ওত পেতে আছে হ্যাকার

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহারে সচেতনতা ও সতর্ক থাকা জরুরি l প্রজন্ম ডটকম
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহারে সচেতনতা ও সতর্ক থাকা জরুরি l প্রজন্ম ডটকম

ঘটনা এক
সপ্তাহ খানেক আগে এক সন্ধ্যায় ল্যাপটপ খুলে ফেসবুকে ঢুঁ মারছি। এমন সময়, হঠাৎ পরিচিত এক ছোট বোনের বার্তা এল। একটি ওয়েবসাইটের লিংক দিয়ে সে অনুরোধ করেছে, আমি যেন সেখানে গিয়ে তার ছবিতে একটা লাইক দিই। ভালো কথা, সেরা ছবি নির্বাচনে ভোট দেওয়ার অভিজ্ঞতা তো নতুন নয়। কিন্তু, সেই লিংকে ক্লিক করতেই ছবি না এসে ফেসবুকের মতো একটা পেজ এল, যেখানে আবার ই-মেইল ঠিকানা ও পাসওয়ার্ড লিখে লগ-ইন করতে বলা হলো। এই জায়গাটায় এসে খটকা লাগল। কারণ, ফেসবুকের কোনো ‘অ্যাপ’-এর জন্য কোনো অনুমতি লাগলে শুধু সম্মতি (অ্যালাউ) দিলেই হয়, নতুন করে লগ-ইন করতে হয় না।
মেয়েটি আমাকে সাধারণত ‘আপনি’ করে সম্বোধন করে। কিন্তু সাড়া না পেয়ে এর কিছুক্ষণ পর আরেক বার্তায় মেয়েটি আমাকে সরাসরি ‘তুমি’ বলে সম্বোধন করে একটা সাহায্য চাইল। খুব করুণ ভাষায় সে জানাল, এই মুহূর্তে তার কমপক্ষে দুই হাজার টাকার খুব দরকার, বেশি হলে ভালো হয়। ওর মায়ের অসুখ। আগামীকাল সকালেই নাকি আবার ফেরত দিয়ে দেবে। এবার নিশ্চিত হওয়া গেল যে পরিচিতি অর্থাৎ আইডি হ্যাক করা হয়েছে। যেহেতু মেয়েটির সঙ্গে আমার তেমন একটা বার্তা আদান-প্রদান হয়নি, তাই হ্যাকার স্বাভাবিকভাবে ধরে নিয়েছে আমাদের মাঝে ‘তুমি’র সম্পর্ক। ‘কীভাবে পাঠাব?’ জানতে চাইলে সে একটি ব্যক্তিগত বিকাশ অ্যাকাউন্ট নম্বর দিল। ফাঁদে পা দিলাম না। তাঁর মোবাইল নম্বর নেই বলে দুজনেরই বন্ধু (মিউচুয়াল ফ্রেন্ড) এমন দুজনের মাধ্যমে মেয়েটিকে বিষয়টি জানানোর চেষ্টা করলাম।
ঘটনা দুই
যে কলেজে পড়েছি, সেই কলেজের এক বড় ভাই (বর্তমানে দন্ত চিকিৎসক) অসীম দাসের ফেসবুক আইডি থেকে মেসেজ দিয়ে দিনেদুপুরে টাকা চাওয়া হলো। ধরনটা প্রায় একই রকম। ছোট ভাইয়ের জন্য টাকার দরকার। ব্যক্তিগত বিকাশ নম্বর দেওয়া হলো। পরদিনই নাকি ফেরত দেবে। পূর্ব অভিজ্ঞতার কারণে অনুমান করলাম এই ফেসবুকে অ্যাকাউন্টটিও হ্যাকড হয়েছে। বিষয়টি অ্যাকাউন্টের আসল মালিককে ফোন করলাম। তিনি ইতিমধ্যেই তা জেনেছেন বলে জানালেন। বললেন, তিনি যখন বন্ধুতালিকার সবাইকে সতর্ক করে দেওয়ার চেষ্টা করছেন, ততক্ষণে নাকি তাঁর দুই বড় ভাই ফাঁদে পা দিয়ে ‘ছোট ভাই’য়ের অনুরোধে ইতিমধ্যেই চার হাজার টাকা বিকাশ করে দিয়েছেন!
হ্যাকিং প্রতিরোধে করণীয়
এই ধরনের বিব্রতকর ও বিপজ্জনক পরিস্থিতিতে পড়তে না চাইলে প্রথমেই অক্ষর ও সংখ্যা দিয়ে বৈচিত্র্যময় শক্ত একটি পাসওয়ার্ড দিন। দুই-তিন মাস পরপর এই অক্ষর ও সংখ্যাগুলো পুনর্বিন্যাস করে নতুন পাসওয়ার্ড দিন। এতে মনে রাখা সহজ হবে। একেবারেই মনে না থাকলে গোপন কোথাও লিখে রাখুন। হ্যাকাররা সাধারণত ফেসবুক আইডির সঙ্গে সঙ্গে যে ই-মেইল আইডি দিয়ে সেটা খুলেছেন, সেটাও হ্যাক করে থাকে, যাতে সোজা পথে আইডি ফিরে পাওয়া (রিকভারি) না যায়। তাই ই-মেইল আইডির পাসওয়ার্ডটাও শক্ত হওয়া চাই, তবে তা ফেসবুকেরটা না হলেই ভালো।
হ্যাকড হয়েই যায় যদি
এত সতর্কতার পরেও যদি আপনার আইডি হ্যাকিংয়ের শিকার হয়, তবে এই অ্যাকাউন্টটি মুছে দেওয়াই ভালো। প্রথমেই নিকটস্থ থানায় গিয়ে একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করুন। কারণ, হ্যাকার আপনার নাম-পরিচয় ব্যবহার করে জঙ্গিবাদ, অশ্লীলতা, সাম্প্রদায়িক উসকানি ইত্যাদি ছড়াতে পারে, যার জন্য আপনি বিপদে পড়তে পারেন। টাকা চাওয়ার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে লিখিত অভিযোগ দিতে পারেন। এরপর বন্ধুদের বলুন আইডিটার বিরুদ্ধে ‘ফেইক’ উল্লেখ করে ‘রিপোর্ট’ করতে। আপনি নিজেও আরেকটি আইডি খুলে হ্যাকড হওয়া অ্যাকাউন্টটির বিরুদ্ধে ‘প্রিটেন্ডিং টু বি মি’ বলে রিপোর্ট করুন। অনেকে মিলে রিপোর্ট করলে এবং অভিযোগের সত্যতা পেলে ফেসবুক কর্তৃপক্ষ অ্যাকাউন্টটি বন্ধ করে দেবে অথবা আপনাকে ফিরিয়ে দেবে।