আগ্নেয়গিরির গভীরে রোবটের অভিযান?

মার্কিন মহাকাশ গবেষণা সংস্থার (নাসা) জেট প্রপালশন ল্যাবরেটরির (জেপিএল) সুখ্যাতি আছে পৃথিবীর বাইরে নানা ধরনের অভিযান চালানোর। কিন্তু সেখানকার বিজ্ঞানীরা এবার অন্য রকম কিছু করতে যাচ্ছেন। তাঁরা তৈরি করেছেন নতুন এক ধরনের রোবট, যা আমাদের গ্রহেরই সবচেয়ে দুর্গম কিছু জায়গায় গিয়ে অভিযান চালাতে পারবে।

.
.

জেপিএলের গবেষকেরা সম্প্রতি ঘোষণা দিয়েছেন, তাঁরা যুক্তরাষ্ট্রের হাওয়াই দ্বীপপুঞ্জে ভলকানোবট ওয়ান নামের একটি ছোট্ট রোবটের পরীক্ষামূলক ব্যবহার শুরু করেছেন। এটি কিলাওয়ায়েয়া আগ্নেয়গিরির নিষ্ক্রিয় কয়েকটি ফাটল ধরে ভেতরে প্রবেশ করতে যাচ্ছে। আগ্নেয়গিরিটি এখনো সক্রিয় রয়েছে।
জেপিএলের গবেষক ক্যারোলিন পারচেটা এক বিবৃতিতে বলেন, ‘আগ্নেয়গিরির বিস্ফোরণ ঠিক কীভাবে ঘটে, আমরা এখনো ঠিকমতো জানি না। আমাদের কাছে এই উদ্গিরণ-প্রক্রিয়ার বিভিন্ন নমুনা রয়েছে, কিন্তু সেগুলো অত্যন্ত সরলভাবে তৈরি। আগ্নেয়গিরির ভেতরে রোবট পাঠানোর এই পরীক্ষার মধ্য দিয়ে সেই নমুনা বা মডেলগুলোকে অধিকতর বাস্তবসম্মত রূপ দেওয়াটাই আমাদের প্রকল্পের লক্ষ্য।’
জেপিএলের গবেষক দলটি আগ্নেয়গিরির ভূগর্ভস্থ বিভিন্ন ফাটলের মানচিত্র তৈরি করে একটি সার্বিক ত্রিমাত্রিক (থ্রিডি) মডেল তৈরি করার ব্যাপারে আশাবাদী। আগে ব্যাপারটা কেবল কল্পনার মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিল।
ভলকানোবট ওয়ান হচ্ছে দুই চাকাওয়ালা একটি রোবট। প্রায় এক ফুট দীর্ঘ রোবটটির উচ্চতা সাত ইঞ্চিরও কম। ভূপৃষ্ঠের নিচের তপ্ত তরল পদার্থ পরীক্ষার কাজে আগেও এই রোবট ব্যবহার করা হয়েছিল। কিলাওয়ায়েয়া নিচে গত বছরের মে মাসে প্রথম অভিযানে রোবটটি ৮২ ফুট গভীরতায় যেতে সমর্থ হয়েছে। বিজ্ঞানীদের আশা, পরবর্তী প্রচেষ্টায় আরও গভীরে পৌঁছাতে পারবে ভলকানোবট ওয়ান। নিষ্ক্রিয় ফাটলগুলোর মানচিত্র তৈরি করার মাধ্যমে তাঁরা বুঝতে পারবেন, গলিত লাভাসহ আগ্নেয়গিরি নিঃসৃত বিভিন্ন পদার্থ কীভাবে ভূপৃষ্ঠের বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে পড়ে। পাশাপাশি, উদ্গিরণ কীভাবে ঘটে সে ব্যাপারে আরও বিশদ ধারণা অর্জনেও এই গবেষণা সহায়ক হতে পারে।
কিন্তু পৃথিবীতে আগ্নেয়গিরির তৎপরতার ধরন বিশ্লেষণ করে নাসার কী লাভ। জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা মনে করেন, পৃথিবীর আগ্নেয়গিরি নিয়ে এ ধরনের বিশ্লেষণের মাধ্যমে মহাকাশ গবেষণায় অনেক দূর এগিয়ে যাওয়া যেতে পারে। পারচেটার পরামর্শদাতা গবেষক অ্যারন পার্নেস বলেন, গত কয়েক বছরে নাসার মহাকাশযান মঙ্গলগ্রহ এবং চাঁদের বিভিন্ন গুহা ও ফাটলের অবিশ্বাস্য সব ছবি পাঠিয়েছে। এগুলো দেখে মনে হয় মঙ্গল ও চাঁদে আগ্নেয়গিরির তৎপরতা ছিল বা আছে। সেগুলো নিয়ে গবেষণা করার প্রযুক্তি এখনো মানুষের কাছে নেই। কিন্তু ব্যাপারগুলো নিঃসন্দেহে অত্যন্ত আকর্ষণীয়। ক্যারোলিনের সঙ্গে কাজ করতে গিয়ে পৃথিবীর বিভিন্ন আগ্নেয়গিরি আর বাইরের আগ্নেয়গিরিগুলোর মধ্যে সেতুবন্ধন গড়ে তোলার সুযোগ রয়েছে। এখন জানার চেষ্টা করা হচ্ছে পৃথিবীর আগ্নেয়গিরিগুলোর উদ্গিরণের ধরন সম্পর্কে। এই গবেষণা বিফলে যাবে—এমন ধারণার কারণ নেই।
ভলকানোবট ওয়ানের মতো কোনো রোবট মহাকাশে রওনা হওয়ার আগে পৃথিবীর আগ্নেয়গিরি নিয়ে অনেক গবেষণা চালাতে হবে। আগ্নেয়গিরির অভিযাত্রী রোবটের পরবর্তী প্রজন্ম তৈরির কাজ বিজ্ঞানীরা ইতিমধ্যে শুরু করে দিয়েছেন। আরও ছোট আকারের ভলকানোবট টু নামের নতুন একটি রোবট আগামী মার্চে কিলাওয়ায়েয়ার গভীরে প্রবেশের চেষ্টা করবে। ২০১৩ সালে বিজ্ঞানীরা ভলকানোকপ্টার (উড়ন্ত রোবটযান) ব্যবহার করে দক্ষিণ আমেরিকার কয়েকটি আগ্নেয়গিরির লাভা হ্রদগুলো কাছ থেকে দেখার চেষ্টা করেছিলেন।
সূত্র: পপুলার সায়েন্স