পানি শোধনের বই

.
.

বই তো কত রকমেরই হয়—পাঠ্যবই, গল্পের বই, ছবির বই। কিন্তু এবার আসছে পানি শোধনের বই। এই বইয়ের পৃষ্ঠা ব্যবহার করে পানি বিশুদ্ধ করা যায়। আর কীভাবে পানি বিশুদ্ধ করা হয়, কেন তা প্রয়োজন, সেটিও লেখা রয়েছে এ বইয়ে।
এককথায়—তথ্য ও বিশুদ্ধ পানি—দুই-ই মিলবে এই ‘পানযোগ্য’ বইয়ে। এরই মধ্যে বইটির কার্যকারিতা পরীক্ষায় বাংলাদেশেও সাফল্য এসেছে। বছর খানেকের মধ্যে তা পৌঁছাবে মানুষের হাতে।
কয়েক বছরের চেষ্টায় বইয়ের পৃষ্ঠার মাধ্যমে পানি বিশুদ্ধ করার এ প্রযুক্তিটি বের করেন যুক্তরাষ্ট্রের কারনেগি মেলন বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক টেরি ডানকোভিচ। সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের বোস্টনে রাসায়নিক সমিতির ২৫০তম জাতীয় সম্মেলনে ‘পানযোগ্য’ ওই বইটির কার্যকারিতার বিষয়টি উপস্থাপন করা হয়।
এই বইয়ের পৃষ্ঠাগুলোতে রয়েছে রুপা ও তামার খুদে কণার আস্তরণ, যা মূলত পানিতে থাকা ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়া মেরে ফেলে। পরীক্ষার জন্য বাংলাদেশ, দক্ষিণ আফ্রিকা ও ঘানার ২৫টি দূষিত উৎস থেকে পানি সংগ্রহ করে এই পানযোগ্য বইয়ের পৃষ্ঠা ব্যবহার করার পর দেখা গেছে, পানি থেকে ৯৯ শতাংশের বেশি ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়া দূর করা গেছে।

পটুয়াখালী সদরে গত ৯ জুন পানি শোধনের বইয়ের কার্যকারিতা পরীক্ষা করা হয় l ছবি: আইডিইর সৌজন্যে
পটুয়াখালী সদরে গত ৯ জুন পানি শোধনের বইয়ের কার্যকারিতা পরীক্ষা করা হয় l ছবি: আইডিইর সৌজন্যে

বাংলাদেশে বইটির কার্যকারিতা পরীক্ষার সঙ্গে যুক্ত ছিল আন্তর্জাতিক সংস্থা আইডিই। সহযোগিতা করেছে ইকো করপোরেশন ও বিওপি ইনোভেশন সেন্টার। বইটির ব্যবহার ও প্রযুক্তি সম্পর্কে আইডিইর বাংলাদেশের ব্যবস্থাপক (কর্মসূচি সহায়তা) রাইসা চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, এক বছরের মধ্যে বাংলাদেশে বইটি আনা যাবে বলে আশা করা হচ্ছে। তবে বাংলাদেশে বইটির নকশা ও আকৃতি কেমন হবে তা নিয়ে এখনো পরীক্ষা-নিরীক্ষা চলছে।
আইডিই বলছে, বরিশাল, ভোলা ও পটুয়াখালী জেলার ১০টি এলাকার ৫০টি বাসাবাড়ির পানি নিয়ে বইটির কার্যকারিতা পরীক্ষা করা হয়েছে। গত জুন মাসে ১০ দিন ধরে পরীক্ষাটি চলে। এতে আফ্রিকার মতোই ভালো ফল পাওয়া গেছে। একেকটি পৃষ্ঠা ব্যবহার করে ১০০ লিটার পানি ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়ামুক্ত করা গেছে।
বইটির পৃষ্ঠা কীভাবে পানি বিশুদ্ধ করে?—এ প্রশ্নের উত্তরও গবেষক ডানকোভিচের অলাভজনক প্রতিষ্ঠান পেজ ড্রিংকিং ওয়াটারের ওয়েবসাইটে বিস্তারিত রয়েছে। প্রতিটি পৃষ্ঠাকে দুই অংশে ভাগ করে ব্যবহার করা যায়। কোনো একটি পানির পাত্র, জার বা কলসের মুখে ওই পৃষ্ঠাটি ছাঁকনি হিসেবে ব্যবহার করা হয়, যা পানিকে ব্যাকটেরিয়ামুক্ত করে। পৃষ্ঠাগুলোর পুরুত্ব অনেকটা শিরিস কাগজের মতো। বইটি প্রাথমিকভাবে ৫০ থেকে ১০০ পৃষ্ঠায় তৈরি করা হচ্ছে। তবে এখনো বাজারে বিক্রির জন্য তা ছাড়া হয়নি। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সঙ্গে যৌথভাবে বিশ্বের বিশুদ্ধ পানিবঞ্চিত ৬৬ কোটি ৩০ লাখ মানুষের জন্য ওই প্রযুক্তি কাজে লাগানোর উদ্যোগ নিয়েছেন গবেষক ডানকোভিচ।