ফুসফুস ক্যানসারের প্রধান কারণ ধূমপান

.
.

১৮৭৮ সাল পর্যন্ত ফুসফুস ক্যানসার ছিল অতি বিরল ঘটনা। তখন মাত্র ১ শতাংশ মানুষ এ রোগে আক্রান্ত হতো। এক শতাব্দীর ব্যবধানে তা বেড়ে হলো ১০ শতাংশ। গবেষকেরা বলছেন, তামাক গ্রহণের সঙ্গে সঙ্গে ফুসফুস ক্যানসার আক্রান্তের সংখ্যাও বৃদ্ধি পাচ্ছে। সিগারেটে ২৫০টি উপাদান স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর। এর মধ্যে কমপক্ষে ৭০টি উপাদানের সঙ্গে ক্যানসারের সংশ্লিষ্টতা প্রমাণিত হয়েছে।
ফুসফুস ক্যানসারের ক্ষেত্রে ধূমপায়ীরা অধূমপায়ীদের চেয়ে ১৫-৩০ গুণ বেশি ঝুঁকিপূর্ণ। ঝুঁকির মাত্রা বেড়ে যায় যদি দীর্ঘদিন ধূমপানে অভ্যস্ত থাকেন, দৈনিক কয়েক প্যাকেট সিগারেট পান করেন, তরুণ বয়সেই সিগারেটে আসক্ত হন। ফুসফুস ক্যানসারের অন্যান্য ঝুঁকিপূর্ণ বিষয় যেমন কর্মক্ষেত্রে এসবেস্টস, ক্রোমিয়াম, নিকেল, ঘরে-বাইরে পরিবেশ দূষণ, কলকারখানা ও মোটরযানের তেল পোড়ানো ধোঁয়া, পানির আর্সেনিক, খাদ্যতালিকায় যথেষ্ট পরিমাণ অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট খাবার না খাওয়া এই ঝুঁকি আরও অনেক গুণ বাড়িয়ে দেয়।
নিজে ধূমপান না করেও অন্যের ধূমপানের ধোঁয়ার শিকার হয়ে (পরোক্ষ ধূমপান) ফুসফুস ক্যানসারের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠতে পারেন যে কেউ। গবেষণায় প্রমাণিত হয়েছে, ১৫ শতাংশ ফুসফুস ক্যানসার পরোক্ষ ধূমপানের কারণে হয়ে থাকে।
ধূমপান ছেড়ে দেওয়ার সুফলের ওপরও অনেক গবেষণা হয়েছে। দীর্ঘদিনের গবেষণায় দেখা গেছে যে ধূমপান ছেড়ে দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই এর উপকারিতা শুরু হয়। ফুসফুস ক্যানসারের ঝুঁকি কমতে থাকে। তবে সিগারেট পুরোপুরি ছেড়ে না দিয়ে এর পরিমাণ কমিয়ে দিলে কোনো উপকার হয় না বা ঝুঁকিও কমে না।
বর্তমান বিশ্বে ফুসফুস ক্যানসারে আক্রান্তদের মধ্যে পুরুষেরা শীর্ষ অবস্থানে।
জাতীয় ক্যান্সার গবেষণা ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালে আসা (২০০৯ থেকে ২০১৪ পর্যন্ত) ফুসফুস ক্যানসার আক্রান্ত ৭ হাজার ৪৩০ জন রোগীর ওপর এক গবেষণায় দেখা গেছে, ৯০ শতাংশের বেশি ফুসফুস ক্যানসারের রোগী ধূমপান, পান-জর্দা, সাদাপাতা, গুল ব্যবহারে অভ্যস্ত ছিলেন। নারী রোগীদের মধ্যে ২০ শতাংশ ধূমপায়ী। ৬০ শতাংশ পানের সঙ্গে জর্দা, সাদাপাতা, তামাকপাতা, গুল ব্যবহারকারী ও পরোক্ষ ধূমপানের শিকার। হাসপাতালে নিবন্ধিত রোগীদের ক্ষেত্রে দেখা গেছে, পুরুষদের এক নম্বর ক্যানসার হলো ফুসফুস ক্যানসার। নারীদের মধ্যেও এ রোগের হার বেড়েই চলেছে।
২০১২ ও ২০১৩ সালে হাসপাতালে নিবন্ধিত ফুসফুস ক্যানসার আক্রান্তদের ওপর গবেষণা করে দেখা গেছে, প্রায় ৬০ শতাংশ রোগী রোগ শনাক্ত হওয়ার ছয় মাসের মধ্যেই মারা যান। মাত্র ২৫ শতাংশ রোগী রোগ শনাক্ত হওয়ার পর এক বছর পার করতে পারেন। এর একটি প্রধান কারণ হলো রোগের প্রাথমিক উপসর্গ সম্পর্কে তেমন কোনো ধারণা না থাকা এবং অনেক দেরিতে শনাক্ত হওয়া। কিন্তু ফুসফুস ক্যানসার এমনই ভয়াবহ রোগ, যা আগে থেকে সচেতন হয়ে বা নিয়মিত স্ক্রিনিংয়েও খুব একটা সুফল নাও পাওয়া যেতে পারে। কেননা পশ্চিমা বিশ্বের অনেক বড় বড় ক্যানসার সংস্থা প্রাথমিক পর্যায়ে রোগনির্ণয় করার জন্য জনগণের মধ্যে নিয়মিত ফুসফুস ক্যানসার স্ক্রিনিং করে আসছে। এর ফলে অধিক সংখ্যক ফুসফুস ক্যানসার রোগী শনাক্ত হলেও ফুসফুস ক্যানসারজনিত মৃত্যুহার কমছে না।
তাই এই ভয়ংকর রোগ থেকে বাঁচতে প্রতিরোধই সর্বোত্তম পথ। ধূমপানমুক্ত জীবন ও পরিবেশ গড়ে তোলার কোনো বিকল্প নেই। ধূমপান বর্জনের সঙ্গে সঙ্গে ধূমপায়ীদেরও এড়িয়ে চলুন।
না বলুন পানের সঙ্গে জর্দা, সাদাপাতা ও গুল ব্যবহারকে।
মেডিকেল অনকোলজি
জাতীয় ক্যানসার গবেষণা ইনস্টিটিউট ও হাসপাতাল