, তবে তা কার্যত তেমন কার্যকর নয়। তবে একটা উপায় বের করতে গবেষণাগারে ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন বিভিন্ন দেশের বিজ্ঞানীরা।