থেরেসা মে

থেরেসা মে ১৯৫৬ সালের ১ অক্টোবর ইংল্যান্ডের সাসেক্সের ইস্টবোর্নে জন্মগ্রহণ করেন। মার্গারেট থ্যাচারের পর দ্বিতীয় নারী হিসেবে যুক্তরাজ্যের সরকারপ্রধানের দায়িত্ব পালন করছেন তিনি। ২০১৬ সালের জুলাইয়ে দায়িত্ব গ্রহণ করেন থেরেসা মে। জুনে ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) থেকে যুক্তরাজ্যের বিচ্ছেদের (ব্রেক্সিট) বিষয়ে গণভোট হয়। এতে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরন ইইউতে থাকার পক্ষে ছিলেন। জনগণ বিচ্ছেদের পক্ষে রায় দিলে ক্যামেরন পরাজয় মেনে পদত্যাগ করেন। যুক্তরাজ্যের রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথ ডেভিড ক্যামেরনের পদত্যাগপত্র গ্রহণ করে কনজারভেটিভ পার্টির ঝানু রাজনীতিক থেরেসা মেকে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণের অনুরোধ জানান।

থেরেসা মে গণভোটে ইইউতে থাকার পক্ষেই প্রচার চালিয়ে ছিলেন। তবে প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব গ্রহণের পর তিনি বলেন, ‘ইইউ থেকে বিচ্ছেদ মানে বিচ্ছেদ। যুক্তরাজ্য কোনোভাবেই ইইউর সদস্য থাকবে না এবং সর্বোচ্চ স্বার্থ নিশ্চিত করেই যুক্তরাজ্য ইইউর সঙ্গে সম্পর্ক পুনর্নির্ধারণ করবে।’ দায়িত্ব নেওয়ার পর তিনি এমন এক সরকার গড়ার অঙ্গীকার করেন, যে সরকার সব মানুষের জন্য কাজ করবে, শুধু সুবিধাভোগী কিছু মানুষের জন্য নয়।

২০১৬ সালের জুলাইয়ে শুরু হওয়া পার্লামেন্টের মেয়াদ ২০২০ সাল পর্যন্ত থাকলেও ২০১৭ সালের এপ্রিলে হঠাৎ করেই মধ্যবর্তী নির্বাচনের ঘোষণা দেন প্রধানমন্ত্রী থেরেসা মে। ওই সাধারণ নির্বাচনের ফলাফলে থেরেসা মের কনজারভেটিভ পার্টি শীর্ষে থাকলেও পার্লামেন্টে একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা হারায়। যুক্তরাজ্যে এককভাবে সরকার গঠনের জন্য ৬৫০ আসনের পার্লামেন্টে প্রয়োজন হয় ৩২৬ আসন। কনজারভেটিভ পার্টি তা থেকে ৮টি কম আসন নিয়ে বৃহত্তম দল হিসেবে অবস্থান ধরে রাখে। উত্তর আয়ারল্যান্ডের রক্ষণশীল পার্টি ডিইউপি পার্লামেন্টে ১০টি আসন পায়। পরে ডিইউপির সঙ্গে সমঝোতা করে সরকার গঠনের ঘোষণা দেয় কনজারভেটিভ পার্টি।

অল্প বয়স থেকেই রাজনীতিতে সক্রিয় হন থেরেসা মে। ১৯৭৭ থেকে ১৯৮৩ সাল পর্যন্ত ব্যাংক অব ইংল্যান্ডের ফিন্যান্সিয়াল কনসালট্যান্ট হিসেবে কাজ করেন। ১৯৮৬ থেকে ১৯৯৪ সাল পর্যন্ত লন্ডন বারো অব মর্টনে কাউন্সিলর হন। ১৯৯৭ সালে সাধারণ নির্বাচনে পশ্চিম লন্ডনের মেইডেনহেডের পক্ষে তিনিই প্রথম নির্বাচিত পার্লামেন্ট সদস্য (এমপি) ছিলেন। ১৯৯৯ সাল থকে ২০১০ সাল পর্যন্ত ব্রিটেনের ছায়া কেবিনেটের সদস্য ছিলেন থেরেসা। ২০০২ সালে কনজারভেটিভ পার্টির প্রথম নারী চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন তিনি। দলটিকে মানুষ ‘বাজে একটি দল হিসাবে দেখে’ দলীয় সম্মেলনে এমন মন্তব্য করে সে সময় আলোচনায় আসেন তিনি। ২০১০ সালে পান স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর দায়িত্ব। প্রধানমন্ত্রী হওয়ার আগে ছয় বছর ধরে তিনি ডেভিড ক্যামেরনের মন্ত্রিসভায় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।

থেরেসা বেড়ে ওঠেন অক্সফোর্ডশায়ারে। তাঁর বাবা হিউবার্ট ব্রাসিয়ের ছিলেন যাজক। তাঁর মা ছিলেন গৃহিণী। সরকারি প্রাথমিক স্কুলে শিক্ষাজীবনের শুরু থেরেসা ব্রাসিয়েরের। এরপর কনভেন্ট স্কুল হয়ে তিনি উইটলি গ্রামের গ্রামার স্কুলে ভর্তি হন। পরে সেই স্কুলটির নাম হয় উইটলি পার্ক কম্প্রিহেনসিভ স্কুল। গ্রামীণ পরিবেশে বেড়ে ওঠা থেরেসা পকেট খরচা জোগাড় করতেন শনিবারে বেকারিতে কাজ করে। স্নাতক পড়াশোনার জন্য অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হন থেরেসা ব্রাসিয়ের। ১৯৭৬ সালে প্রেমে পড়েন একই বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র ফিলিপ মের। ফিলিপ মে তখন অক্সফোর্ড ইউনিয়নের সভাপতি ছিলেন। এই সংগঠনকে বলা হয় ভবিষ্যৎ রাজনীতিকের উত্থানের আঁতুড়ঘর। ফিলিপ-থেরেসার আলাপ করিয়ে দিয়েছিলেন অক্সফোর্ডেরই ছাত্রী সাবেক পাকিস্তানি প্রধানমন্ত্রী বেনজির ভুট্টো। অক্সফোর্ডের সেন্ট হিউ কলেজ থেকে ১৯৭৭ সালে ভূগোলে দ্বিতীয় বিভাগে বিএ ডিগ্রি অর্জন করেন। এরপর প্রায় ২০ বছর বিভিন্ন আর্থিক প্রতিষ্ঠানে কর্মরত ছিলেন তিনি।

১৯৮০ সালে বিয়ে করেন থেরেসা ও ফিলিপ। সেই থেকে একসঙ্গেই আছেন। এই দম্পতির কোনো সন্তান নেই। ১৯৮১ সালে দুর্ঘটনায় মারা যান থেরেসা মের বাবা। ক্রিকেট খেলার ভক্ত থেরেসা মে ভালোবাসেন হেঁটে বেড়াতে ও রান্না করতে। একবার এক সাক্ষাৎকারে থেরেসা মে জানান তাঁর বাড়িতে এক শর বেশি রান্নার বই আছে। গানের দল ‘অ্যাবা’র ভক্ত তিনি। ভীষণ ফ্যাশনসচেতন থেরেসা লেপার্ড ছাপার হিল জুতো সংগ্রহ করতে পছন্দ করেন। তবে ব্যক্তিগত বিষয় আড়ালে রাখতেই ভালোবাসেন থেরেসা। ২০১৩ সালে তিনি জানান, তাঁর টাইপ-১ ডায়াবেটিস আছে এবং বাকি জীবন তাঁকে দিনে দুবার ইনসুলিন নিতে হবে। তবে এই অসুখ তাঁর কর্মজীবনে কোনো প্রভাব ফেলবে না। অসম্ভব কর্মঠ একজন নারী থেরেসা মে।

আরও