গুগলে এক দশক

কাজের জন্য সেরা প্রতিষ্ঠান কোনটি? যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক সাময়িকী ফরচুন কাজের পরিবেশের বিচারে প্রতি বছর ১০০টি সেরা প্রতিষ্ঠানের তালিকা প্রকাশ করে, যে প্রতিষ্ঠানগুলোর কর্মীরা সন্তুষ্ট ও অনুগত। এই তালিকায় গত তিন বছর টানা শীর্ষ অবস্থানটি গুগল ইনকরপোরেটেডের দখলে। বর্তমানে বেশ কয়েকজন বাংলাদেশি গুগলে কাজ করলেও বিশ্বখ্যাত এই প্রতিষ্ঠানে ২০০৪ সালের আগে কোনো বাংলাদেশির পদচারণ ছিল না। সে বছরই প্রথম বাংলাদেশি হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়ায় গুগলের প্রধান কার্যালয়ে সফটওয়্যার প্রকৌশলী পদে যোগ দেন মোহাম্মাদ শিশির খান। তিনি এখন গুগলের কারিগরি পণ্য ব্যবস্থাপক (টেকনিক্যাল প্রোডাক্ট ম্যানেজার)।
বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের গুগলে নিয়োগ দেওয়ার উদ্দেশ্যে ৪ জানুয়ারি ১১ সদস্যের দলের প্রধান হিসেবে চার বছর পর বাংলাদেশে এসেছিলেন শিশির খান। ২২ জানুয়ারি রাজধানীর বারিধারায় কথা হয় তাঁর সঙ্গে।

মোহাম্মাদ ​ি​শশির খান  l ছবি: খালেদ সরকার
মোহাম্মাদ ​ি​শশির খান l ছবি: খালেদ সরকার

সিরাজগঞ্জের ছেলে শিশির ১৯৯৫ সালে এসএসসি পরীক্ষা শেষে সপরিবারে যুক্তরাষ্ট্র চলে যান। সেখানে দ্বাদশ শ্রেণির পড়াশোনা শেষে প্রথমে মিশিগান স্টেট ইউনিভার্সিটি ও পরে ওয়েন স্টেট ইউনিভার্সিটিতে কম্পিউটার কৌশল বিষয়ে স্নাতক হন। পুরো পরিবার ও আত্মীয়স্বজনেরা যুক্তরাষ্ট্রে থাকায় বাংলাদেশে খুব একটা আসা না হলেও দেশকে নিয়ে সব সময় ভাবেন, দেশের সব খবর রাখেন। বললেন, ‘বাংলাদেশের প্রযুক্তি জগৎ যেন শক্তিশালী হয়ে বেড়ে উঠতে পারে, সে জন্য গুগলে আমরা বাংলাদেশিরা সর্বাত্মক চেষ্টা করে যাচ্ছি। গুগলের সব সেবা বাংলায় রূপান্তর করা হচ্ছে। বাংলাদেশে গুগলের নানা কার্যক্রম চালু হয়েছে। গুগল বাসের মাধ্যমে আমরা প্রায় সাড়ে তিন শ স্কুল-কলেজের প্রায় দেড় লাখ শিক্ষার্থীকে ইন্টারনেটের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিচ্ছি।’ এ কাজে গুগলকে সহায়তা করছে অনেকগুলো সংগঠন।
গুগলে শুরুটা কীভাবে? শিশির খান বলেন, ‘আবেদনের সময় আমি জানতাম না যে এটা গুগল। মিশিগান স্টেটটা মূলত গাড়ির জন্য বিখ্যাত। তাই আমি ক্যালিফোর্নিয়ায় চলে আসি। সফটওয়্যার প্রকৌশলীর নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দেখে আবেদন করেছিলাম। সে সময় গুগলে পিএইচডি ডিগ্রিধারী ছাড়া কাউকে নিত না। আমার সাক্ষাৎকারটা খুব ভালো হয়েছিল বলে আমি স্নাতক হয়েও সুযোগ পেয়েছিলাম। এক হাজার জনের সেই প্রতিষ্ঠানে এখন একেকটা দলেই হাজার জনের বেশি লোক কাজ করছেন। আমার কাজটা মূলত পরিকল্পনা অনুযায়ী কোনো পণ্যের বাস্তবায়ন করা। গুগলে কাজটা বেশ আনন্দদায়ক। সবাই মিলে একটা ঘরে ধারণা ভাগাভাগি করে কাজ করি আমরা। দায়িত্ব ঠিকমতো পালন করলাম কি না, সেটাই বড় কথা। ধরাবাঁধা কোনো নিয়ম নেই।’
শিশির খানের কাছ থেকে জানা গেল গুগল বাংলাদেশকে খুব গুরুত্বের সঙ্গে দেখে। এর কারণ হিসেবে জানালেন সাম্প্রতিক বছরগুলোয় বাংলাদেশে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির হার ৬-এর ওপরে থাকছে। এখানকার বাজার সম্প্রসারিত হচ্ছে। দ্বিতীয়ত, আগের চেয়ে বাংলাদেশে মুঠোফোন ব্যবহারকারীর সংখ্যা বেড়েছে বহুগুণ, যারা ধীরে ধীরে ইন্টারনেট ব্যবহারে দক্ষ হয়ে উঠছে।
গুগলে চাকরি অনেকের কাছেই অনেকটা স্বপ্নের মতো। তবে নিয়োগপদ্ধতিটা সময়সাপেক্ষ। অনেক স্তর পেরিয়ে তবেই ঠিক হয়, কে সুযোগ পাবে। সরাসরি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে নিয়োগে তুলনামূলক ঝামেলা কম। কম্পিউটার বিজ্ঞান ও প্রকৌশল বিভাগ থেকে বেশি সুযোগ পেলেও যেকোনো বিভাগের শিক্ষার্থী আবেদন করতে পারেন। শিশির খান বলেন, প্রোগ্রামিংটা আসলে একটা ভাষার ব্যাকরণের মতো। সেই ব্যাকরণ, সেই অ্যালগরিদমটা কে কত দক্ষতার সঙ্গে ব্যবহার করতে পারছে, সেটা দেখা হয়। সমস্যা সমাধান করতে পারছে কি না, সেটাই মুখ্য। তিনি জানালেন গুগলে এখন নারী কর্মী এবং বিভিন্ন দেশ ও সম্প্রদায়ের কর্মীর সংখ্যা বাড়ানো হচ্ছে। যাতে গুগলে সবার অংশগ্রহণ বাড়ে।
ব্যক্তিগত জীবনে কিছুদিন আগে শাহরিন রেজার সঙ্গে সংসার পেতেছেন শিশির। ইউনিভার্সিটি অব কেমব্রিজে রাষ্ট্রবিজ্ঞানে এমফিল করলেও দেশের মানুষকে আর্সেনিক দূষণ থেকে মুক্ত করার জন্য কাজ করে যাচ্ছেন শাহরিন। চালু করেছেন পিউরিফএইড নামের প্রতিষ্ঠান।
শিশির খান মনে করেন, শেখার কোনো শেষ নেই। নতুন কিছু জানার চেষ্টা থাকতে হবে। মুখস্থ নয়, বরং কেন হলো, তা জানতে হবে। প্রযুক্তিজগৎটা সারা বিশ্বেই বাড়ছে। এখানে অপার সম্ভাবনা। সেই সম্ভাবনা কাজে লাগাতে নিজেকে দক্ষ করে গড়ে তুলতে হবে।