১০টি উল্লেখযোগ্য কার্যক্রম:

প্রদর্শনী ও নিলাম অনুষ্ঠান : প্রথম আলো ও ‘ঢাকা শেরাটন’-এর যৌথ উদ্যোগে ১৯ এপ্রিল ২০০২ এসিডদগ্ধদের জন্য তহবিল সংগ্রহের উদ্দেশ্যে এক প্রদর্শনী ও নিলাম অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। এতে বাংলাদেশ, শ্রীলঙ্কা ও অস্ট্রেলিয়ার জাতীয় ক্রিকেট দলের স্বাক্ষরিত ব্যাট ও দেশের প্রথিতযশা চিত্রকরদের শিল্পকর্ম প্রদর্শনীর পর নিলামে তোলা হয়। এছাড়া নাসির আলী মামুনের আলোকচিত্রও এ অনুষ্ঠানে বিক্রি করা হয়। এ নিলাম থেকে মোট ৬ লাখ ৩১ হাজার টাকা সংগ্রহ হয়। একই অনুষ্ঠানে কণ্ঠশিল্পী শাকিলা জাফর তার একটি সোনার হার এ তহবিলে দান করেন।

আন্তর্জাতিক নারীদিবসে পুরুষদের র্যালি : প্রতিবছর ৮ মার্চ আন্তর্জাতিক নারীদিবসে এ তহবিলের উদ্যোগে এসিড-সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে নারীদের সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করে পুরুষদের র্যালি বের করা হয়। তবে এর প্রথম সূত্রপাত ঘটে ২০০২ সালে। এ দিন এসিড-আক্রান্ত নারীদের প্রতি সহমর্মিতা দেখিয়ে এবং পুরুষ হিসেবে নারীদের এই নিপীড়নের দায় স্বীকার করে পুরুষদের এক বিশাল র্যালি ও সমাবেশের আয়োজন করা হয়। ঢাকা কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে আয়োজিত এ সমাবেশে অসংখ্য মানুষ স্বতঃস্ফূর্তভাবে অংশ নেয়।

এই ব্যতিক্রমী ও অভিনব সমাবেশে এসে একাত্মতা প্রকাশ করে দেশের বিভিন্ন সংগঠনের সদস্য ও শিক্ষায়তনের ছাত্রশিক্ষকরা। বিশিষ্ট নাগরিকেরা এ সমাবেশে অংশ নেন। বিপুল মানুষের অংশগ্রহণে এ নারীদিবস উদ্যাপন ছিল অভূতপূর্ব। দেশজুড়ে ক্রমবর্ধমান এসিড-সন্ত্রাস নিয়ে পুরুষদের দায় স্বীকার করা ও তাদের সচেতন করে তোলার উদ্দেশ্যে আন্তর্জাতিক নারীদিবসে এ প্রতীকী সমাবেশ আয়োজিত হয়।প্রতি বছর একই দিনে দেশের ৭৭টি স্থানে প্রথম আলোর উদ্যোগে র্যালির আয়োজন করা হয়। এসব এসিডবিরোধী র্যালিতে অসংখ্য পুরুষ স্বতঃস্ফূর্তভাবে অংশ নেন। সাইকেল র্যালি : প্রথম আলোর পাঠক সংগঠন ‘বন্ধুসভা’র সদস্য —এসিড-সন্ত্রাসরোধে জনমত গঠনে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে সাইকেল র্যালি করেন। দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে গিয়ে তারা এসিড-সন্ত্রাসের প্রতিরোধে মানুষকে উদ্বুদ্ধ করেন। রোভার স্কাউটরা ও এসিড-সন্ত্রাসরোধে জনমত গঠনে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে সাইকেল র্যালি করেন।

মানববন্ধন: সম্প্রতি ‘প্রথম আলো সহায়ক তহবিল’-এর উদ্যোগে এসিড নিক্ষেপকারী কাদেরকে দ্রুত গ্রেপ্তারের দাবিতে কুমিল্লায় একটা মানববন্ধনের আয়োজন করা হয়। গৃহবধূ আয়েশা বেগমের ওপর এসিড নিক্ষেপকারী আবদুল কাদেরকে দ্রুত গ্রেপ্তারের দাবি জানিয়েছে কুমিল্লার সর্বস্তরের মানুষ। এসিড-সন্ত্রাসী কাদেরকে গ্রেপ্তারের দাবিতে ২০০৭ সালের ১৬ মে বুধবার কুমিল্লায় জেলা শিল্পকলা একাডেমী সংলগ্ন রাস্তায় সকাল ১০টায় এ মানববন্ধন শুরু হয়। ঘণ্টাব্যাপী এই কর্মসূচিতে সুশীল সমাজের প্রতিনিধি, জনপ্রিয় সংগীতশিল্পী, বিভিন্ন বেসরকারি সংস্থার প্রতিনিধি, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের নেতা, ছাত্র, জনতা ও বিভিন্ন গণমাধ্যমের কর্মীরা অংশ নেন।

এ মানববন্ধনের সঙ্গে বিভিন্ন স্তরের তিন শতাধিক লোক সংহতি প্রকাশ করেন। মানববন্ধন শেষে আয়োজকদের পক্ষ থেকে একই দাবিতে কুমিল্লার পুলিশ সুপার (এসপি) মীর শহীদুল ইসলামকে স্মারকলিপি দেওয়া হয়। গত ১৭ মার্চ কুমিল্লা শহরতলির দৌলতপুর গ্রামে আয়েশা বেগমকে তাঁর স্বামী কাদের এসিড নিক্ষেপ করে। সরাইলে মানববন্ধন: এসএসসি পাস করে যখন কলেজে ভর্তি হওয়ার স্বপ্ন দেখছিলেন, তখন অনৈতিক কর্মকাণ্ডের প্রতিবাদ করায় সরাইল গ্রামের সৈয়দ জাহাঙ্গীর আলম নামের কথিত পীর এসিড নিক্ষেপ করে।

সালমার ওপর এসিড নিক্ষেপকারী কথিত ‘পীর’ সৈয়দ জাহাঙ্গীর আলমকে গ্রেপ্তারের দাবিতে গত বছর ১২ জুলাই ২০০৭ ব্রাহ্মণবাড়িয়া ও সরাইলে মানববন্ধন হয়েছে। এসিডদগ্ধ নারীদের জন্য প্রথম আলো সহায়ক তহবিলের উদ্যোগে ওই মানববন্ধন থেকে জাহাঙ্গীরকে গ্রেপ্তারের জোর দাবি ওঠে। এসব মানববন্ধনে সমাজের বিভিন্ন স্তরের কয়েক হাজার মানুষ অংশ নেন। ব্রাহ্মণবাড়িয়া পুরাতন কোর্ট ভবন এলাকায় মানববন্ধনে জেলার বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ছাত্রছাত্রী, সামাজিক, সাংস্কৃতিক সংগঠনের ব্যক্তিসহ পাঁচ শতাধিক নারী-পুরুষ অংশ নেয়।

একই দিন দুপুরে সালমার নিজের উপজেলা সরাইলেও মানববন্ধন হয়। উপজেলার হাসপাতাল সড়কে এ মানববন্ধন সরাইল বালিকা উচ্চবিদ্যালয়, সরাইল অন্নদা সরকারি উচ্চবিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী, শিক্ষক-অভিভাবকসহ সহস্রাধিক মানুষ অংশ নেয়। এ মানববন্ধনেও পীর জাহাঙ্গীরকে গ্রেপ্তারের জোর দাবি তোলা হয়। এসিডদগ্ধ নারীদের জন্য প্রথম আলো সহায়ক তহবিলের পক্ষ থেকে পুলিশ সুপারকে একটি স্মারকলিপি দেওয়া হয়। আলোচনা সভা : প্রথম আলোর উদ্যোগে বিভিন্ন সেবাসংস্থার প্রতিনিধি, সাংবাদিক, দেশের নানা স্তরের মানুষ নিয়ে আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়। ‘এসিডদগ্ধদের পাশে এগিয়ে আসুন’ -শীর্ষক উন্মুক্ত আলোচনার আয়োজন করা হয়।

বিভিন্ন সেবাসংস্থার প্রতিনিধি, সাংবাদিক, দেশের নানা স্তরের মানুষ এ আলোচনায় অংশগ্রহণ করে। এসিডদগ্ধ নারীরাও এতে তাদের মনের কথা ব্যক্ত করেন। বিভিন্ন সরকারি দপ্তরে এ সংক্রান্ত বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণের সুবিধার কথা ভেবে এ সভায় আলোচিত বিষয় পর্যালোচনা করে বিভিন্ন সুপারিশ পেশ হয়। সেই সুপারিশমালার ভিত্তিতে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় এসিড সহজলভ্যতা রোধে পদক্ষেপ নেয়। গোল টেবিল বৈঠক: ২০০১ সালে বানিজ্য মন্ত্রনালয় ও প্রথম আলো একটি গোল টেবিল বৈঠকের আয়োজন করে।

সিরডাপে আয়োজিত এই অনুষ্ঠানে এসিড বানিজ্যনীতি, আমদানী — রপ্তানী ইত্যাদি বিষয়ে আলোচনা করা হয়। সরকারি উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাগন বানিজ্যমন্ত্রীসহ অনেকে উপস্থিত ছিলেন।এই অনুষ্ঠানটি অত্যন্ত ফলপ্রসু কারন পরবর্তীতে ২০০২ সালে এসিড বিষয়ক আইন প্রণয়ন করা হয়। তিন অধ্যায় নাটকের সিডি প্রকাশ: মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরে ৮ই মার্চ ২০০৬ সালে তিন অধ্যায় নাটকের সিডি প্রকাশ করা হয়। এই নাটক প্রথম আলোর সার্বিক তত্তাবধানে ও মোসতফা সারোয়ার ফারূকীর রচনায় ও নির্দেশনায় নির্মিত। এই নাটকে এসিড সন্ত্রাসের একটি ভয়াল রূপ তুলে ধরা হয়েছে। নাটকে তারিন মূল চরিত্রে অভিনয় করেছে। বাংলাদেশের যে কোনো গ্রামের মতোই এই গ্রামটি। সহজ সরল সুন্দরী তারিন বাস কওে মা ও ছোট বোনের সাথে। গ্রামের বখাটে ছেলে যার বাবা চেয়ারম্যান সে তারিনকে ভালোবাসে। কিছুতেই যখন তারিন সেই প্রসতাবে রাজি না হয় তখন তার উপর নেমে আসে চরম দূর্ভোগ অর্থ্যাত্ এসিড সস্ত্রাস। চিকিত্সা করে সে ভালো হয়ে যায় এবং অপরাধীর শাসিত দেয় গ্রামবাসী। এই নাটকটি অত্যন্ত বাসতবিক, প্রথম আলোর এসিড সংগ্রামের আন্দোলনের অন্যতম মাইলফলক । আন্তর্জাতিক নারী দিবসে বেরিয়েছে বহুল আলোচিত নাটক তিন অধ্যায়-এর ভিসিডি। গত ৮ মার্চ মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের উন্মুক্ত মঞ্চে ভিসিডিটির মোড়ক উন্মোচন করা হয়। এসিড সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে সচেতনতা বৃদ্ধির জন্য এই নাটকটি তৈরি করেছে ‘প্রথম আলো সহায়ক তহবিল’। মেধাবী ছাত্রী মিতা। তার স্বপ্ন লেখাপড়া শিখে নিজের পায়ে দাঁড়াবে। কিন্তু তার এই স্বপ্ন বাস্তবায়নে বাধা হয়ে দাঁড়ায় এলাকার এক বখাটে ছেলে। সে তাকে বিয়ের প্রস্তাব পাঠায়। ছেলের বাবার কাছে নালিশ করেও কোনো সাড়া পায় না মিতার মা। এক পর্যায়ে প্রতিবাদ জানালে মিতার গায়ে এসিড ছুড়ে মারে ওই ছেলে। শুরু হয় মিতার জীবনের নতুন এক অধ্যায়।

এ পর্যায়ে মিতাকে লড়াই করতে হয় সামাজিক প্রতিকূলতার বিরুদ্ধে। নিজের পরিবারেও সে যেন বোঝা হয়ে ওঠে। একসময় অতিষ্ঠ হয়ে জীবন থেকেই ছুটি নিতে চায় মিতা। তখনই সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেয় প্রবাসী এক বাঙালি। মিতার চিকিত্সার সব ভার নেয় সে। ধীরে ধীরে আবার স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসে মিতা। এলাকাবাসীর সহযোগিতায় ধরা পড়ে এসিড নিক্ষেপকারী সেই নরপশু। বাস্তব ঘটনা অবলম্বনে তৈরি এ নাটকটি প্রযোজনা করেছে ‘প্রথম আলো সহায়ক তহবিল’। কাহিনী ও চিত্রনাট্য তৈরি করেছেন আলী ফিদা একরাম তোজো এবং মোস্তফা সরয়ার ফারুকী।

অভিনয়ে তারিন, ফজলুর রহমান বাবু, আরমান পারভেজ মুরাদ, সোহাগ, ইফতি, ড. ইনামুল হক, শিরিন আলম এবং ফারহানা আলম স্বর্ণা। পরিচালনায় মোস্তফা সরয়ার ফারুকী। তিন অধ্যায় নাটকের সব শিল্পী এবং কলাকুশলীরা বিনা পারিশ্রমিকে কাজ করেছেন। তারিন বলেন, ‘এসিডদগ্ধ নারীদের পাশে দাঁড়ানোর জন্য এই নাটকে কাজ করেছি। ভালো লাগছে এমন চমত্কার এবং ভিন্ন উপস্থাপনার নাটকে অভিনয় করতে পেরে।’ ফারহানা আলম স্বর্ণা বলেন, ‘যারা এসিড ছোড়ে তারা সমাজ ও মানবতার শত্রু, মানুষরূপী এই পশুদের সমাজের সব ক্ষেত্র থেকে তাড়াতে হবে ।

এসিডদগ্ধ নারীদের পাশে দাঁড়ানোর জন্য এই নাটকে কাজ করেছি। মোস্তফা সরয়ার ফারুকী বলেন, ‘এসিড নিক্ষেপের মতো ঘৃণ্য একটি কাজের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ এবং এসিডদগ্ধ নারীদের পাশে থাকার জন্য তৈরি করেছি তৃতীয় অধ্যায়। আমার বিশ্বাস, সাধারণ দর্শকের কাছেও এটি ভালো লাগবে।’ ভিসিডির পরিবেশক মুভি প্লাসের কর্ণধার এম এ বাশির ভূঁইয়া জানান, বসুন্ধরা সিটি এবং রাইফেল্স স্কয়ারের মুভি প্লাসের নিজস্ব বিক্রয় কেন্দ্র ছাড়াও শহরের অন্যান্য সিডি ও ভিসিডির দোকানে তিন অধ্যায় পাওয়া যাবে। উল্লেখ্য, তিন অধ্যায় নাটকের ভিসিডির প্রকাশনাস্বত্ব থেকে প্রাপ্ত অর্থ ‘প্রথম আলো সহায়ক তহবিল’-এ জমা দেওয়া হবে। ভিসিডির দাম ৬০ টাকা । পাওয়া যাচেছ মুভি প্লাস ৮২-৯৫, ব্লক-ডি, লেভেল ৬, বসুন্ধরা সিটি, ঢাকা,