'বড় কিছু পেতে সময় লাগে'

মার্ক জাকারবার্গ
মার্ক জাকারবার্গ

বিনিয়োগ করলে অনেকেই ধৈর্য হারিয়ে বসেন। কিন্তু ফেসবুকের প্রতিষ্ঠাতা মার্ক জাকারবার্গ যেন অন্য ধাতুতে গড়া। ধৈর্যের প্রতিমূর্তি। ফেসবুক যেখানে কাঁড়ি কাঁড়ি টাকা উপার্জন করছে সেখানে ফেসবুকেরই অধীনে থাকা হোয়াটসঅ্যাপ, ইনস্টাগ্রাম, মেসেঞ্জারের থলি তিনি কেন এখনো ভরছেন না? বাজার বিশ্লেষকেদের এই প্রশ্নে জাকারবার্গের জবাব— ধৈর্য ধরুন, বড় কিছু পেতে সময় লাগে।
সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রে ফেসবুক আয়োজিত এক সম্মেলনে বাজার-বিশ্লেষকেদের সামনে এ বছরের দ্বিতীয় প্রান্তিক অর্থাৎ এপ্রিল থেকে জুন এ তিন মাসের আয় ঘোষণা করেছেন ফেসবুকের প্রতিষ্ঠাতা মার্ক জাকারবার্গ। বিশ্লেষকেদের পূর্বাভাসে ছাড়িয়ে গেছে ফেসবুকের প্রান্তিক আয়। তবে বিশ্লেষকেদের অনেকে প্রশ্ন তুলেছেন ফেসবুকের অধীনে থাকা অ্যাপ্লিকেশনগুলোর আয় নিয়ে। জাকারবার্গ এই বিশ্লেষকেদের সন্তুষ্ট করেছেন নানা প্রতিশ্রুতি, সম্ভাবনা আর ব্যবহারকারী বাড়ার পরিসংখ্যান দিয়ে।
ফেসবুক মেসেঞ্জার সম্পর্কে জাকারবার্গ বলেন, ‘আমরা নিখুঁতভাবে সবকিছু ঠিকঠাক করতে কিছুটা ধৈর্য ধরার আহ্বান জানাচ্ছি।’
ফেসবুকের প্রধান পরিচালন কর্মকর্তা শেরিল স্যান্ডবার্গ বলেন, ফেসবুকের তিনটি অ্যাপ্লিকেশনের ব্যবহারকারী আরও বাড়ানোর লক্ষ্য নিয়ে কাজ করছি আমরা। বর্তমানে মেসেঞ্জার অ্যাপ্লিকেশনটির ব্যবহারকারী ৭০ কোটি যা টুইটারের চেয়ে দ্বিগুণ। হোয়াটসঅ্যাপের ব্যবহারকারী ৮০ কোটি আর ইনস্টাগ্রামের ব্যবহারকারী ৩০ কোটি।
ইনস্টাগ্রামে বিজ্ঞাপন দেওয়া শুরু হলেও তা এখনো ফেসবুকের ওপর কোনো প্রভাব তৈরি করতে পারেনি। বাজার গবেষণা প্রতিষ্ঠান ফরেস্টার রিসার্চের বিশ্লেষক নেট এলিয়ট বলেন, ফেসবুক এখনই তাদের অ্যাপ্লিকেশনগুলোতে বিস্তারিত নতুন সুবিধা আনছে না। যখন মূল ব্যবসা ভালো চলে তখন বিলাসিতা করা ও সময় নিয়ে কাজ করার সুযোগ থাকে। তারা এই সুবিধাটি নিচ্ছে। জাকারবার্গের বিনিয়োগকারীরা হয়তো ত্বরিত ফল আশা করছেন কিন্তু জাকারবার্গের এত তাড়াহুড়ো নেই। গত ২৯ জুলাই বুধবারের অনুষ্ঠানে জাকারবার্গ সেই ২০০৬-০৭ সালের কথা স্মরণ করে বলেন, ওই সময় ফেসবুকের ব্যানারে বিজ্ঞাপন দেখানোর একটা চাপ ছিল। কিন্তু ব্যবহারকারীকে বিরক্ত না করে বিজ্ঞাপন ও আয় বাড়াতে যথেষ্ট সময় নিয়েছিল ফেসবুক। ফলে ফেসবুকের বিজ্ঞাপন এখন আর বিজ্ঞাপন বলে মনে হয় না।

জাকারবার্গ আরও বলেন, আমরা দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা নিয়ে এগিয়েছিলাম যাতে ফেসবুক ব্যবহারকারী ও ব্যবসার মধ্যে যোগাযোগ অর্থবহ হয় এবং বিজ্ঞাপন থেকে আয় আরও ভালো হয়। এখন মেসেঞ্জার বা অন্য অ্যাপ্লিকেশনের ক্ষেত্রেও একই পদ্ধতি অবলম্বন করা হচ্ছে।
অনেকদিন ধরেই বিনিয়োগকারীদের প্রত্যাশার পারদ চড়িয়ে যাচ্ছেন জাকারবার্গ। গত বছরের অক্টোবরে জাকারবার্গ বলেছিলেন, ফেসবুকের অধীনে থাকা অ্যাপ্লিকেশনগুলোর ব্যবহারকারী ১০০ কোটি না হওয়া পর্যন্ত সেখান থেকে অর্থ আয় করে সুবিধা পাওয়া যাবে না। জাকারবার্গের কথায় অবশ্য যথেষ্ট যুক্তি আছে। ক্যালিফোর্নিয়ায় জাকারবার্গের ফেসবুকের সদর দপ্তর থেকে কয়েক মাইল দূরেই টুইটারের সদর সপ্তর। কিন্তু ব্যবহারকারীর হিসেবে ফেসবুক ও এর অ্যাপ্লিকেশনগুলোর চেয়ে অনেক পিছিয়ে আছে টুইটার। ৩০ কোটি ব্যবহারকারীর মাইলফলক পার হতে হিমশিম খেতে হচ্ছে টুইটারকে। এদিকে, ফেসবুক বিভিন্ন সেবা, বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান কিনে ফেসবুক ও বিভিন্ন অ্যাপ্লিকেশন ব্যবহারের প্রলুব্ধ করছেন মানুষকে। ব্যবহারকারী বাড়লে আয়ও বাড়বে।
ফেসবুকের বড় বাজি
ফেসবুকের বড় বাজির ঘোড়া হচ্ছে অকুলাস। সম্প্রতি ভারচুয়াল রিয়েলিটি হেডসেট নির্মাতা অকুলাসকে কিনেছে ফেসবুক। জাকারবার্গের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা এই ভারচুয়াল রিয়েলিটি নিয়েই। সম্প্রতি ফেসবুক আয়োজিত এক প্রশ্নোত্তর অনুষ্ঠানে জাকারবার্গ তাঁর প্রতিষ্ঠানের ভবিষ্যত নিয়ে বলেছেন, ‘টেলিপ্যাথি হবে যোগাযোগের ভবিষ্যৎ’। বাজার-বিশ্লেষকেরা বলছেন, ভারচুয়াল রিয়েলিটির কথা মাথায় নিলেও এই ক্ষেত্রের বিনিয়োগকারীদের লভ্যাংশ পেতে আরও দেরি হবে। আগামী বছরের আগে অকুলাসের হেডসেট বাজারে পাওয়া যাবে না। অনলাইনের এই যুগে ত্রিমাত্রিক ভিডিও দেখার ক্ষেত্রে এই হেডসেটকে গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করছেন জাকারবার্গ। অকুলাস হেডসেট ছাড়াও ড্রোন থেকে ইন্টারনেট ও ইন্টারনেট ডট ওআরজি প্রকল্প নিয়েও কাজ করছেন তিনি।
জাকারবার্গের খরচ
ফেসবুক একদিকে যেমন আয় করছে তেমনি ব্যয়ও বাড়াচ্ছে সমানে। গত প্রান্তিকে সবচেয়ে বেশি লোক নিয়োগ দিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি। অধিকাংশ কর্মী নিয়োগ হয়েছে গবেষণা ও উন্নয়ন খাতে। ফেসবুকের যে দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা তাতে গবেষণার বিকল্প নেই। ফেসবুকের দীর্ঘমেয়াদি এ রকম একটি প্রকল্প হচ্ছে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা।
গত প্রান্তিকে ফেসবুকের বিজ্ঞাপন বিক্রি ৩৯ শতাংশ বেড়েছে। ফেসবুক থেকে আয় যখন বাড়ছে তখন জাকারবার্গ তাঁর অন্য ব্যবসা ও উদ্যোগগুলো থেকে অর্থ আয়ের পরিবর্তে আরও বিনিয়োগ ও সময় দিতেই পারেন! (ব্লুমবার্গ)