সুইটি সৃষ্টির নেপথ্যে

১০ বছরের ভারচুয়াল শিশু সুইটি
১০ বছরের ভারচুয়াল শিশু সুইটি

সুইটির কথা নিশ্চয়ই আপনাদের অনেকের জানা। ভারচুয়াল জগতের আলোচিত এক শিশু চরিত্র সুইটি। যাকে অনলাইনে শিশুদের যৌন নিপীড়ন বন্ধের উদ্দেশ্যে ব্যবহার করেছিল নেদারল্যান্ডসভিত্তিক দাতব্য সংস্থা তেরে দেস হোমস। ১০ বছর বয়সী ফিলিপাইনের এক শিশু হিসেবে ভারচুয়াল সুইটিকে তৈরি করেছিল নেদারল্যান্ডসের আমস্টারডামভিত্তিক সংস্থা লেমজ।


সংস্থাটি গত বছরে ১০ সপ্তাহের অনুসন্ধান করে ৭১ টি দেশের এক হাজার যৌন নিপীড়ককে চিহ্নিত করেছে, যারা অর্থের বিনিময়ে ওয়েব ক্যামের মাধ্যমে সুইটিকে নিপীড়ন করার চেষ্টা চালিয়েছে।

শুরু হয়েছে নিপীড়কদের বিচার
এক খবরে বিবিসি জানিয়েছে, সুইটির নিপীড়কদের বিচার শুরু হয়েছে। এরই মধ্যে অস্ট্রেলিয়ার এক ব্যক্তিকে সুইটিকে নির্যাতনের জন্য প্রথম কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত। অর্থের বিনিময়ে ওয়েব ক্যামের সামনে সুইটিকে যৌন আচরণ করতে বলেছিলেন স্কট রবার্ট হ্যানসেন নামের ওই অস্ট্রেলীয় নাগরিক। ব্রিসবেনের ডিসট্রিক্ট কোর্টে তাঁর বিরুদ্ধে তিনটি অভিযোগ আনা হয়। আদালত তাঁকে দুই বছরের কারাদণ্ড দিয়েছেন। কিন্তু এরই মধ্যে আট মাস কারাভোগ করায় তাকে জেল খাটতে নাও হতে পারে। এর মধ্যে এক বছর তাকে আচরণগত পরিবর্তন ও চিকিৎসার মধ্য যেতে হবে।

সুইটি তৈরির নেপথ্যে
সৃজনশীলতাই পৃথিবী বদলে দিতে পারে। এই মূলমন্ত্র নিয়ে কাজ করছে নেদারল্যান্ডসের আমস্টারডামভিত্তিক ক্রিয়েটিভ ডিজাইন সংস্থা লেমজ। সুইটিকে তৈরির জন্য এ বছর নেদারল্যান্ডসের ডিজাইন বিভাগের শীর্ষ পুরস্কার পেয়েছে প্রতিষ্ঠানটি। নেদারল্যান্ডসভিত্তিক দাতব্য সংস্থা তেরে দেস হোমসকে সাহায্য করতে এবং ওয়েবক্যামে শিশু যৌন নিপীড়নের বিরুদ্ধে সচেতনতা তৈরি ও নিপীড়কদের ধরতে এই প্রকল্প শুরু করে লেমজ।

শীর্ষ ডিজাইন নির্বাচনের দায়িত্বে ছিলেন নেদারল্যান্ডসের বিজ্ঞান গবেষণাপ্রতিষ্ঠান ডিএসএমের চেয়ারম্যান অ্যাটজো নিকোলাই। তিনি এ প্রসঙ্গে বলেন, ‘ডিজাইন আমাদের জন্য কী করতে পারে সুইটি কেবল তার একটি বিশ্বাসযোগ্য উদাহরণ।’

লেমজ সদস্যদের দাবি, উন্নত দেশগুলোর অনেক মানুষ দরিদ্র দেশের শিশুদের ওয়েব ক্যামের সামনে যৌন আচরণের জন্য অর্থ খরচ করে। লেমজ থ্রিডি কম্পিউটার মডেল ব্যবহার করে ১০ বছর বয়সী ফিলিপাইনের শিশু হিসেবে সুইটির নকশা করেছিল। এই ভারচুয়াল শিশু তৈরিতে সত্যিকারের শিশুদের মুখভঙ্গি ও আচরণ কেমন হয় তা ব্যবহার করা হয়।

নিপীড়কদের ধরতে এ দলের সদস্যরা অনলাইন চ্যাট রুমে ঢুকে সুইটি সেজে চ্যাট করতে থাকেন এবং মুখভঙ্গির বিষয়টি নিয়ন্ত্রণ করে সুইটির সঙ্গে কে চ্যাট করছেন তাকে চিহ্নিত করার চেষ্টা করেন। ২০১৩ সালের মে মাস থেকে শুরু করে ১০ সপ্তাহে ৭১টি দেশের এক হাজারেরও বেশি নিপীড়ককে চিহ্নিত করা হয় এবং তাদের পরিচয় ইন্টারপোলের কাছে হস্তান্তর করা হয়। নিপীড়কদের ধরা শুরু হলে এই খবর সংবাদমাধ্যমগুলোতে গুরুত্বের সঙ্গে প্রকাশিত হয়।

লেমজের এগিয়ে আসা
অবশ্য এ প্রকল্পে জড়িত থাকার কথা প্রথমে প্রকাশ করতে রাজি ছিল না নেদারল্যান্ডসের লেমজ টিম। কিন্তু তাদের অভিজ্ঞতার কথা জানানোর জন্য জাতিসংঘের অনুরোধের পর তারা জনসমক্ষে আসে। লেমজের সহ-প্রতিষ্ঠাতা মার্ক ওয়ার্ডি এক বিবৃতিতে বলেছেন, ‘আমরা মনে করি ব্যবসা ও ক্রিয়েটিভ সংস্থাগুলোকে তাদের প্রতিভা ও সম্পদ পৃথিবীকে আরও সুন্দর করে গড়ে তোলার কাজে ব্যবহার করা উচিত। সুইটির এই অভিযান প্রমাণ করে এই শিল্পের সঙ্গে সংশ্লিষ্টতা না থাকলেও ক্রিয়েটিভ প্রতিষ্ঠানগুলো বৈশ্বিক সমস্যা সমাধানে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে।’

ইন্টারনেটে নজরদারি বাড়াতে হবে
বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সুইটি অপারেশনে হ্যানসেনের বিচারটিই প্রথম বিচার বলে মনে করা হচ্ছে। তেরে দেস হোমসের এই কর্মসূচির প্রধান হ্যান্স গাইট বলেন, ‘আমি ও আমার সহকর্মীরা সব সময় মনে করি নিজস্ব অপারেশন চালানোর সময় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী তথ্য ব্যবহার করবে। তারা এখন নিশ্চয়ই জানে, আমরা তাদের যে তথ্য দিয়েছি তা কতখানি প্রয়োজনীয়।’

তাঁর মতে, পুলিশকে আরও বেশি সক্রিয় হতে হবে এবং এ ধরনের নিপীড়কদের ধরার একমাত্র পথ হচ্ছে ইন্টারনেটে নজরদারি করে তাদের খুঁজে বের করা। ২০১৩ সালে এই প্রকল্পে মাত্র চারজন গবেষকের একটি দল ১০ সপ্তাহ কাজ করেছিল। ফিলিপাইনের একটি মেয়ে সেজে তারা চ্যাট রুমে বসে কখনো ভারচুয়াল চরিত্র হাজির করে ওয়েব ক্যামের মাধ্যমে দেখিয়েছে।

নিপীড়কদের আচরণ যেন দুঃস্বপ্ন

নিপীড়কদের ধরতে কাজ করেছেন এমন এক গবেষকের সঙ্গে কথা বলেছে বিবিসি। নাম প্রকাশ না করার শর্তে তিনি বিবিসিকে নিপীড়কদের সম্পর্কে তথ্য দিয়েছেন। তিনি সুইটির অপারেটর সেজে নিপীড়কদের সঙ্গে চ্যাট করেছিলেন। ওই গবেষক বলেন, ‘কয়েকজন এমন বাজেভাবে যোগাযোগ করেছে, যা রীতিমতো দুঃস্বপ্ন।’ স্কট হ্যানসেন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ওই লোকটি খুব সরাসরি সুইটিকে যৌন সম্পর্কের প্রস্তাব দিয়েছে। হ্যানসেনের মতো লোকের সঙ্গে আলাপচারিতার পর রাতে ঘুমাতে যাওয়া সত্যিই দুঃস্বপ্নের ব্যাপার।’