এক কোটিপতির দুঃখ!

মাইনক্রাফটের প্রতিষ্ঠাতা মার্কাস পার্সসন।
মাইনক্রাফটের প্রতিষ্ঠাতা মার্কাস পার্সসন।

টাকা দিয়ে সুখ কেনা যায় না। অঢেল অর্থ-বিত্ত, সম্পদ থাকলেই যে মানুষ সুখী হয় তা কিন্তু নয়। জীবনে চলে আসতে পারে বিরক্তি, একাকিত্ব আর একঘেয়েমি। এমন ঘটনাই ঘটেছে বিশ্বের অন্যতম তরুণ কোটিপতি মার্কাস পার্সসনের ক্ষেত্রে। ভিডিও গেম মাইনক্রাফটের নির্মাতা তিনি। ৩৬ বছর বয়সে অঢেল অর্থবিত্তের মালিক হয়েও এখন তা নিয়ে বিশাল অশান্তির মধ্যে আছেন তিনি। টুইটারে গত কয়েক দিন ধরে টুইট করে তাঁর বিরক্তিকর জীবন, একাকিত্ব আর উদ্যমের অভাব সম্পর্কে বলছেন তিনি। অঢেল অর্থবিত্ত থাকলে নাকি একাকিত্ব চলে আসতে পারে!

মার্কাস এক টুইটে বলেছেন, ‘সবকিছু পেয়ে যাওয়ার অর্থ কোনো কিছু করার উদ্যোগ হারিয়ে ফেলা। এ অবস্থায় ভারসাম্যহীনতার কারণে মানুষের সঙ্গে কথা বলাও অসম্ভব হয়ে দাঁড়ায়।’

নিজের একাকিত্ব সম্পর্কে মার্কাস বলেন, ‘স্পেনের ইবিজার সমুদ্র সৈকতে বন্ধুদের সঙ্গে সময় কাটাচ্ছি, বিখ্যাত ব্যক্তিদের সঙ্গে পার্টি করছি, মন যা চাইছে তাই করছি ... অথচ এমন বিচ্ছিন্ন আর একাকী কখনোই বোধ করিনি।’

মার্কাস টুইটে জানিয়েছেন, তাঁর প্রতিষ্ঠানের কর্মীরা পর্যন্ত এখন তাকে ঘৃণা করে। যে মেয়েটিকে তিনি পছন্দ করেন, সেও পর্যন্ত তাকে আর তাঁর জীবনযাপন দেখে সঙ্গে থাকতে ভয় পায়। মার্কাসের পরিবর্তে সে বেছে নিয়েছে একজন সাধারণ মানুষকে।

মার্কাসের টুইটগুলো বিশ্বজুড়ে বিভিন্ন গণমাধ্যম লুফে নেয়। এ বিষয়টি নিয়ে বিভিন্ন গণমাধ্যমে খবর প্রকাশিত হলে তা চোখে পড়ে মার্কাসের। তখন আবার টুইট করে বলেন, ‘আমার হতাশা নিয়ে লেখালেখি হচ্ছে, কারণ সেদিন খুব বাজে একটা দিন কাটিয়েছিলাম। আজ দিব্যি আছি।’


টুইটে মার্কাস যাই বলুন না কেন, অধিক অর্থবিত্তের কারণে যে হতাশা চলে আসে তার একটা নাম আছে। সেটা হচ্ছে— ‘সাডেন ওয়েলথ সিনড্রোম’।

প্রযুক্তি উদ্যোক্তাদের মধ্যেই এ সমস্যা বেশি দেখা যায়। যে উদ্যোক্তারা একটি উদ্যোগ চালুর পর তা দাঁড়িয়ে গেলে বিশাল অঙ্কের অর্থের বিনিময়ে বড় প্রতিষ্ঠানের কাছে তা বিক্রি করে দেন। এতে তাঁর হাতে বিপুল পরিমাণে অর্থ চলে আসে। কিন্তু একজন উদ্যোক্তা হিসেবে তাঁর সৃজনশীলতা, উদ্ভাবনী শক্তি ও স্বপ্ন পূরণে দিনরাত খাটার যে মানসিকতা তা বাধাগ্রস্ত হয়ে পড়ে। হাতে অনেক অর্থ থাকায় সুখের নেশায় হয়তো পাহাড়ের ওপর প্রাসাদসম বাড়ি কেনা যায় কিন্তু ওই সুখ একাকিত্বে দুঃখে পরিণত হতে পারে। এ ছাড়াও, মনের মধ্যে অন্যের প্রতি অবিশ্বাস জন্ম নিতে শুরু করে। মনে হয়— আশপাশের সবাই স্বার্থান্বেষী; কিছু না কিছু চাইতে আসছে। তখন নিজের যক্ষের ধন আগলাতে একাকিত্বের কারাগারে গুমরে মরতে হয়। মার্কাসের টুইট থেকে এই শিক্ষাটাই মেলে।

সাত কোটি মার্কিন ডলার খরচ করে বেভারলি হিলসে একটি প্রাসাদ কিনেছেন মাইনক্রাফট গেমটির নকশাকার মার্কাস পার্সসন। সেখানকার একটি পুলের ছবি।
সাত কোটি মার্কিন ডলার খরচ করে বেভারলি হিলসে একটি প্রাসাদ কিনেছেন মাইনক্রাফট গেমটির নকশাকার মার্কাস পার্সসন। সেখানকার একটি পুলের ছবি।



যেভাবে কোটিপতি হন মার্কাস পার্সসন

তাঁর পুরো নাম মার্কাস অ্যালেক্সেজ পার্সসন। ১৯৭৯ সালের ১ জুন সুইডেনে জন্মগ্রহণ করেন। সুইডেনের ভিডিও গেম প্রোগ্রামার ও গেম ডিজাইনার হিসেবে সুপরিচিত। ২০১০ সালে জ্যাকব পোরসার ও কার্ল ম্যানেহকে নিয়ে তিনি ভিডিও গেম কোম্পানি মোজাং প্রতিষ্ঠা করেন। মোজাং প্রতিষ্ঠার জন্য মার্কাসের মূলধন ছিল মাইনক্রাফট নামের ভিডিও গেমটি। ২০০৯ সালে গেমটির ডেমো সংস্করণ ছাড়েন তিনি। এরপরে গেমটি দ্রুত জনপ্রিয় হয়। ১০ লাখেরও বেশি কপি বিক্রি হয় গেমটি। এ গেমটির সুবাদে অনেক পুরস্কার জেতেন ও বিশ্বের বড় বড় শিল্পপতিদের সঙ্গে যোগাযোগ তৈরি হয়। পরে গেমটির মোবাইল সংস্করণ তৈরিতেও কাজ করেন তিনি। ২০১১ সালে মাইনক্রাফট আনুষ্ঠানিকভাবে উন্মুক্ত হয়। গত বছরের নভেম্বরে ২৫০ কোটি মার্কিন ডলারে মোজাংকে কিনে নিয়েছে মাইক্রোসফট।

২০১১ সালের ১৩ আগস্ট এলিন জেটারস্ট্র্যান্ড নামের একজনকে বিয়ে করেছিলেন মাইনক্রাফটের প্রতিষ্ঠাতা। তবে এক বছরের মাথায় নিজেকে একাকী ঘোষণা করেন মার্কাস। ২০১৪ সালের সেপ্টেম্বরে মাইক্রোসফটের কাছে মোজাং বিক্রি করে দিয়ে প্রতিষ্ঠান থেকে বেরিয়ে যান তিনি। গত বছরের ডিসেম্বরে সাত কোটি মার্কিন ডলার ব্যয়ে ক্যালিফোর্নিয়ায় একটি প্রাসাদসম বাড়ি কেনেন তিনি। কেনার মাত্র আট মাস যেতে না যেতেই এই বাড়ি তার কাছে এখন ‘কারাগার’ মনে হচ্ছে বলেই টুইট করা শুরু করেছেন তিনি। (সিনেট, রিকোড, ডেইলি মেইল)