স্মার্টফোনে স্মার্ট থাকুন

স্মার্টফোন ব্যবহারের কিছু কৌশল জানা থাকলে অনেক কাজ করা যায়। মডেল: নিশা, ছবি: সুমন ইউসুফ
স্মার্টফোন ব্যবহারের কিছু কৌশল জানা থাকলে অনেক কাজ করা যায়। মডেল: নিশা, ছবি: সুমন ইউসুফ

এই সময়ের মোবাইল ফোনগুলো কেবল যোগাযোগের মাধ্যম নয়। বরং বেশি রেজ্যুলেশনের ক্যামেরা, মিউজিক প্লেয়ার, ডিজিটাল ডায়েরি, রেডিওসহ অন্য আরও বহু যন্ত্রাংশের সমন্বয়ে বিশেষ একটি স্মার্ট যন্ত্র হিসেবে একে নানা রকম কাজে ব্যবহার করা যাচ্ছে। ফোনগুলোতে আরও অনেক ধরনের সুবিধা থাকে, যেগুলো দৈনন্দিন কাজগুলো আরও সহজ করে দেয়। তবে স্মার্টফোনের সুবিধাগুলো কাজে লাগাতে চাই এর স্মার্ট ব্যবহার। কিছু কৌশল অবলম্বন করলে স্মার্টফোনের বিভিন্ন সুবিধা সহজেই নেওয়া যাবে।
ইন্টারনেটে তথ্য সমন্বয়
স্মার্টফোনে রাখা তথ্যগুলো নিয়মিত ইন্টারনেটের সঙ্গে সমন্বয় করা উচিত। অ্যান্ড্রয়েড, আইফোন এবং উইন্ডোজ ফোন থেকে গুগল, ড্রপবক্স, ওয়ানড্রাইভ, আইক্লাউডে তথ্য সমন্বয় করা যায়। ফাইল রাখার এই ক্লাউড সেবাগুলোতে বিনা মূল্যে ফোনে সংরক্ষিত ফোন নম্বর, ছবিসহ সবকিছু রাখা যায়। ফোন হারিয়ে গেলে বা নতুন ফোন ব্যবহার শুরু করলে তথ্যগুলো হারিয়ে যাবে না। অ্যাকাউন্ট সক্রিয় করা হলে স্বয়ংক্রিয়ভাবে ক্লাউডে সংরক্ষিত তথ্যগুলো নতুন ফোনে চলে আসবে।
ইন্টারনেটের মাধ্যমে ফোন করা
স্মার্টফোনের মাধ্যমে ইন্টারনেট ব্যবহার এখন জনপ্রিয়। ইন্টারনেট সংযোগ সক্রিয় থাকলে শুধু একটি অ্যাপ নামিেয়ই অন্যকে ফোন করা যায়। ইন্টারনেটের মাধ্যমে কথা বলার জন্য ভাইবার, হোয়াটসঅ্যাপ, ট্যাঙ্গো, স্কাইপ, ওগোর মতো অ্যাপ রয়েছে। এগুলো বিনা মূল্যে নামিয়ে পৃথিবীর যেকোনো স্থানে কথা বলা যায়। আর এর জন্য শুধু ইন্টারনেট প্যাকেজ থেকে ডেটা খরচটাই হয়ে থাকে।
জিপিএস এবং লোকেশন সার্ভিস
স্মার্টফোনে জিপিএস বা গ্লোবাল পজিশনিং সিস্টেম থাকে। নতুন কোনো জায়গা খুঁজে বের করতে বা পথ চিনে যাওয়ার জন্য এটি ব্যবহার করা যেতে পারে। গুগল ম্যাপ হলো জিপিএস বা লোকেশন সার্ভিসের জনপ্রিয় এবং কার্যকর অ্যাপ। পৃথিবীর প্রায় সব স্থানের মানচিত্র এবং কৃত্রিম উপগ্রহ থেকে তোলা ছবি থাকে এসব অ্যাপ।
অফিস স্যুট সফটওয়্যার

অফিসের কাজ করার জন্য মাইক্রোসফট ওয়ার্ড, পাওয়ারপয়েন্ট, গুগল ডকের মতো সফটওয়্যার বেশ জনপ্রিয়। এই সফটওয়্যারগুলো বিনা মূল্যে স্মার্টফোনে ব্যবহার করা যায়। এই অ্যাপ দিয়ে তৈরি ফাইলগুলো অনলাইনে রাখাও যায়।

অ্যাপের নোটিফিকেশন নিয়ন্ত্রণ
স্মার্টফোনে বিভিন্ন কাজের অ্যাপ ব্যবহার করা হয়। ধরন অনুযায়ী বিভিন্ন অ্যাপ বিভিন্ন সময় বিভিন্ন ধরনের বার্তা বা নোটিফিকেশন দেয়। কখন কোথায় আছেন, তার ওপর নির্ভর করে নোটিফিকেশন নিয়ন্ত্রণ করা উচিত। জরুরি কোনো আলোচনার সময় কিছুক্ষণ পরপরই যদি নোটিফিকেশন আসতে থাকে, তবে সেটি অশোভন মনে হবে। এ সমস্যা সমাধানের জন্যও রয়েছে কিছু অ্যাপ। যেগুলো ক্যালেন্ডারের অ্যাপয়েন্টমেন্টের তালিকা এবং প্রয়োজনে জিপিএস লোকেশন ব্যবহার করে ফোনের নোটিফিকেশন, রিংটোন পরিবর্তন ও নিয়ন্ত্রণের সুযোগ দেয়।

বিজনেস কার্ড সংরক্ষণ
বিজনেস বা ভিজিটিং কার্ড সংরক্ষণ করার জন্য আলাদা করে এখন আর কার্ড হোল্ডারের প্রয়োজন নেই। স্মার্টফোনেই ভিজিটিং কার্ড সংরক্ষণ করা যায়। ফোনের ক্যামেরা দিয়ে কার্ডটি স্ক্যান করে সংরক্ষণ করা যায়। কার্ডের তথ্য ফোনের কন্টাক্টের সঙ্গেও যুক্ত করা যায়।

ই-মেইল এবং টেক্সট অটো/কুইক রেসপন্স
দরকারি কাজের সময় কারও ফোন কল এলে মাঝে মাঝে সেটি ধরা সম্ভব হয় না। এ ক্ষেত্রে স্মার্টফোনের অটো রেসপন্স বা কুইক রেসপন্ড সুবিধাটি ব্যবহার করা যেতে পারে। এখানে আগে থাকেই সংক্ষিপ্ত বার্তা সংরক্ষণ করে রাখা যাবে এবং নির্দিষ্ট সময় এ বার্তাগুলো পাঠানো যেতে পারে।

অনুবাদের অ্যাপ
বিদেশ ভ্রমণের সময় যদি ওই দেশের ভাষায় কথা বলতে বা লিখতে অভ্যস্ত না হয়ে থাকেন, তবে স্মার্টফোনে আগে থেকেই গুগল ট্রান্সলেটর বা অন্যান্য ট্রান্সলেশন অ্যাপ ব্যবহার করা উচিত। সাধারণত গুগল ট্রান্সলেটর অ্যাপে কিছু লেখা হলে সেটি অনুবাদ করতে ইন্টারনেট সংযোগের প্রয়োজন হয়। তবে প্রয়োজনের সময় ইন্টারনেটের জন্য অপেক্ষা না করে আগে থেকেই নির্দিষ্ট ভাষার ল্যাঙ্গুয়েজ প্যাক ইনস্টল করে রাখা যেতে পারে।

ভ্রমণের সহযোগী
নতুন কোথাও বেড়াতে গেলে আশপাশের দর্শনীয় স্থান, থাকার হোটেল বা ভালো খাবারের রেস্তরাঁ খোঁজার জন্য রয়েছে বিশেষ বিশেষ অ্যাপ। এর মেধ্য অন্যমত হলো গুগল ম্যাপ, ফোরস্কোয়ার, ইয়েল্প। আবার ভ্রমণের পরিকল্পনা করার সময় ব্যবহার করতে পারেন ট্রিপ অ্যাডভাইজর অ্যাপ। এসব অ্যাপে ব্যবহারকারীর অবস্থানের ওপর নির্ভর করে আশপাশের গুরুত্বপূর্ণ স্থানের তালিকা পাওয়া যাবে।

এক চার্জেই অনেক ক্ষণ
স্মার্টফোন ব্যবহারের ক্ষেত্রে প্রায় সবার অভিযোগ যে ফোনে বেশি সময় চার্জ থাকে না। স্মার্টফোনে বিভিন্ন ধরনের অ্যাপ এবং সার্ভিস ব্যবহার করা হয়, আর বেশি সার্ভিস ব্যবহার করা হলে দ্রুত চার্জ কমতে থাকে। এ কারণে প্রয়োজনের সময় ছাড়া কিছু সার্ভিস বন্ধ করে রাখা যেতে পারে। যেমন ব্লুটুথ সক্রিয় থাকলে সেটি কিছুক্ষণ পরপরই ফোনের নিকটবর্তী অন্যান্য ব্লুটুথ যন্ত্র খোঁজে এবং সংযোগ স্থাপনের চেষ্টা করে, ইন্টারনেট ব্যবহারের ক্ষেত্রে মোবাইল ডেটা ওয়াই–ফাইয়ের চেয়ে কয়েক গুণ বেশি ব্যাটারি ব্যবহার করে। এ কারণে দ্রুত চার্জ ফুরিয়ে যায়। তারহীন সংযোগগুলোর ক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি চার্জ কমিয়ে দেয় জিপিএস। তাই সাধারণ ব্যবহারের ক্ষেত্রে ব্লুটুথ, ওয়াই–ফাই, জিপিএস এবং মোবাইল ডেটা সার্ভিস বন্ধ রাখা উচিত।
ডটকম প্রতিবেদক। সূত্র: একাধিক ওয়েবসাইট