নিরপেক্ষ ইন্টারনেট নিয়ে বিতর্ক

এ বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে ভারতে রিলায়েন্স কমিউনিকেশনস ও ফেসবুক কর্তৃপক্ষ চুক্তি করেছিল।
এ বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে ভারতে রিলায়েন্স কমিউনিকেশনস ও ফেসবুক কর্তৃপক্ষ চুক্তি করেছিল।

ভারতের শীর্ষস্থানীয় প্রযুক্তি ও ইন্টারনেটভিত্তিক বেশ কয়েকটি প্রতিষ্ঠান মার্ক জাকারবার্গের ইন্টারনেট ডট ওআরজি নামের সেবা থেকে নিজেদের সরিয়ে নিয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার বার্তা সংস্থা রয়টার্সের এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়।
বিশ্বের ইন্টারনেট সুবিধাবঞ্চিত মানুষের কাছে বিনা মূল্যে ইন্টারনেট সংযোগ সুবিধা দিতে ফেসবুকের প্রতিষ্ঠাতা মার্ক জাকারবার্গ ইন্টারনেট ডট ওআরজি তৈরি করেন। নেট নিরপেক্ষতার বিষয়টি নিয়ে বিতর্ক তৈরি হওয়ায় সম্প্রতি ভারতে বিনা মূল্যে ইন্টারনেট সুবিধা দেওয়ার জন্য জাকারবার্গের প্রকল্পটি বড় ধরনের ধাক্কা খেয়েছে। ভারত সফরে এসে ইন্টারনেট ডট ওআরজি চালু করার ঘোষণা দেন মার্ক জাকারবার্গ।
নেট নিউট্রালিটি বা ইন্টারনেট নিরপেক্ষতা হচ্ছে একটি ধারণা, যাতে সব ওয়েবসাইটকে ইন্টারনেটে একইভাবে বা সমানভাবে দেখা হবে। ইন্টারনেট সবার জন্য সমান। এখানে কোনো বৈষম্য থাকবে না। সব ধরনের ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর কাছে সমানভাবে সব ওয়েবসাইট দেখার সুযোগ থাকতে হবে, তা না হলে ইন্টারনেট নিরপেক্ষ থাকবে না। ইন্টারনেট নিরপেক্ষতার পক্ষে দাঁড়িয়ে ভারতের বেশ কয়েকটি প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান এ ধরনের বার্তা দিচ্ছে।
সম্প্রতি ভারতের টেলিকম অপারেটর ভারতী এয়ারটেল ইন্টারনেট ব্যবহারকারীদের জন্য ‘এয়ারটেল জিরো’ নামের একটি সেবা চালু করলে ইন্টারনেট নিরপেক্ষতা নিয়ে বিতর্ক তৈরি হতে শুরু করে। ‘জিরো ইন্টারনেট’ নামের ভারতী এয়ারটেলের এই সেবার মাধ্যমে গ্রাহকদের বিনা মূল্যে ইন্টারনেট সেবা ব্যবহারের সুযোগ দিতে মোবাইল অ্যাপ নির্মাতারা ডেটা ব্যবহারের জন্য অর্থ পরিশোধ করার সুযোগ দেওয়ার কথা বলা হয়।

এয়ারটেলের এই সেবার বিরুদ্ধে একজোট হওয়া ব্যক্তিরা ও ইন্টারনেট ব্যবহারকারীরা যুক্তি দেখান, এ ধরনের প্ল্যাটফর্ম তৈরি এবং ভর্তুকির ধারণা ইন্টারনেট নিরপেক্ষতার পরিপন্থী। স্টার্ট-আপ ফার্ম বা উদ্যোক্তা প্রতিষ্ঠানগুলোর দাবি, নেট নিরপেক্ষ না হলে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গে তাদের সমতা থাকবে না এবং প্রতিযোগিতার ক্ষেত্রে তারা অসুবিধায় পড়ে যাবে।

নেট নিরপেক্ষতার তিন নিয়ম

১. সব সাইট সমানভাবে অনলাইনে দেখার সুবিধা থাকতে হবে। কোনো ইন্টারনেট সেবাদাতা প্রতিষ্ঠান (আইএসপি) বা টেলিকম অপারেটরকে টাকা না দিলে তারা কোনো সাইট বা অ্যাপ বন্ধ করতে পারবে না। অর্থাৎ, সব অপারেটরকে সমানভাবে সুযোগ দিয়ে সব ওয়েবসাইট দেখাতে হবে। কোনো বিশেষ সাইটকে সুবিধা দিতে আলাদা করে গেটওয়ে তৈরি করা যাবে না।
২. সব সাইট একই গতিতে দেখার সুযোগ থাকতে হবে (আইএসপি/টেলকো স্তরে গতির সঙ্গে মিলিয়ে)। অর্থাৎ কোনো সাইটকে সুবিধা দিতে (চুক্তির জন্য) গিয়ে অন্য সাইটের গতি কমিয়ে দেওয়া যাবে না।
৩. ইন্টারনেট সংযোগ সুবিধার খরচ সব সাইটের জন্য একইরকম হতে হবে। অর্থাৎ, জিরো রেটিং চলবে না। ভারতের মতো দেশে ইন্টারনেট নিরপেক্ষতার বিষয়টি যতটা না গতিনির্ভর তার চেয়ে বেশি এই খরচ নির্ভর।
ভ্রমণবিষয়ক পোর্টাল ক্লিয়ারট্রিপ, এনডিটিভি, ভারতীয় মিডিয়া টাইমস গ্রুপ ইন্টারনেট ডট ওআরজি থেকে কনটেন্ট সরিয়ে ফেলার ঘোষণা দিয়ে নেট নিরপেক্ষতার পক্ষে দাঁড়িয়েছে।
গত ফেব্রুয়ারিতে ভারতের টেলিকম অপারেটর রিলায়েন্স কমিউনিকেশনসের সঙ্গে চুক্তি করে ফেসবুক ও ইন্টারনেট ডট ওআরজি ভারতে চালু করার ঘোষণা দেয়। এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে সর্ব প্রথম ভারতে এই সেবাটি চালু করে ফেসবুক। কম আয়ের প্রত্যন্ত অঞ্চলের মানুষ যাতে ইন্টারনেট ডট ওআরজি অ্যাপ বিনা মূল্যে ব্যবহার করতে পারে সে সুবিধা চালু করে ফেসবুক। ইন্টারনেট ওআরজির অ্যাপের মাধ্যমে ৩০ টির বেশি ওয়েবসাইট বিনা মূল্যে দেখতে পান ইন্টারনেট ব্যবহারকারী যার মধ্যে চাকরি, স্বাস্থ্য, শিক্ষা এবং ফেসবুকের মতো সাইট রয়েছে।
ফেসবুক কর্তৃপক্ষের যুক্তি হচ্ছে, ভারত যেভাবে অধিক মানুষকে ইন্টারনেটে আনতে যাচ্ছে, এতে ইন্টারনেট ডট ওআরজি ভারতের সেই প্রচেষ্টার সঙ্গে যায়।
মার্ক জাকারবার্গ এর আগে মুক্ত ইন্টারনেটের কথা বললেও এবারে ভারতের নেট নিরপেক্ষতার প্রসঙ্গটির বিপক্ষে যুক্তি দিয়েছেন। জাকারবার্গ হিন্দুস্তান টাইমসে এক আর্টিকেলে নেট নিরপেক্ষতার বিরুদ্ধে যুক্তি দেখিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘ইন্টারনেট নিরপেক্ষতার বিষয়টির সঙ্গে অধিক মানুষকে ইন্টারনেটের দুনিয়ায় আনার বিষয়টিতে কোনো সংঘর্ষ হবে না। আমরা মানুষকে অন্য ওয়েবসাইট দেখতে নিষেধ করছি না বা আমরা কোনো বিশেষ সুবিধা নিচ্ছি না।’