যন্ত্রের জন্য মানুষ হওয়ার পরীক্ষা!

সৃজনশীলতার পরীক্ষায় পাস করলেই কেবল রোবটের বুদ্ধি মানুষের কাছাকাছি আসবে
সৃজনশীলতার পরীক্ষায় পাস করলেই কেবল রোবটের বুদ্ধি মানুষের কাছাকাছি আসবে

রোবট বা যন্ত্রের বুদ্ধিমত্তা মানুষের কাছাকাছি নিয়ে আসতে কাজ করছেন গবেষকেরা। কিন্তু কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার যন্ত্রগুলোর বুদ্ধি মানুষের সমপর্যায়ে এসেছে কি না, তা কীভাবে বোঝা যাবে? গবেষকেরা বলছেন, রোবট যদি মানুষের মতো সৃজনশীল হতে পারে, তবেই তাকে বুদ্ধিমান যন্ত্র বলা যাবে।
সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের জর্জিয়া ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজির গবেষক অধ্যাপক মার্ক রিডল রোবটের কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা মানুষের পর্যায়ে পৌঁছেছে কি না, তা পরীক্ষার জন্য নতুন একটি পরীক্ষাব্যবস্থার প্রস্তাব দিয়েছেন। তাঁর প্রস্তাবিত পদ্ধতিতে যন্ত্রকে সৃজনশীলতার পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে হবে। রোবটকে নিজে থেকে বিশ্বাসযোগ্য কবিতা লেখা কিংবা কাল্পনিক গল্প লেখার দক্ষতা অর্জন করতে হবে।
বর্তমানে গবেষকেরা রোবটের বুদ্ধিমত্তা পরীক্ষার জন্য ‘টিউরিং টেস্ট’ করেন। বিজ্ঞানী অ্যালান টিউরিংয়ের নাম অনুসারে এই পরীক্ষার নামকরণ করা হয়েছে। এই পদ্ধতিতে যন্ত্রকে কথোপকথন বা আলোচনায় অংশ নিতে হয় এবং বিশ্বাসযোগ্যভাবে নিজেকে উপস্থাপন করতে হয়। যন্ত্রের আলাপচারিতার দক্ষতা বিচারকেরা পর্যবেক্ষণ করেন। 
রোবটের বুদ্ধিমত্তা পরীক্ষার জন্য সৃজনশীল এ পদ্ধতিটিকে গবেষকেরা বলছেন, ‘লাভলেস ২.০ পরীক্ষা’।
উনিশ শতকের নজরকাড়া উদ্ভাবনগুলোর একটি ছিল গণিতবিদ ও দার্শনিক চার্লস ব্যাবেজের ডিফারেন্স মেশিন বা অ্যানালিটিক্যাল ইঞ্জিন। এই যন্ত্রকে আধুনিক গণনাযন্ত্র বা কম্পিউটারের ভিত্তি বলা হয়। এর উদ্ভাবক ব্যাবেজ হলেও এই যন্ত্রে প্রাণসঞ্চার করেছিলেন ইংরেজ লেখিকা ও শখের গণিতবিদ অগাস্টা অ্যাডা লাভলেস। তাঁকে বিশ্বের প্রথম প্রোগ্রামারও বলা হয়। তাঁর নামানুসারে রোবটের বুদ্ধিমত্তা পরীক্ষার জন্য বিজ্ঞানীরা ‘লাভলেস টেস্ট’ শুরু করেন ২০০১ সালে। এই পরীক্ষায় কৃত্রিম বুদ্ধিমান যন্ত্রকে নিজের সৃষ্টির কথা তুলে ধরতে হয়। লাভলেস টেস্টের পরবর্তী সংস্করণ এই লাভলেস ২.০। 
গবেষক রিডল বলেন, এই পরীক্ষার জন্য কৃত্রিম বুদ্ধিমান যন্ত্রকে তার সৃজনশীলতার পরীক্ষা দিয়ে কোনো ছবি আঁকতে হবে কিংবা মানুষের মতো কল্পনা করে কবিতা লিখতে হবে।

তিনি আরও বলেন, ‘সৃজনশীলতার বিষয়টি যদিও মানুষের বুদ্ধিমত্তার অনন্য বৈশিষ্ট্য নয়, কিন্তু এটি বুদ্ধির অন্যতম ছাপ।’
যদিও গল্প লেখা কিংবা ছবি আঁকার মতো অ্যালগরিদম বা সফটওয়্যার তৈরি হয়েছে কিন্তু গবেষক রিডলের মতে, এখন পর্যন্ত কোনো সফটওয়্যার লাভলেস ২.০ পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে পারেনি।
অবশ্য গবেষক রিডলের এই পরীক্ষা নিয়ে অন্যান্য গবেষকের মিশ্র প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়। সারে বিশ্ববিদ্যালয়ের কম্পিউটার বিশেষজ্ঞ অ্যালান উডওয়ার্ড বলেন, ‘নতুন এ পরীক্ষাটি উন্নত যন্ত্রের সঙ্গে মানুষের পার্থক্য বোঝতে সাহায্য করবে। কেননা, সৃজনশীলতা এমন একটি বৈশিষ্ট্য, যা মানুষকে যন্ত্রের থেকে আলাদা করেছে।’
লন্ডন ফিউচারিস্ট নামের গবেষণাপ্রতিষ্ঠানের চেয়ারম্যান ডেভিড উড আবার এ পরীক্ষার বিষয়ে একমত নন। তাঁর মতে, মানুষ সৃজনশীলতার দিক থেকে কৃত্রিম বুদ্ধিমানদের চেয়ে পৃথক, এটি জনপ্রিয় একটি ধারণা। অন্যদিকে রোবট কেবল তার প্রোগ্রাম অনুসরণ করতে পারে। কিন্তু এটি ঠিক নয়। কিছু রোবট আছে যা আবেগ বুঝতে পারে এবং গান লিখতে পারে।
এর আগে এ বছরের জুন মাসে ‘ইউজিন গুস্টম্যান’ নামের একটি কম্পিউটার প্রোগ্রাম বিশ্বে প্রথমবারের মতো টিউরিং টেস্টে উত্তীর্ণ হয়। যুক্তরাজ্যের রিডিং বিশ্ববিদ্যালের গবেষকেরা কম্পিউটারের কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা নির্ণয়ের জন্য টিউরিং টেস্ট নেওয়ার আয়োজন করেছিল। রাশিয়ার গবেষকদের তৈরি ‘ইউজিন গুস্টম্যান’ নামের প্রোগ্রামটি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ব্যবহার করে পাঁচ মিনিটের বেশি সময় মানুষের মতো আলোচনা চালিয়ে যেতে সক্ষম হয়। অবশ্য এই প্রোগ্রামটির সফলতা নিয়ে বিতর্ক রয়েছে।