ই-মেইল বেদখল হলে

ই-মেইল বেদখল যেন না হয়, সে জন্য আগেই সচেতন হোন। মডেল: অরিন। ছবি: অধুনা
ই-মেইল বেদখল যেন না হয়, সে জন্য আগেই সচেতন হোন। মডেল: অরিন। ছবি: অধুনা

হঠাৎ করেই কাছের বন্ধুর ঠিকানা থেকে ই-মেইল বার্তা পেয়ে আঁতকে উঠলেন। বার্তা অনুযায়ী বন্ধু এখন হাইতির কোনো এক স্থানে আটকে আছেন! সেখানে তাঁর সঙ্গে থাকা পাসপোর্ট, মোবাইল ফোন, অর্থ—সবকিছুই হারিয়ে ফেলেছেন! এমন বিপদে কোনো এক স্থান থেকে মেইল করতে পেরেছেন তিনি। তাঁর এখন অর্থের প্রয়োজন। এমন ই-মেইল পেয়ে সত্যিই যে কেউ আতঙ্কিত হয়ে পড়তে পারেন। সত্যিই যদি এমন ঘটে যায়? তখন কি সব ভাবনাচিন্তা ঝেড়ে ফেলে বন্ধুকে সাহায্য করবেন, নাকি এটি আসলেই সত্য কি না, সেই খোঁজ নেবেন—এমন দ্বিধাদ্বন্দ্বে পড়েন অনেকেই। এক্ষেত্রে প্রথম কাজটি হলো যাঁর কাছ থেকে মেইলটি এসেছে, তাঁর কোনো ফোন নম্বর থাকলে সেটিতে কল করা। তাঁকে না পেলে ওই ব্যক্তির পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করে তাঁর প্রকৃত অবস্থান জেনে নিতে হবে।
আজকাল এমন ই-মেইল প্রায়ই দেখা যায়। যাঁর ঠিকানা থেকে মেইলটি পরিচিতজনদের কাছে যায়, তিনি বিব্রতই হন। আসলে তাঁর নিজেরও কিছু করার ছিল না।কেননা তাঁর ই-মেইলের পাসওয়ার্ড চুরি হয়েই এমনটা ঘটেছে। তাঁর ই-মেইল বেদখল(হ্যাকড) করে হ্যাকাররা তাঁর নামে মেইল পাঠাচ্ছে।
শুধু যে এমন ই-মেইলই আসবে তা কিন্তু নয়। অনেক সময় বিভিন্ন দেশ থেকে ব্যবসায়িক সহযোগী হওয়ারও প্রস্তাব পেয়ে ই-মেইল পেতে পারেন! সেখানে থাকে কোনো একজন অনেক দিন চাকরি করেছেন, এখন তাঁর হাতে অনেক অর্থ আছে! যিনি এখন আপনার সঙ্গে সহযোগী হিসেবে কোনো ধরনের বিনিয়োগ ছাড়াই ব্যবসা করতে আগ্রহী! অথবা তাঁর নিজের আত্মীয় মারা গেছেন, রেখে গেছেন বিপুল সম্পত্তি। এখন এই অর্থ তিনি আপনার মাধ্যমে কাজে লাগাতে চান! এসব ক্ষেত্রে অর্থের পরিমাণ বিপুল বলা হয়, যাতে করে যিনি ই-মেইলটি পাবেন, তিনি বিভ্রান্ত হতেই পারেন।
সাধারণত হ্যাকাররা ই-মেইলের পাসওয়ার্ড চুরি করে ওই ই-মেইলের সঙ্গে যুক্ত থাকা সব ব্যবহারকারীকেই এ ধরনের একই মেইল পাঠিয়ে দেয়। এটি একটি চক্র, যারা এসব কাজের মাধ্যমে হাতিয়ে নিতে পারে ক্রেডিট কার্ডের তথ্য, ব্যাংক তথ্য ইত্যাদি। এসব ঘটনা জানার পরেই প্রথম কাজটি হবে দ্রুত ই-মেইলে গিয়ে পাসওয়ার্ডটি পরিবর্তন করা। এমনটাই জানা গলেবিশেষজ্ঞদের কাছ থেকে। তাঁদের মতে, ‘যদি দেখেন যে আপনার পাসওয়ার্ড দিয়ে ই-মেইলে ঢোকা যাচ্ছে না, তা হলে দ্রুত পাসওয়ার্ড ভুলে গেছেন নামে যে লিংক থাকে, সেখানে গিয়ে পরবর্তী কাজগুলো করুন।’
এসব ক্ষেত্রে ই-মেইল খোলার সময় যেসব নিরাপত্তা প্রশ্ন ও উত্তর যোগ করেছেন এবং যে একটি বাড়তি ই-মেইল যোগ করেছেন, সেখানে নতুন পাসওয়ার্ড দেওয়ার জন্য একটি লিংক চলে আসবে। ওই লিংকে গিয়ে দ্রুত পাসওয়ার্ডটি পরিবর্তন করে নিন। সামাজিক যোগাযোগের জনপ্রিয় ওয়েবসাইট ফেসবুকেও একই ঘটনা ঘটতে পারে। এমনই এক ঘটনার মুখোমুখি হয়েছেন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী মোশাহিদ আনাম। তিনি জানালেন, তাঁর বন্ধু তালিকায় থাকা এক পরিচিত বন্ধুর ফেসবুক অ্যাকাউন্ট থেকে বলা হয়, তিনি জাপানে রয়েছেন এবং তাঁর জরুরি টাকা দরকার। পারলে যেন তখনই টাকা পাঠানোর ব্যবস্থা করা হয়। সম্ভব হলে ক্রেডিট কার্ডে নম্বরটি যেন পাঠিয়ে দেন! এমন বার্তা পেয়ে একটু অবাকই হলেন মোশাহিদ। দ্রুত কয়েকজনের মাধ্যমে খবর নিয়ে জানতে পারেন, সেই বন্ধু এখন দেশে নেই সেটি সত্যি, তবে তিনি জাপান নয় বরং ভারতে গিয়েছেন ঘুরতে! তখনই মোশাহিদ বুঝে গেলেন, বন্ধুর ফেসবুক অ্যাকাউন্টটি হ্যাক হয়েছে।
ই-মেইলের মতো ফেসবুকের ক্ষেত্রেও একই পদ্ধতি অবলম্বনের পরামর্শ দিয়েছেন নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞ। তিনি জানান, যদি এমন হয় শুরুতে যাঁর ই-মেইল কিংবা ফেসবুক থেকে বার্তা এসেছে, তাঁকে দ্রুত জানাতে হবে। পাসওয়ার্ড পরিবর্তনের পরামর্শ দিতে হবে। এ ছাড়া এসব থেকে সুরক্ষিত থাকতে নিয়মিত কয়েক মাস পর পর পাসওয়ার্ড পরিবর্তন করা উচিত। পাসওয়ার্ড দেওয়ার ক্ষেত্রে যত বড় দেওয়া যায় এবং সংখ্যা, অক্ষর, চিহ্ন (/*-+!#%) ইত্যাদি মিলিয়ে পাসওয়ার্ড দিতে পারলে ভালো হয়।
অনেকেই ই-মেইল কিংবা ফেসবুক খোলার সময় বিকল্প সঠিক ই-মেইল ব্যবহার করেন না। যদি না করে থাকেন, তা হলে এখনই বিকল্প সচল একটি ই-মেইল যুক্ত করে নিন এবং আপনার মোবাইল ফোন নম্বরটি যুক্ত করুন। এখন ই-মেইল কিংবা ফেসবুক—দুই মাধ্যমেই মোবাইল ফোন নম্বর যোগ করার সুযোগ রয়েছে। এতে করে চাইলে মোবাইল ফোনের মাধ্যমেও পাসওয়ার্ড পুনরুদ্ধার সম্ভব।