ব্ল্যাকবেরিকে কিনছে স্যামসাং!

ব্ল্যাকবেরিকে কেনার প্রস্তাব দিয়েছে স্যামসাং
ব্ল্যাকবেরিকে কেনার প্রস্তাব দিয়েছে স্যামসাং

কানাডার মোবাইল নির্মাতা প্রতিষ্ঠান ব্ল্যাকবেরিকে কিনতে চাইছে দক্ষিণ কোরিয়ার প্রতিষ্ঠান স্যামসাং। ব্ল্যাকবেরিকে কিনতে ৭৫০ কোটি মার্কিন ডলার দর হেঁকেছে স্যামসাং। 

করপোরেট বাজারে অ্যাপলের সঙ্গে পেটেন্ট যুদ্ধে জয়ী হতে ব্ল্যাকবেরির পেটেন্ট ও প্রযুক্তিকে কাজে লাগাতে চায় স্যামসাং। সংশ্লিষ্ট সূত্র ও কাগজপত্র ঘেঁটে বার্তা সংস্থা রয়টার্স এক খবরে এ তথ্য জানিয়েছে। 
ব্ল্যাকবেরি ও স্যামসাংয়ের প্রতিনিধিরা নাম প্রকাশ না করার শর্তে রয়টার্সকে বলেছেন, গত সপ্তাহে ব্ল্যাকবেরির দাম ও কেনার প্রক্রিয়া সম্পর্কে আলোচনায় বসেছিলেন দুই প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তারা। অবশ্য সরাসরি এই আলোচনার কথা অস্বীকার করেছে ব্ল্যাকবেরি ও স্যামসাং। 

এক বিবৃতিতে ব্ল্যাকবেরি জানিয়েছে, ‘ব্ল্যাকবেরি বিক্রি করে দেওয়ার বিষয়ে স্যামসাংয়ের সঙ্গে কোনো আলোচনা হয়নি। ’ স্যামসাং জানিয়েছে, ‘ব্ল্যাকবেরি কেনার যে খবর গণমাধ্যমে এসেছে তা ভিত্তিহীন। ’
অবশ্য কানাডার গ্লোব ও মেইলের মতো সংবাদমাধ্যমগুলো বলছে, সাম্প্রতিক সময়ে বেশ কয়েকটি বড় অফার ফিরিয়ে দিয়েছে ব্ল্যাকবেরি। ব্ল্যাকবেরির পরিচালনা পর্ষদ ও বিনিয়োগকারীরা মনে করছে, বিক্রি করে দেওয়ার চেয়ে ব্ল্যাকবেরির পুনর্গঠন পরিকল্পনা শেয়ারধারীদের জন্য ভালো হবে। এ ছাড়া ৭০০ কোটি মার্কিন ডলারের মতো দামে ব্ল্যাকবেরিকে বিক্রি করে দেওয়াটা ঠিক হবে না। 

এক সময়ে স্মার্টফোন জগতের রাজকীয় হ্যান্ডসেট নির্মাতা হিসেবে পরিচিত ছিল ব্ল্যাকবেরি। বর্তমানে প্রধান নির্বাহী জন চেনের অধীনে স্মার্টফোন বাজারে ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করছে প্রতিষ্ঠানটি। অ্যাপল, গুগল আর স্যামসাংয়ের সঙ্গে বাজারে পেরে উঠছে না এক সময়ের জনপ্রিয় ব্ল্যাকবেরি।

করপোরেট দুনিয়া

ব্ল্যাকবেরিকে স্যামসাংয়ের কিনতে চাওয়া প্রসঙ্গে বাজার গবেষক ব্রায়ান বলেলো মনে করছেন, ‘ব্ল্যাকবেরি বর্তমানে এমন একটি ক্রান্তিকালীন অবস্থা পার করছে, যেখানে যেকোনো বিনিয়োগ বাজি ধরার সঙ্গে বিবেচিত হবে। স্যামসাং তাই ভবিষ্যতের বাস্তবতা ভেবে এই সুযোগ নিতে চাইছে। ’
স্যামসাংয়ের বড় শক্তি হচ্ছে, বর্তমানে বিশ্বের স্মার্টফোন বাজারের শীর্ষস্থানে থাকা এবং বিশ্বের গ্রাহক পর্যায়ে বিভিন্ন ধরনের স্মার্টফোন আনা। ব্ল্যাকবেরিকে কিনে নিতে পারলে করপোরেট বাজারে স্যামসাং প্রতিদ্বন্দ্বীদের চেয়ে অনেক এগিয়ে যেতে পারবে।
বিজিসি পার্টনার্সের বিশ্লেষক কলিন গিলিস প্রশ্ন করেন বলেন, ‘এখনকার অফিসগুলোতে কয়টি স্যামসাং ফোন ব্যবহার হতে দেখেন? ব্ল্যাকবেরি কিনে নিলে এন্টারপ্রাইজ বাজারে ঢোকার বড় সুযোগ হবে স্যামসাংয়ের জন্য।
অবশ্য ব্ল্যাকবেরিকে কিনতে হলে স্যামসাংকে সবার আগে সন্তুষ্ট করতে হবে প্রেম ওয়াটসাকে। তাঁর ফেয়ারফ্যাক্স ফাইন্যান্সিয়াল হোল্ডিংস ব্ল্যাকবেরির সবচেয়ে বেশি শেয়ারের মালিক। ২০১৩ সালের নভেম্বরে ব্ল্যাকবেরির বর্তমান প্রধান নির্বাহী জন চেন দায়িত্ব নেওয়ার আগে বিশাল দেনার হাত থেকে ব্ল্যাকবেরিকে বাঁচিয়েছিলেন প্রেম ওয়াটসা। এ প্রসঙ্গে ফেয়ারফ্যাক্স ফাইন্যান্সিয়াল হোল্ডিংসের প্রধান নির্বাহী পল রিভেট কোনো মন্তব্য করতে রাজি হয়নি।
ব্ল্যাকবেরিকে কিনতে হলে আরও একটি বাধা স্যামসাংকে অতিক্রম করতে হবে আর তা হচ্ছে অটোয়া ও ওয়াশিংটনের আইনগত বাধা। কানাডার আইন অনুযায়ী, ব্ল্যাকবেরিকে যদি কোনো বিদেশি প্রতিষ্ঠান অধিগ্রহণ করতে চায় তবে সে ক্ষেত্রে সরকারি অনুমোদন প্রয়োজন হবে।
করপোরেট গ্রাহক সহ সরকারি ও সামরিক সংস্থাগুলো নিরাপদ যোগাযোগের জন্য ব্ল্যকবেরির নিরাপদ নেটওয়ার্ক ব্যবহার করে।

লেনোভো পারেনি স্যামসাং পারবে?

স্যামসাং চাইছে ব্ল্যাকবেরিকে পুরোপুরি কিনে নিতে। শুধু অল্প শেয়ার কিনে সামান্য মালিকানা পেতে আগ্রহী নয় দক্ষিণ কোরিয়ার প্রতিষ্ঠানটি। এর আগে চীনের প্রযুক্তিপণ্য নির্মাতাপ্রতিষ্ঠান লেনোভো ব্ল্যাকবেরিকে কেনার আগ্রহ দেখিয়েছিল। কিন্তু কানাডার সরকার লেনোভোর কাছে ব্ল্যাকবেরিকে বিক্রি করতে রাজি হয়নি। এতে নিরাপত্তাজনিত সমস্যা হতে পারে বলেই লেনোভোকে ব্ল্যাকবেরির মালিকানা দিতে রাজি হয়নি দেশটি। কিন্তু কানাডার সঙ্গে দক্ষিণ কোরিয়ার সম্পর্ক ভালো। ব্ল্যাকবেরিকে কিনে নেওয়ার ক্ষেত্রে সরকারের কাছ থেকে কোনো বাধা নাও আসতে পারে। এ ছাড়াও ব্ল্যাকবেরি ও স্যামসাংয়ের মধ্যেও ব্যবসায়িক সম্পর্ক রয়েছে।
তাহলে ব্ল্যাকবেরিকে কিনতে বাধা কোথায়? বাজার বিশ্লেষকেরা বলছেন, দামে মিলছে না। স্যামসাং যে দামে ব্ল্যাকবেরিকে কিনতে চাইছে তা আশানুরূপ নয়। ব্ল্যাকবেরির ৪৪ হাজার পেটেন্টের কথা ভাবলেও তো এর দাম আরও বেশি হওয়া উচিত!