তথ্য হলো মৌলিক চাহিদা

এখন আপনার জন্য সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ কী? ‘জেট ল্যাগ’—হেসে এক কথাতেই বলে ফেলেন জিমি ওয়েলস, মুক্ত বিশ্বকোষ উইকিপিডিয়ার সহপ্রতিষ্ঠাতা এবং এই বিশ্বকোষ পরিচালনাকারী সংস্থা উইকিমিডিয়া ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান। জেট ল্যাগ মানে বিমানভ্রমণজনিত ক্লান্তি তাঁর তো থাকবেই। উইকিপিডিয়া নিয়ে ঘুরে বেড়াতে হয় পৃথিবীর এপ্রান্ত থেকে ওপ্রান্তে। বাংলা উইকিপিডিয়ার দশ বছর পূর্তির চূড়ান্ত অনুষ্ঠানে যোগ দিতে ২৬ ফেব্রুয়ারি জিমি ওয়েলস প্রথমবারের মতো এসেছিলেন ঢাকায়। মাত্র দশ ঘণ্টার এ সফরে অনুষ্ঠানের ফাঁকেই কথা হয় তাঁর সঙ্গে। সাক্ষাৎকারটি নিয়েছেন পল্লব মোহাইমেন

ঢাকায় জিমি ওয়েলস l ছবি: খালেদ সরকার
ঢাকায় জিমি ওয়েলস l ছবি: খালেদ সরকার

উইকিপিডিয়ার শুরুটা কীভাবে হলো? অনুপ্রেরণাই বা কী ছিল?
জিমি ওয়েলস: মুক্ত বিশ্বকোষের একটা চিন্তা আমার মাথায় সব সময়ই ছিল। এই গ্রহের মানুষ যাতে মাতৃভাষায় বিনা মূল্যে জ্ঞানভান্ডারে প্রবেশ করতে পারে, এমন কিছু করার কথা ভাবছিলাম। ১৯৯৯ সালে দেখলাম মুক্ত সফটওয়্যার অর্থাৎ ওপেনসোর্সের প্রোগ্রামাররা একত্র হয়ে অনেক কাজ করছে। ফ্রি সফটওয়্যার ফাউন্ডেশনের কাজও দেখি। জিএনইউ লিনাক্স, অ্যাপাচির কাজ দেখে আমি অনুপ্রাণিত হয়েছি। আর বিশ্বকোষ ছিল আমার পছন্দের কাজ। এরপর উইকি সফটওয়্যারটি তৈরি করি। ওপেন সোর্সের ধারণাটা আমি এখানে প্রয়োগ করেছি। ২০০১ সালে চালু হয় উইকিপিডিয়া।
অ্যালেক্সার হিসাব অনুযায়ী এখন ইন্টারনেটে জনপ্রিয়তার দিক থেকে ছয় নম্বরে উইকিপিডিয়া। এটা কোনো বিনোদনের ওয়েবসাইট বা সার্চ ইঞ্জিন নয়। এ রকম একটা সাইট এত জনপ্রিয় কেন?
জিমি: তথ্য ও জ্ঞান আসলে মানুষের মৌলিক চাহিদার একটি। তথ্য জানতে আগে রেডিও শুনত সবাই। মানুষের তথ্যের প্রয়োজন আসলে সব সময়ই হয়। উইকিপিডিয়ায় সহজেই তথ্য পাওয়া যায়। এটাই জনপ্রিয়তার কারণ বলে মনে হয়।
উইকিপিডিয়া বস্তুনিষ্ঠ তথ্যের সূত্র বা উৎস হিসেবে এখনো স্বীকৃত নয়। এ ব্যাপারে আপনার মত কী?
জিমি: এটা সত্য। গবেষণার জন্য ঠিক আছে, তবে মান আরও বাড়াতে হবে। এখানে যে কেউ যেকোনো তথ্য যেমন পান, তেমনি তথ্য যোগও করতে পারেন। আমাদের সম্পাদকেরা সম্পাদনা করার পর কোনো নিবন্ধ প্রকাশ পায় বা তথ্য যোগ হয়। তার পরও কিছু সমস্যা এখনো রয়েছে। এ অবস্থার উন্নয়নে আমরা কার্যকর পদ্ধতি বের করার উদ্যোগ নিচ্ছি।
এই সময়ে সফল কোনো উদ্যোগের জন্য কোনটি বেশি গুরুত্বপূর্ণ—আইডিয়া না পুঁজি?
জিমি: অবশ্যই আইডিয়া। সৃজনশীল কোনো ধারণা প্রযুক্তিনির্ভর উদ্যোগ সফল করে তুলতে পারে।
ইন্টারনেটে আপনার নামে পাশে ‘অনলাইন বিলিয়নিয়ার’ পরিচয়টাও পাওয়া যায়...
জিমি: হাহাহা। এটা কীভাবে সম্ভব! উইকিপিডিয়া একটি অলাভজনক উদ্যোগ। আর আমার নিজেরও অত টাকাকড়ির দরকার নেই।
ইন্টারনেট ডট অর্গ নিয়ে ভাবনা কী?
জিমি: ইন্টারনেট ডট অর্গ নিয়ে আমি আশাবাদী। যদিও অনেকেই এর উদ্দেশ্য নিয়ে সন্দেহ করে। কিন্তু আমার ধারণা এটি শেষ পর্যন্ত সাধারণের কাছে ইন্টারনেট সহজলভ্য করবে।
বিভিন্ন দেশে মাঝেমধ্যে উইকিপিডিয়ার ওপর সেন্সরশিপ বা নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়। এ সম্পর্কে কী মনে করেন?
জিমি: আমরা সব সময় এটার বিরোধিতা করি। আমরা মনে করি, মুক্তজ্ঞানের প্রবেশাধিকারে কোনো বাধা দেওয়া উচিত নয়। বিশেষ করে, উইকিপিডিয়ার মতো বিশ্বকোষীয় নিবন্ধগুলো কিন্তু কারও মতের প্রকাশ নয়। এটি মূলত তথ্যভান্ডার, যেখানে ব্যক্তিগত মতের প্রতিফলন থাকে না। তাই আমরা মনে করি এভাবে প্রবেশাধিকার আটকে দেওয়াটা ঠিক নয়।
উইকিলিকসের সঙ্গে উইকিপিডিয়ার কি কোনো সম্পর্ক আছে?
জিমি: নামের প্রথম অংশের মিল ছাড়া আর কোনো সম্পর্ক নেই। সংবাদমাধ্যমের এ ব্যাপারে খুব সতর্ক থাকা দরকার। তা না হলে কিছু বিভ্রান্তি তৈরি হতে পারে।
উইকিপিডিয়ার জন্য এখন বড় চ্যালেঞ্জ কী?
জিমি ওয়েলস: সবার কাছে পৌঁছানো। সমস্যা ও সম্ভাবনা দুটোই এখন মোবাইল ফোন। মোবাইলের জন্য হালকা সাইট বানাতে হয়। সবার কাছে আবার স্মার্টফোন নেই। উইকিপিডিয়া জিরো থেকে আমরা বিনা মূল্যে সবাইকে যুক্ত করতে চাচ্ছি। গুগলের নলেজ গ্রুপ হওয়ার পর শুরুতে আমাদের সাইটে কিছুটা প্রভাব পড়েছিল। তবে এখন আর এই সমস্যা নেই।
উইকিপিডিয়া কীভাবে বাংলাদেশের দরিদ্র মানুষদের ক্ষমতায়ন ঘটাতে পারে?
জিমি ওয়েলস: বাংলাদেশের মতো দেশে গরিব জনগণের কাছে ইন্টারনেটকে নিয়ে যাওয়াটাই যথেষ্ট নয়। এর জন্য দরকার ইন্টারনেটে সবার জন্য নানা ধরনের বিষয়বস্তু বা কনটেন্ট রাখা। উইকিপিডিয়া হচ্ছে সবাই মিলে ভালো কনটেন্ট সবার জন্য সহজলভ্য করার একটা জায়গা। আপনাদের মতো দেশের জন্য এটা বেশ উপকারী। তবে কাজটা আপনাদেরই করতে হবে। আমরা শুধু জায়গাটা দিচ্ছি।