প্রকৌশল শিক্ষার্থীদের জন্য রেইনআর্ক

পরীক্ষার আগের রাত। পুরকৌশলের কোনো একটা জটিল বিষয়ের প্রস্তুতি নিচ্ছেন। নির্দিষ্ট বিষয়ে শ্রেণিকক্ষে শোনা লেকচারটা ঠিক মনে করতে পারছেন না। পুরোটা মনে পড়ছে না! কিংবা, ধারণাটা অস্পষ্ট। দ্বিধাদ্বন্দ্বে আছেন, কী করা যায়। লেকচার নোটটা যদি হাতের কাছেই পাওয়া যেত! হ্যাঁ, সম্ভব। ইন্টারনেটের সাহায্য নিন। খুঁজুন www.rainarc.com।
রেইনআর্ক ওয়েবসাইটে পাওয়া যাবে প্রয়োজনীয় বিষয়ভিত্তিক লেকচারটির ভিডিও টিউটেরিয়াল। মডেল ও কাঠামো উপস্থাপনার আকারে মিলে যাবে দরকারি লেকচারটি। চাইলে বিষয়সংশ্লিষ্ট অন্য লেকচারগুলোও দেখুন। কোথাও বুঝতে না পারলে প্রশ্ন করুন। উত্তরও পেয়ে যাবেন সঙ্গে সঙ্গে।
প্রকৌশল বিজ্ঞানের বিভিন্ন প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার সহায়ক ওয়েবসাইট রেইনআর্ক ডটকম চালু হয়েছিল গত বছরের জানুয়ারি মাসে। এই উদ্যোগের মূল কাযর্ক্রম শুরু হয় ২০১৩ সালের শুরুতে। বর্তমানে সাতজনের দক্ষ একটি দল এই সাইটটি চালাচ্ছেন। দলের সবাই স্বেচ্ছাসেবী হিসেবেই কাজ করছেন। শিক্ষক ও শিক্ষার্থী, প্রত্যেকেই এখানে আলাদা আলাদা প্রোফাইল তৈরি করতে পারবেন। সাইটটি ব্যবহার করে একজন শিক্ষক তাঁর ব্যক্তিগত প্রোফাইলের মাধ্যমে বিষয়ভিত্তিক ভিডিও লেকচার টিউটেরিয়াল রেখে দিতে পারবেন। শিক্ষার্থীরা সেগুলো দেখে নিজেদের মতামত ও প্রশ্ন উপস্থাপন করতে পারবেন। এতে লেকচারগুলো দেওয়া আছে পাঠ্যক্রম অনুযায়ী ধারাবাহিকভাবে। শোনা যাবে দুই ভাষায়, বাংলা ও ইংরেজিতে।
সাইটটিতে এখন পুরকৌশলের ৮০টি টিউটেরিয়াল রযেছে। যেগুলো বানানো স্ক্রিন ক্যাপচার সফটওয়্যার ব্যবহার করে। এখানে প্রকৌশল বিজ্ঞানের অন্যান্য বিভাগ নিয়েও কাজের সুযোগ রয়েছে। হতে পারে তড়িৎ ও ইলেকট্রনিকস কৌশল, কম্পিউটার সফটওয়্যার প্রকৌশল, যন্ত্রকৌশল, রাসায়নিক প্রকৌশল, বস্ত্র প্রকৌশল ইত্যাদি।
যে কেউ স্বেচ্ছাসেবী হিসেবে এসব বিষয়ের টিউটেরিয়াল প্রকাশ করতে পারবেন। রেখে দেওয়া লেকচারের মান যাচাইয়ের জন্য রয়েছেন অভিজ্ঞ উপদেষ্টা পরিষদ। সেখানে ভুলত্রুটি ধরা পড়লে শিক্ষক নিজেই তাঁর টিউটেরিয়ালটি পুনরায় সম্পাদনা করতে পারবেন।
প্রতিষ্ঠানটির সহ-প্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা গালিব মুক্তাদির বললেন, ‘শিক্ষার্থীরা যাতে শ্রেণিকক্ষের লেকচার সহজে ধরতে পারে এবং বুঝতে পারে, সে জন্যই আমরা কাজ করছি। কারণ, একটা শ্রেণির সব শিক্ষার্থী একই রকম মেধাবী হয় না। এসব টিউটেরিয়াল সাহায্যকারী পাঠ হিসেবে কাজ করবে। পেশাজীবীরাও এসব টিউটেরিয়াল দেখে উপকৃত হবেন।’
এই সাইটে পাঠ্যসূচির বাইরের অনেক বিষয়ও সংযুক্ত আছে এবং হচ্ছে। যেটা কর্মমুখী শিক্ষার ক্ষেত্রে অনেক দরকারি।
রেইনআর্কের প্রকল্প ব্যবস্থাপক ও হেড অব ডেভেলপারস শামস সাদিক বলেন, ‘আমাদের সাইটটি ব্যবহারবান্ধব। এখন আমরা শিক্ষকদের ইন্টারনেটে টিউটেরিয়ালের সঙ্গে বিষয়সংশ্লিষ্ট পিডিএফ ফাইল, গবেষণাকর্ম ও প্রকাশিত প্রতিবেদন সংযুক্ত করার কাজ করছি। সাইটটি তৈরিতে ব্যবহার করেছি পিএইচপি। ডেটাবেইসের কাজ করেছি মাইএসকিউএল দিয়ে। এ ছাড়া ব্যবহার করা হয়েছে জাভাস্ক্রিপ্ট।’
গত মাসে ঢাকায় রেইনআর্কের স্টুডিওতে কথা হয় সাইটটির একজন ব্যবহারকারী আহসানউল্লাহ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের পুরকৌশলের ছাত্র মুফরাদ আবিরের সঙ্গে। তিনি বলেন, এমন অনেক সমস্যা আছে যেগুলোর ঝটপট সমাধান দরকার হয়। ভিডিও টিউটেরিয়ালের মাধ্যমে সেসব খুব সহজেই জানা যায়। এমনকি, প্রশ্নও করা যায়।
রেইনআর্ক ওয়েবসাইটটি ই-লার্নিং বিষয়টি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের কাছে পৌঁছে দেওয়ার জন্য কাজ করছে। তবে সেটি ক্লাসরুমের বিকল্প হিসেবে নয়, সাহায্যকারী হিসেবে। সাইটিতে রয়েছে শিক্ষাকেন্দ্রিক নিজস্ব সামাজিক যোগাযোগের বলয়। যেখানে ফেসবুকের মতোই প্রোফাইল খোলা যাবে। সম্পর্ক স্থাপন করা যাবে নিজ বিভাগের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের সঙ্গে। চলবে শিক্ষামূলক আলোচনা। এই ওয়েবসাইটটি সবার জন্যই উন্মুক্ত।