সাত তরুণের হাতে ফায়ারফক্স স্মার্টফোন

ফায়ারফক্স স্মার্টফোন
ফায়ারফক্স স্মার্টফোন

বাংলাদেশের অনেক তরুণই এখন বিশ্বের নানা অ্যাপস তৈরি কিংবা প্রোগ্রামিং প্রতিযোগিতায় অংশনিতে যাচ্ছেন আন্তর্জাতিক আসরে।বিশ্বসেরা বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান বর্তমানে সারা বিশ্বের সেরা প্রোগ্রামার বা  ডেভেলপারদের সঙ্গে বাংলাদেশিদেরও মূল্যায়ন করছে, তারও রয়েছে নানা প্রমাণ। এ রকম একটি হচ্ছে বাংলাদেশের সাতজনের কাছে আসা ফায়ারফক্স অপারেটিং সিস্টেমের ডেভেলপার সংস্করণ স্মার্টফোন। সাধারণ ব্যবহারকারীদের হাতে যখন এ স্মার্টফোন আসেনি কিংবা কোনো বাজারেও পাওয়া যায়নি, তার আগেই ডেভেলপারদের জন্য কিছু স্মার্টফোন তৈরি করে ফায়ারফক্স পরিচালনাকারী প্রতিষ্ঠান মজিলা ফাউন্ডেশন। আর নিজেদের সদস্য ডেভেলপারদের মাধ্যমে সেটি পরীক্ষা করা ও এর অ্যাপস তৈরির জন্য বিশ্বের বিভিন্ন দেশের ডেভেলপারদের এ স্মার্টফোন দেওয়া হয়। এর মধ্যে আছেন বাংলাদেশের সাতজন।ইন্টারনেট ব্যবহারের ক্ষেত্রে মজিলা ফায়ারফক্স বেশজনপ্রিয়। মজিলা ফাউন্ডেশন থেকে বর্তমানে মজিলা ফায়ারফক্স, ই-মেইল মজিলা থান্ডারবার্ডসহ সর্বশেষ ফায়ারফক্স ওএস স্মার্টফোনের বিষয়গুলো পরিচালনা করা হয়। সারা বিশ্বেই রয়েছে মজিলার স্বেচ্ছাসেবক দল।এরই অংশ হিসেবে বাংলাদেশেও বেশ সক্রিয় মজিলা বাংলাদেশ কমিউনিটি।মজিলায় যাঁরা স্থানীয়ভাবে নানা কার্যক্রম পরিচালনা করেন, তাঁদের মধ্য থেকে নির্বাচন করা হয় প্রতিনিধি। যাঁদের সংক্ষেপে বলা হয় মজিলা রিপ্রেজেনটেটিভ (রেপস)। আর সাত রেপস হলেন মাহে আলম খান, মাশকাওয়াত আহসান, রাহিদ হাসান, আশিকুর রহমান, অনিরুদ্ধ অধিকারী, মো. এনজাম হোসেন ও শফিউল আযম চৌধুরী। বাংলাদেশে মোবাইল ব্যবহারকারীর সংখ্যা ও এর ভবিষ্যৎ বাজার বিবেচনা করে মজিলা, ফায়ারফক্স ওএস সম্পর্কেমতামত পেতে গিকসফোন প্রতিষ্ঠানের কিয়ন মডেলের স্মার্টফোন আমাদের পাঠায়। মজিলার প্রায় সব প্রকল্প স্বেচ্ছাসেবকেরা পরিচালনা করে। তাই ফায়ারফক্স ওএসের ফোনটি পাঠানো হয়েছে।’ বললেন মাহে আলম খান।

২০০৫ সাল থেকে মজিলার কার্যক্রমের সঙ্গে যুক্ত মাহে আলম খান শুরুর দিকে ফায়ারফক্সে বাংলা যোগ করার কাজ করতেন। বর্তমানে তিনি ফায়ারফক্সে বাংলা বানান পরীক্ষক রক্ষণাবেক্ষণ, মজিলার বাংলা অনুবাদ প্রকল্পের প্রধান এবং মজিলা বাংলাদেশ কমিউনিটি লিড হিসেবে কাজ করছেন।

এই মুহূর্তে ডেভেলপারদের জন্য হ্যাকিং চর্চা করার মতো কোনো সহজ মোবাইল ওএস নেই। সে হিসেবে ফায়ারফক্স ওএস তৈরি হয়েছে এইচটিএমএল, জাভাস্ক্রিপ্ট এবং সিএসএসের সমন্বয়ে। যার ফলে আক্ষরিকভাবেই সিএসএসের এক লাইনের একটি সংকেত (কোড) পরিবর্তন করে মোবাইলের মূল পর্দায় প্রদর্শিত আইকন পরিবর্তন করতে পারবেন অথবা জাভাস্ক্রিপ্টে কোনো কোড সংযোজন করতে পারবেন, যা ফোন-কল নিয়ন্ত্রণ করে—জানালেন মাহে আলম।

আরেক রেপস মাশকাওয়াত আহসান জানান, মূলত নতুন ওএসটিকে আগে থেকেই দেখা, পরীক্ষা, বাগ (প্রোগ্রামিং ত্রুটি) শনাক্তকরণ, বাগ সমস্যার সমাধান করতেই বিশ্বের বিভিন্ন দেশে রেমোদের এ স্মার্টফোন পাঠানো হয়। যেহেতু নতুন, তাই এতে বাংলাদেশের তরুণদের দারুণ কাজ করার সুযোগ আছে, বললেন ২০০৬ সাল থেকে মজিলা কমিউনিটির সঙ্গে যুক্ত মাশকাওয়াত। বর্তমানে তিনি রেপস মেন্টর এবং মজিলার ওয়েব এফডব্লিউবি নামের একটি প্রকল্পের বাংলাদেশের একমাত্র স্কাউট। স্মার্টফোনটি পেয়ে মজিলার বিভিন্ন আয়োজনে দেখানো হয়েছে বলেও জানান তিনি।

‘প্রথমবার মজিলার স্মার্টফোন পাওয়ার আনন্দই অন্য রকম। হাতে পাওয়ার পর ওয়েব প্রযুক্তিতে নির্মিত একটি স্মার্টফোন হাতে-কলমে পরীক্ষা করে দেখেছি।এর কয়েকটি অংশের জন্য কোড লিখে, ডিভাইসে পরীক্ষা করে, মূল অপারেটিং সিস্টেমের  কোডবেজে যুক্ত হওয়ার জন্য জমা দিয়েছি এবং একটি অ্যাপ লিখছি’, বললেন স্মার্টফোনটি অনিরুদ্ধ অধিকারী।

কেন পেলেন এ স্মার্টফোন? প্রশ্নের উত্তরে রেপস রাহিদ হাসান জানান, মজিলার নতুন ফায়ারফক্স ওএস প্রকল্প বাস্তবায়নে বিশ্বব্যাপী স্বেচ্ছাসেবকদের আরও সক্রিয় ভূমিকা পালনের সুযোগ দিতেই এ ফোন দেওয়া হয়।বাংলাদেশেও স্থানীয়  ডেভেলপারদের নিজেদের তৈরি অ্যাপ বিনা খরচে একটি প্রকৃত যন্ত্রে চালিয়ে  দেখার সুযোগ দিতেই মজিলার এমন উদ্যোগ। নতুন এ ওএসের মার্কেটপ্লেসে অ্যাপস জমা দিতে লাগে না কোনো অর্থ, যা ডেভেলপারদের জন্য দারুণ এক সুযোগ বলেও জানান পেশায় আইফোনের অ্যাপস ডেভেলপার রাহিদ।

ফায়ারফক্স ওএস পুরোটাই ওয়েবভিত্তিক। যার ফলে তরুণ ডেভেলপারদের নতুন করে কিছু শিখতে হবে না, সহজেই অ্যাপ ডেভেলপ করতে পারবেন, বললেন রেপস মো. এনজাম হোসেন। যেহেতু শুরু হচ্ছে, তাই এখন সুযোগ ফায়ারফক্স ওএস স্মার্টফোনের জন্য অ্যাপস তৈরির। এর মাধ্যমে ডেভেলপাররা ভালো আয়ও করতে পারবেন বলেও জানান তিনি।

রেপস আশিকুর রহমান ও শফিউল আযম চৌধুরী মনে করেন নতুন স্মার্টফোন, নতুন অ্যাপস্টোর আর ডেভেলপারদের জন্য নতুন এ দ্বার উন্মুক্ত হয়েছে।মজিলার এসব কার্যক্রমে চাইলে আপনিও যুক্ত হতে পারেন। বিস্তারিত; https://lists.mozilla.org/listinfo/community-bangladesh।