অন্যরকম হাট

উদ্যোক্তা হাটে ছিল তরুণদের ভিড়
উদ্যোক্তা হাটে ছিল তরুণদের ভিড়

ফেসবুকের একটি গ্রুপ “চাকরি খুঁজব না, চাকরি দেব”। মানে তাঁরা উদ্যোক্তা হতে চান। বাংলাদেশ ওপেন সোর্স নেটওয়ার্ক (বিডিওএসএন) পরিচালিত এ গ্রুপের উদ্যোগে ৬ ও ৭ অক্টোবর ঢাকার ডব্লিউভিএ মিলনায়তনে হয়ে গেল ‘উদ্যোক্তা হাট।’

‘হাঁটি হাঁটি পা পা করে আজ অতিক্রম করেছি দুই বছরেরও বেশি সময়। অপরিচিত মানুষ হয়ে গেল বন্ধু, সহযোদ্ধা! সম্মিলিত প্রয়াস আর প্রবল মানসিক প্রস্তুতি নিয়ে উদ্যোক্তা হয়েছি। এরপর ব্যবসায় নেমে পড়া (আনন্দের স্বরে)! আমাদের স্লোগানটা অনেক অনুপ্রেরণার, “পথে নামলেই পথ চেনা যায়”। আমরাও চিনেছি। আত্মনির্ভরশীল হওয়ার প্রতিটি পদক্ষেপেই ভালোলাগা থাকতে হবে।’ এভাবেই শুরুর কথাগুলো বলেন তরুণ উদ্যোক্তাদের একজন গদিঘরের স্বত্বাধিকারী এবং উদ্যোক্তা হাটের আহ্বায়ক আসাদ ইকবাল।

হাটে ছিল ২৫টি স্টল। সব স্টলেরই যাত্র শুরু হয়েছিল খুব স্বল্প পুঁজি দিয়ে। হাটে ছিল ১৪টি ই-বাণিজ্যভিত্তিক, ছয়টি হস্তশিল্পের ও হাতে তৈরি পোশাক এবং পৃষ্ঠপোষকদের পাঁচটি প্রতিষ্ঠান। অধিকাংশ প্রতিষ্ঠানই ব্যবসায় নেমে পার করেছে দুই বছরেরও বেশি সময়। তরুণ উদ্যোক্তাদের দিকনির্দেশনার জন্যও কাজ করছে ফেসবুকভিত্তিক এই গ্রুপ। গ্রুপটি গত দুই বছরে অ্যাকাউন্টিং, মার্কেটিং, ব্র্যান্ডিং ও বিজনেস প্রেজেন্টেশনের ওপর আটটি কর্মশালার আয়োজন করে; যেখানে তরুণ উদ্যোক্তাদের ব্যবসার বিভিন্ন কৌশল সম্পর্কে ধারণা দেওয়া হয়। এ ছাড়া ২০১৩ সালের এপ্রিলে গ্রুপের তরুণ উদ্যোক্তাদের উৎসাহিত করার জন্য ৩১ জন উদ্যোক্তাকে সম্মাননা ও ক্রেস্ট প্রদান করে। প্রতি মাসে তারা একটি করে উদ্যোক্তা আড্ডারও আয়োজন করে, যেখানে উদ্যোক্তারা খেলা মনে ব্যবসা-সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা করেন।

হাটে টেবিলে টেবিলে ছিল ব্যতিক্রম ধরনের পণ্যের পসরা। উদ্যোক্তাদের সংগঠিত করার জন্য ছিল বিডি ভেঞ্চার লিমিটেডের স্টল; যারা বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের উদ্যোক্তাদের পুঁজির ওপর ভিত্তি করে তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি, স্বাস্থ্য, শিক্ষা, ট্যুরিজম ইত্যাদি বিষয়ে বিনিয়োগ করার জন্য সহযোগিতা করে। এ ছাড়া ছিল সফটওয়্যার, হস্তশিল্প, ইলেকট্রনিকস পণ্য, উপহারসামগ্রী, গয়না, মোবাইল ফোনের প্রয়োজনীয় যন্ত্রাংশ, সৌরশক্তিচালিত পণ্য, মেয়েদের পোশাক, খেলাধুলার সামগ্রী, টি-শার্ট, চামড়াজাত পণ্য, মেয়েদের জুতাসহ আরও অনেক বাহারি পণ্য। হাটে অংশগ্রহণ করেছিল কল্পবাবু ডট কম নামে অন্যরকম একটি ই-বাণিজ্যের ওয়েবসাইট; যেখানে বাংলায় বিভিন্ন কৌতুক পড়া যাবে। বিভিন্ন ধরনের মগে নিজের নাম, ছবি ইত্যাদি প্রিন্ট করার সুবিধা নিয়ে হাটে অংশ নিয়েছিল মুদ্রণ ডট কম। চাইলে যে কেউ এক বা একাধিক মগে নিজের পছন্দসই কাজটি করতে পারবেন। ছিল শুধু নিজের প্রতিষ্ঠানের নাম লেখা প্লাস্টিকের ব্যাগ তৈরির সুবিধা দেয় এমন প্রতিষ্ঠান জেড প্যাকের স্টল। এ ছাড়া বিভিন্ন ধরনের যন্ত্রপাতি বিকিকিনি করে এমন কয়েকটি প্রতিষ্ঠানও হাটে অংশ নেয়। নানা রকম স্বাদের কফির স্টল ছিল সার্পাস বিডির। আরও ছিল একটি ইন্টারনেটভিত্তিক টেলিযোগাযোগ প্রতিষ্ঠান। বিক্রেতারা বলেন, প্রদর্শনীর সঙ্গে সঙ্গে বেচা-বিক্রিও হচ্ছে অনেক। শুধু পণ্য প্রদর্শনীই নয়, হাটে ই-কুরিয়ার বিডি কয়েকজন গ্রাহকের সঙ্গে করেছে একাধিক চুক্তিপত্রও। সব মিলিয়ে পণ্য প্রদর্শন, বিকিকিনি আর উদ্যোক্তাদের প্রয়োজনীয় বিভিন্ন কাজও হয়েছে হাটে।

বিডিওএসএনের সাধারণ সম্পাদক মুনির হাসান জানান, গ্রুপটির সদস্যসংখ্যা বর্তমানে ১৭ হাজারের কাছাকাছি। ‘আশা করছি, ২০১৪ সালের মধ্যে এই সদস্যসংখ্যা ২০ হাজার ছাড়িয়ে যাবে। তরুণ উদ্যোক্তাদের ব্যবসাসংক্রান্ত সব সমস্যার সমাধান দেওয়ার জন্য ‘উদ্যোক্তা ক্লিনিক’ নামে একটি পরামর্শক দল গঠন করা হবে।’

উদ্যোক্তা হাট পয়লা বৈশাখ কিংবা বইমেলার মতোই বাংলাদেশের ঐতিহ্যের সঙ্গে মিশে যাবে এবং আপামর বাঙালি উদযাপন করবে এই হাট, এমনই প্রত্যাশা গ্রুপের সব সদস্যের।