স্বপ্নের এক গাড়ি

ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির (ডিআইইউ) একঝাঁক তরুণ শিক্ষার্থী তৈরি করেছেন পরিবেশবান্ধব সৌরবিদ্যুচ্চালিত গাড়ি। সূর্যের আলো থেকে শক্তি সংগ্রহ করে এই গাড়ি

.
.

টানা চলবে ৬ ঘণ্টা পর্যন্ত।
৮ জানুয়ারি রাজধানীর সোবহানবাগে ডিআইইউর সামনে দেখা মিলল এই শিক্ষার্থীদের একাংশের। তাঁরা সবাই কম্পিউটার বিজ্ঞান ও প্রকৌশল বিভাগে প্রথম বর্ষে পড়ছেন। সঙ্গে তাঁদের তত্ত্বাবধায়ক শিক্ষক। সবাই গাড়িটিকে ঘিরে দাঁড়িয়ে আছেন। এই গাড়ির বিষয়ে এক নিঃশ্বাসে বলে গেলেন দলনেতা আবদুল্লাহ আল নোমান। ২২ জনের এ দলের তিন মাসের পরিশ্রমের ফসল এই গাড়ি। উদ্দেশ্য, ভারতের দিল্লিতে অনুষ্ঠেয় ‘ইলেকট্রিক সোলার ভেহিক্যাল চ্যাম্পিয়নশিপ ২০১৪-১৫’-তে অংশগ্রহণ। বাংলাদেশ থেকে অংশগ্রহণকারী দল হিসেবে ভার্চুয়াল উপস্থাপনা পর্বে ১৫২টি দলের মধ্যে ৩২তম অবস্থানে আছেন তাঁরা। প্রস্তুতি নিচ্ছেন আগামী ১৫ মার্চ দিল্লিতে চূড়ান্ত পর্বে লড়ার জন্য।
ভারতের ইমপেরিয়াল সোসাইটি অব ইনোভেটিভ ইঞ্জিনিয়ার্স আয়োজিত প্রতিযোগিতাটির নিয়ম ছিল, গাড়ির ওজন অবশ্যই ১৫০ কেজির কম হতে হবে এবং সর্বোচ্চ খরচ করা যাবে দেড় লাখ টাকা। তাই হালকা রাখতে তাঁরা পিভিসি বোর্ডের আবরণে তৈরি করেছেন গাড়িটি। ৭ ফুট লম্বা ও ৪ ফুট প্রস্থের গাড়ি দুজন মানুষ বহন করতে পারে। গাড়িটির পাঁচটি সোলার প্যানেল ২৮০ ওয়াট বিদ্যুৎ উৎপন্ন করতে পারে। সূর্য কি আর সব সময় থাকবে? নোমান জানালেন, চারটি ব্যাটারি বিদ্যুৎ সংরক্ষণ করে রাখবে, প্রতি ঘণ্টায় সর্বোচ্চ ৪৫ কিলোমিটার বেগে একটানা চলবে ৬ ঘণ্টা।
আমাদের দেশে প্রচলিত যন্ত্রচালিত বাহনগুলোকে মোটামুটি তিনটি ভাগে ভাগ করা যায়। জ্বালানি তেলে চলা বাহনগুলো সম্পর্কে নতুন করে কিছু বলার নেই। পরিবেশ বিপর্যয়ের অন্যতম কারণ, দিন দিন পৃথিবীর বাতাস বিষাক্ত করে তুলছে। ব্যাটারিচালিত গাড়িগুলো পরিবেশবান্ধব বটে, তবে সরাসরি বিদ্যুৎ থেকে চার্জ হওয়ায় বিদ্যুৎ-ঘাটতির জন্য কিছুটা হলেও দায়ী। অন্যদিকে, বিশ্বব্যাপী গ্যাসের মজুতও সীমিত। এ রকম অবস্থায় সৌরশক্তিচালিত গাড়িগুলো সমাধান বলে মনে করেন প্রকল্পটির প্রধান তত্ত্বাবধায়ক ডিআইইউর কম্পিউটার বিজ্ঞান ও প্রকৌশল বিভাগের শিক্ষক এ বি এম মনিরুজ্জামান। তিনি বলেন, ‘পৃথিবীজুড়েই সবুজ প্রযুক্তি নিয়ে গবেষণা চলছে। এই শিক্ষার্থীরা অক্লান্ত পরিশ্রম করছে নতুন কিছু করার জন্য। এখন আশা ভারতের দিল্লিতে ভালো কিছু করে দেখাবার।’ প্রকল্পটির কারিগরি তত্ত্বাবধায়ক হিসেবে আছেন একই বিভাগের শিক্ষক মোহাম্মদ হাবিবুর রহমান।
বাংলাদেশের রাস্তায় এমন গাড়ি আরও দেখতে চান এই তরুণ শিক্ষার্থীরা। তাঁরা জানালেন, যদি কোনো প্রতিষ্ঠান এগিয়ে আসে তো বাণিজ্যিকভাবে বাজারজাতকরণ করা সম্ভব হবে। সে ক্ষেত্রে ধারণক্ষমতা এবং গতিবেগ—দুটোই বাড়ানো যাবে। দেশীয় প্রযুক্তিতে তৈরি হওয়ায় ক্রেতাদের সাধ্যের মাঝেই থাকবে। এখন পর্যন্ত প্রকল্পটির সব খরচ চালিয়েছেন শিক্ষার্থীরা নিজের পকেট থেকে। এমনকি শখের বাইসাইকেল বিক্রি করেও তাঁরা প্রয়োজনীয় অর্থের জোগান দিয়েছেন। প্রতিযোগিতার চূড়ান্ত পর্বে গাড়িটি এবং দলের সদস্যদের যাওয়া বেশ খরচের ব্যাপার। কোনো প্রতিষ্ঠানের পৃষ্ঠপোষকতা ছাড়া যা কোনোমতেই সম্ভব হবে না। ‘ইয়েস ইউ ক্যান’ বা ‘তুমিই পারবে’ নামের দলটি সব বাধা পেরিয়ে সফল হতে চায়, দেখতে চায় সবুজ এক পৃথিবী।