যেভাবে হ্যাক হলো হোয়াইট হাউসের কম্পিউটার

যুক্তরাষ্ট্রের স্টেট ডিপার্টমেন্টের কম্পিউটার সিস্টেমে রাশিয়ার হ্যাকাররা হামলা চালিয়েছিল বলে সিএনএনের এক প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রের স্টেট ডিপার্টমেন্টের কম্পিউটার সিস্টেমে রাশিয়ার হ্যাকাররা হামলা চালিয়েছিল বলে সিএনএনের এক প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।

হোয়াইট হাউসের কম্পিউটার সিস্টেমে রাশিয়ান হ্যাকাররা হামলা চালিয়েছে। এতে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার ব্যক্তিগত কাজের সূচির মতো গুরুত্বপূর্ণ তথ্য হাতিয়ে নিতে সক্ষম হয়েছেন তাঁরা। যুক্তরাষ্ট্রের কম্পিউটার সিস্টেমে হ্যাকের কথা সিএনএনের এক প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে। 
নাম প্রকাশ না করে তদন্তকারী সদস্যদের বরাতে সিএনএন প্রতিবেদনে উল্লেখ করেছে, রাশিয়াভিত্তিক হ্যাকাররা স্টেট ডিপার্টমেন্টের নেটওয়ার্কে ঢুকেছে এবং তা থেকে হোয়াইট হাউস সিস্টেমেও ঢুকতে সক্ষম হয়েছে। তবে কোনো ক্লাসিফায়েড তথ্য হাতিয়ে নিতে পারেনি। 

কীভাবে হ্যাক হলো?
অন্যান্য হ্যাকিংয়ের ঘটনার মতোই হোয়াইট হাউসের সিস্টেম হ্যাক করতে ফিশিং মেইল ব্যবহার করা হয়েছে বলে মনে করেন হ্যাকিংয়ে ঘটনা তদন্তের সঙ্গে যুক্ত থাকা কর্মকর্তারা। ফিশিং মেইল হচ্ছে টোপ দেওয়া বা ফাঁদে ফেলার জন্য পাঠানো মেইল যাতে কম্পিউটারে ম্যালওয়্যার ঢোকানোর লিংক যুক্ত থাকে। এতে ইলেকট্রনিক যোগাযোগ ব্যবস্থায় তথ্যাদি সংগ্রহের জন্য কোনো বিশ্বস্ত মাধ্যমের ছদ্মবেশ ধারণ করা হয়। ইমেইলে কোনো ভুয়া ওয়েবসাইটের লিংক দেওয়া হয়, যাতে ক্লিক করলেই ইউজারকে নকল ফিশিং ওয়েবসাইটটিতে নিয়ে যাওয়া যায়, যা দেখতে আসল অফিশিয়াল ওয়েবসাইটটির মতোই। এর মাধ্যমে বর্তমান ইন্টারনেট পরিস্থিতির দুর্বল নিরাপত্তা ব্যবস্থাকে অবৈধভাবে নিজের কাজে ব্যবহার করা হয়। বেশ কয়েকটি পদ্ধতিতে ফিশিং করা হয়। এর মধ্যে একটি হচ্ছে স্পেয়ার ফিশিং। এতে কয়েকজন ব্যক্তি বা কোম্পানির বিশেষ ব্যক্তির সম্পর্কে তথ্য জোগাড় করা হয়। এ ক্ষেত্রে স্টেট ডিপার্টমেন্টের কোনো ইমেইল অ্যাকাউন্ট আগে হ্যাক করে সেই মেইল থেকে পুরো সিস্টেমে আক্রমণ চালানো হয় বলেই তদন্তকারীদের ধারণা। 

এ বছরে জানুয়ারি মাসে এফবিআই সাইবার সম্মেলনে যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল ইনটেলিজেন্সের পরিচালক জেমস ক্ল্যাপার সরকারি কর্মকর্তা, ব্যবসায়ী ও প্রযুক্তি কর্মকর্তাদের স্পেয়ার ফিশিংয়ের বিষয়ে সাবধান করেছিলেন।

হ্যাকিংয়ের ঘটনা অস্বীকার
ন্যাশনাল সিকিউরিটি কাউন্সিলের মুখপাত্র মার্ক স্ট্রোথ এই হ্যাকিংয়ের বিষয়টি নিয়ে কথা বলেছেন। তিনি বলেন, ‘সিএনএনের প্রতিবেদনে নতুন কোনো ঘটনার কথা বলা হয়নি। এতে গত বছর হোয়াইট হাউস থেকে যে তথ্য উন্মুক্ত করা হয়েছিল তার ভিত্তিতে আন ক্লাসিফায়েড ইওপি নেটওয়ার্কে সন্দেহজনক কার্যক্রমের কথা উল্লেখ করা হয়েছে। এ ধরনের কোনো কার্যক্রমের বিষয়টি আমরা খুব গুরুত্ব দিয়ে দেখি। এ ক্ষেত্রে আমরা পরিষ্কার করে বলছি যে, বিষয়টি তৎক্ষণাৎ গুরুত্ব দিয়ে দেখে সে সমস্যার সমাধান করা হয়েছে। আমরা তাই সিএনএনের প্রতিবেদন সম্পর্কে কোনো মন্তব্য করছি না।’
হোয়াইট হাউসের ডেপুটি ন্যাশনাল সিকিউরিটি অ্যাডভাইজার বেন রোডসও হ্যাকের বিষয়টি অস্বীকার করেছেন। তিনি বলেছেন, ‘আমাদের ক্লাসিফায়েড সিস্টেম হ্যাক হয়েছে এটা আমরা বিশ্বাস করি না।’
এদিকে, সিএনএনের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গত বছরে হোয়াইট হাউসের কম্পিউটার নেটওয়ার্কে সাইবার হামলার কথা স্বীকার করেছেন প্রশাসনিক কর্মকর্তারা তবে সে সময় কোনো তথ্য চুরি যাওয়ার বিষয়টি অস্বীকার করেন। তারা রাশিয়াকে সরাসরি এ বিষয়ে দোষারোপ না করে বলেছেন, সন্দেহভাজনদের তালিকায় রাশিয়ার হ্যাকাররা আছে। ওই ঘটনার সময় হোয়াইট হাউসের এক বিবৃতিতে বলা হয়, ‘আমাদের কম্পিউটার ও সিস্টেমে কোনো ক্ষতি হয়নি তবে আন ক্লাসিফায়েড নেটওয়ার্কে প্রভাব পড়েছে।’

যুক্তরাষ্ট্রের প্রশাসনিক কর্মকর্তাদের বরাতে সিএনএন তাদের প্রতিবেদনে জানিয়েছে, সাম্প্রতিক মাসগুলোতে রাশিয়ান হ্যাকাররা স্টেট ডিপার্টমেন্টে সাইবার হামলা চালিয়ে স্পর্শকাতর তথ্য হাতিয়ে নিয়েছে। তবে হোয়াইট হাউসের পক্ষ থেকে শুধু আন ক্লাসিফায়েড সিস্টেম হ্যাকের কথা স্বীকার করা হয়েছে। ক্লাসিফায়েড তথ্য না হলেও স্পর্শকাতর এই তথ্যগুলো বিদেশি গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর কাজে লাগতে পারে।
গত বছরের অক্টোবর মাসে হোয়াইট হাউসের পক্ষ থেকে বলা হয়েছিল, আন ক্লাসিফায়েড নেটওয়ার্কে সন্দেহজনক কার্যক্রম তাদের চোখে পড়েছে। এই নেটওয়ার্কটি প্রেসিডেন্টের এক্সিকিউটিভ অফিসে ব্যবহৃত হয়। এরপর নিরাপত্তা আপগ্রেডের কথা বলে এই সিস্টেমটি সাময়িক বন্ধ করে রাখা হয়। এরপর এফবিআই ও যুক্তরাষ্ট্রের গোয়েন্দারা হ্যাকের বিষয়টি নিয়ে তদন্তে নামে। এতে রাশিয়ার হ্যাকারদের দিকে সন্দেহ হয় তাঁদের।

তদন্তে যুক্ত কর্মকর্তারা মনে করেন, হোয়াইট হাউসের নেটওয়ার্কে ঢোকার আগে স্টেট ডিপার্টমেন্টের নিরাপত্তা সিস্টেম আগে ভেঙে ফেলে হ্যাকাররা। কম্পিউটার সিস্টেমে যথেষ্ট নিরাপত্তাব্যবস্থা থাকলেও রাশিয়ান হ্যাকাররা তা ভেঙে ফেলতে পারে। একজন কর্মকর্তার ভাষ্য, রাশিয়ার হ্যাকাররা স্টেট ডিপার্টমেন্টের সিস্টেম কয়েক মাস ধরে নিজেদের আয়ত্তে রাখে। এই সিস্টেম হ্যাকারদের কবল থেকে পুরোপুরি মুক্ত হয়েছে কি না তা স্পষ্ট নয়।