বাংলাদেশ তথ্যপ্রযুক্তির নেতৃস্থানীয় জায়গায় যাবে

>তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবসা খাতের সংগঠনগুলোর আন্তর্জাতিক জোট ওয়ার্ল্ড ইনফরমেশন টেকনোলজি অ্যান্ড সার্ভিসেস অ্যালায়েন্স-উইটসার সভাপতি সান্তিয়াগো গুতিয়ারেজ তিন দিনের এক সফরে সোমবার ঢাকায় এসেছেন। উইটসার কোনো সভাপতির এই প্রথম বাংলাদেশে আসা। আজ মঙ্গলবার বিকেলে রাজধানীর প্যান প্যাসিফিক সোনারগাঁও হোটেলে প্রথম আলোকে কিছু সময় দেন তিনি। এ সময় তিনি তথ্যপ্রযুক্তির আন্তর্জাতিক ব্যবসা খাত, বাংলাদেশের সম্ভাবনা ইত্যাদি বিষয়ে কথা বলেন। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন পল্লব মোহাইমেন
সান্তিয়াগো গুতিয়ারেজ। ছবি: খালেদ সরকার
সান্তিয়াগো গুতিয়ারেজ। ছবি: খালেদ সরকার

যেসব লক্ষ্য নিয়ে উইটসা গঠিত হয়েছিল, সেসব কি পূরণ হচ্ছে?
সান্তিয়াগো গুতিয়ারেজ: তিনটি মূল উদ্দেশ্য নিয়ে ১৯৭৮ সাল থেকে উইটসার যাত্রা শুরু। এগুলো হচ্ছে-তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি (আইসিটি) খাতের উন্নয়নে নীতিমালা তৈরিতে সহায়তা করা, সদস্য দেশগুলোতে বাণিজ্য ও বিনিয়োগ বাড়ানো এবং সদস্যদের মধ্যে তথ্য আদান-প্রদান করা। যাতে সদস্যদের মাধ্যমে প্রতিটি দেশে আইসিটি খাতের উন্নয়ন করা যায়। এসব লক্ষ্য নিয়েই আমাদের জোট কাজ করে যাচ্ছে। আমি মনে করি উইটসা তার লক্ষ্য পূরণ করতে পারছে। উইটসা নীতিমালা প্রণয়নে বিভিন্ন সংস্থার মাধ্যমে অ্যাডভোকেসিও করে।
উইটসার সদস্যসংখ্যা বর্তমানে কত?
সান্তিয়াগো গুতিয়ারেজ: উইটসার সদস্য এখন ৮১টি দেশ। প্রতিটি দেশের তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবসা খাতের একটি করে সংগঠন উইটসার সদস্য। বাংলাদেশ থেকে যেমন আছে বাংলাদেশ কম্পিউটার সমিতি (বিসিএস)। উইটসার সদর দপ্তর যুক্তরাষ্ট্রের ভার্জিনিয়ায়।
উইটসার বড় সাফল্য কী বলে আপনি মনে করেন?
সান্তিয়াগো গুতিয়ারেজ: বিভিন্ন দেশে তথ্যপ্রযুক্তির জন্য দরকারি নীতিমালা প্রণয়নে সদস্যদের মাধ্যমে ভূমিকা রাখা আমাদের বড় সাফল্য। এতে বৃহত্তর জনগোষ্ঠীর কাছে আইসিটি অর্থাৎ ডিজিটাল প্রযুক্তি সম্পর্কে সচেতনতা বাড়ানো গেছে।
ডিজিটাল বাংলাদেশ ধারণাটির সঙ্গে আপনি পরিচিত?
সান্তিয়াগো গুতিয়ারেজ: হ্যাঁ। অনেক ভালো একটি ধারণা। এর উন্নয়ন কর্মকাণ্ডে ডিজিটাল প্রযুক্তির ব্যবহার বেড়েছে। সরকার কম্পিউটার যন্ত্রাংশও আরও বেশি কিনছে।
উইটসা তো ব্যবসায়ীদের সংগঠন। ব্যবসায়ীদের স্বার্থ দেখতে গিয়ে ক্রেতা বা সাধারণ ব্যবহারকারীদের স্বার্থ ক্ষুণ্ন হয়?
সান্তিয়াগো গুতিয়ারেজ: অনেক সময় সমাজের সবার স্বার্থ আর ব্যবসা খাতের স্বার্থ একই রেখায় থাকে না। ব্যবসা খাতের নেতাদের ওপর এটা নির্ভর করে অনেকাংশে। একটা উদাহরণ দিই। আমি মেক্সিকোর প্রযুক্তি খাতের সংগঠন ‘কানিয়াতি’র সদস্য। যখন উইটসার সভাপতি হওয়ার প্রশ্ন এল, তখন আমি কানিয়াতির সদস্যদের বলি যে তোমরা যদি মনে করো আমি কোম্পানিগুলোর স্বার্থ দেখব, উইটসায় যাওয়ার দরকার নেই। আমি সভাপতি হলে ব্যবহারকারীদের স্বার্থেও কাজ করব। তারা আমার এই অবস্থান মেনে নিয়েছিল।

আইসিটির কোন ক্ষেত্রটিতে বাংলাদেশকে সম্ভাবনাময় বলে মনে হয়?
সান্তিয়াগো গুতিয়ারেজ: আউটসোর্সিং ও সফটওয়্যার তৈরি। পৃথিবীতে আইসিটির জন্য দক্ষ জনশক্তির অভাব রয়েছে। আর বাংলাদেশে আছে বিপুল জনগোষ্ঠী। তাঁদের উদ্ভাবনী ক্ষমতাও রয়েছে।
বাংলাদেশের মতো দেশগুলো উইটসার মাধ্যমে কীভাবে লাভবান হবে?
সান্তিয়াগো গুতিয়ারেজ: যাঁরা আইসিটি নিয়ে কাজ করছেন, তাঁদের কাজ উইটসার মাধ্যমে বিশ্বে ছড়িয়ে দেওয়া যেতে পারে। উইটসার সবচেয়ে বড় আয়োজন ‘ওয়ার্ল্ড কংগ্রেস অন আইটি’ ২০২১ সালে বাংলাদেশে হবে। এ ব্যাপারে আগামীকাল (আজ বুধবার) আইসিটি প্রতিমন্ত্রীর সঙ্গে আমার বৈঠক হবে। আমি আনন্দিত যে বাংলাদেশের ৫০ বছর পূর্তির বছরেই এ সম্মেলন হতে যাচ্ছে। এ সম্মেলনে বিভিন্ন দেশের দুই থেকে তিন হাজার প্রতিনিধি যোগ দেবেন। ফলে আপনাদের আইসিটি খাত অনেক কিছু পাবে বলে মনে করি।
তথ্যপ্রযুক্তি বাণিজ্যের বর্তমান ধারাটা কোন দিকে?
সান্তিয়াগো গুতিয়ারেজ: তথ্যপ্রযুক্তি সেবা ও পণ্য উৎপাদনের ধারা এখন চলছে। আগামী পাঁচ বছরে বাংলাদেশসহ এশিয়ার অনেকগুলো দেশে তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবসা খাতের প্রবৃদ্ধি ৫ শতাংশ করে বাড়বে। অন্যদিকে যুক্তরাষ্ট্র, জাপান, যুক্তরাজ্যের মতো দেশে এই হার ১ থেকে ২ শতাংশ হবে।
আইসিটির উন্নয়নে বাংলাদেশের দুর্বল দিক কোনটি?
সান্তিয়াগো গুতিয়ারেজ: পর্যাপ্ত অবকাঠামোর অভাব। বিশেষ করে যাতায়াতব্যবস্থা। এগুলো সবাই জানেন, এসব নিয়েও হয়তো কাজ হচ্ছে।
আর সবল দিক?
সান্তিয়াগো গুতিয়ারেজ: ডিজিটাল প্রযুক্তি নিয়ে বাংলাদেশের পরিষ্কার লক্ষ্য রয়েছে। আর তা হলো নিজেদের উন্নয়নে ডিজিটাল প্রযুক্তি ব্যবহার করা। সরকার, বেসরকারি খাত এবং শিক্ষাক্ষেত্র একসঙ্গে কাজ করে, এটা আমি বাংলাদেশে দেখেছি।
আইসিটি ব্যবসা খাতে বা এর উন্নয়নে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের ভূমিকা কেমন?
সান্তিয়াগো গুতিয়ারেজ: পারস্পরিক সহযোগিতার জন্য সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম অত্যন্ত শক্তিশালী। ফেসবুকসহ বিভিন্ন যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহার করে অনেক বেশি লাভবান হওয়া যায়।
বাংলাদেশের আইসিটি খাত সম্পর্কে কিছু বলুন।
সান্তিয়াগো গুতিয়ারেজ: কয়েক ঘণ্টায় যা দেখলাম, তাতে আইসিটি ব্যবসা এখানে খুবই গতিশীল। সরকারও এই খাত নিয়ে উৎসাহী। আগামী কয়েক বছরের মধ্যে বাংলাদেশ তথ্যপ্রযুক্তি জগতে নেতৃস্থানীয় জায়গায় যাবে।
এটা কি আপনি বিশ্বাস থেকে বলছেন?
সান্তিয়াগো গুতিয়ারেজ: হ্যাঁ। কারণ আমি বীজ দেখেছি, ইচ্ছা দেখেছি।
আপনাকে অনেক ধন্যবাদ।
সান্তিয়াগো গুতিয়ারেজ: আপনাকেও।

*১৯৪৯ সালে মেক্সিকোর ছোট শহর তেপতিৎলানে জন্ম সান্তিয়াগো গুতিয়ারেজের। তবে বেড়ে উঠেছেন রাজধানী মেক্সিকো সিটিতেই। মেক্সিকো বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ব্যবসায় প্রশাসনে স্নাতক এবং যুক্তরাষ্ট্রের ইউনিভার্সিটি অব পেনসিলভানিয়ার ওয়ালটন স্কুল থেকে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি নিয়েছেন। দেড় দশক আগে প্রতিষ্ঠা করেছেন ফোকালটা নামে টেলিযোগাযোগ পরামর্শক প্রতিষ্ঠান। তিনি নেক্সটপ্ল্যাট নামে ভিওআইপি সফটওয়্যার নির্মাতা প্রতিষ্ঠানেরও প্রতিষ্ঠাতা। সান্তিয়াগো বিবাহিত। এক মেয়ে ও এক ছেলের জনক।
২০১২ সালে তিনি উইটসার সভাপতি নির্বাচিত হন। ২০১৪ সালে দ্বিতীয় মেয়াদের জন্য তিনি আবার এই পদে নির্বাচিত হয়েছেন।