রানা প্লাজায় আহত আরও ১৫ জন অনুদান পেলেন

‘রানা প্লাজায় কাজ করতে গিয়ে আমার গর্ভে থাকা শিশুকে হারিয়েছিলাম, পা গুরুতর জখম হয়েছিল। ওখানে কাজ করতে গিয়ে আমার ভাইও মরে গেল, আমাদের পরিবার ছিল বিপদগ্রস্ত। কিন্তু প্রথম আলো ট্রাস্টের পক্ষ থেকে পাওয়া এক লাখ টাকায় আমি নতুন করে স্বপ্ন দেখতে শুরু করেছি। এই টাকায় ছোট একটা দোকান দিয়ে আমি নিজের পায়ে দাঁড়ানোর চেষ্টা করব।’
প্রথম আলোর কার্যালয়ে গতকাল বৃহস্পতিবার সকালে প্রথম আলো ট্রাস্টের পক্ষ থেকে এক লাখ টাকার চেক পাওয়ার পর এই অনুভূতি ব্যক্ত করেন সাভারের রানা প্লাজায় আহত মোমেনা খাতুন। একই দিনে মোমেনাসহ আরও ১৫ জন আহত ব্যক্তিকে ১৫ লাখ টাকা অনুদান দেওয়া হয়। এই আহত ব্যক্তিদের অনেকেই উদ্ধারের সময় হাতে, পায়ে, মেরুদণ্ডে বা শরীরের বিভিন্ন স্থানে গুরুতর আঘাত পেয়েছিলেন।
রানা প্লাজার দুর্ঘটনার পর প্রথম আলো ট্রাস্ট আহত ব্যক্তিদের শারীরিক, মানসিক, পারিবারিক ও অন্যান্য ক্ষতির মাত্রা বিবেচনা করে ১০০ জনের একটি তালিকা করে। সেখান থেকেই ধারাবাহিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিদের হাতে এই অনুদান দেওয়া হচ্ছে।
আহত ব্যক্তিদের হাতে চেক তুলে দেন ট্রাস্টের ট্রাস্টি ব্যরিস্টার তানজিব-উল-আলম, প্রথম আলোর সহযোগী সম্পাদক আব্দুল কাইয়ুম, আনিসুল হক ও প্রথম আলোর ত্রৈমাসিক প্রকাশনা প্রতিচিন্তার ব্যবস্থাপনা সম্পাদক খন্দকার সাখাওয়াত আলী।
চেক প্রদান অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন আব্দুল কাইয়ুম। তানজিব-উল-আলম ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিদের প্রথম আলোর অনুদানসহ অন্যান্য অনুদান দীর্ঘ মেয়াদে কাজে লাগানোর পরামর্শ দেন। আনিসুল হক বলেন, ‘আপনাদের উপকারে আসে এমন সব ধরনের সহযোগিতা করার জন্য প্রথম আলো আপনাদের পাশেই আছে।’
অনুদান পাওয়ার পর যশোরের মোসাম্মাৎ ফেলি বেগম (৩৫) জানান, রানা প্লাজা থেকে উদ্ধারের সময় তাঁর হাত পা ভেঙে গেছে। কাজ করার সামর্থ্য হারিয়ে ফেলেছেন। ছোট মেয়ের স্কুলে যাওয়া বন্ধ। এই অনুদানের টাকা দিয়ে স্বামীকে একটি দোকান করে দেবেন ও মেয়েকে স্কুলে পাঠাবেন। যাঁদের সহায়তা করা হলো: রাফিয়া, সাইফুল ইসলাম, জেসমিন আক্তার, মিজানুর রহমান, আবদুল আলীম, সহিদুল ইসলাম, মো. বাকী বিল্লাহ, হিরা রাণী দাস, মোসাম্মত নাসিমা, বীনা আক্তার, রাহেনা খাতুন, ফারহানা নাসরিন (উর্মি), মোসাম্মাৎ ফেলী বেগম, মমতা বেগম ও মোমেনা খাতুন। সহায়তা তহবিলের পরিকল্পনা: প্রথম আলো ট্রাস্টের অধীন মেরিল-প্রথম আলো সাভার সহায়তা তহবিলের পরিকল্পনা অনুযায়ী রানা প্লাজায় আহত শ্রমিকদের মধ্য থেকে ১০০ জনকে বাছাই করে তাঁদের আর্থিক সহায়তা দেওয়া ও পুনর্বাসনের কাজ চলছে। এ পর্যন্ত এই সহায়তা পেয়েছেন ৮০ জন। এ ছাড়া ২০ জনকে চিকিৎসা বাবদ ২০ হাজার টাকা করে (ম্যাডোনা গ্রুপের সহায়তায়) দেওয়া হয়েছে।
তহবিলে আরও যাঁরা সাহায্য দিলেন: পাপিয়া, রাকিবুল হাসান ও সুলতানা জলিলের অনুদানসহ মোট জমার পরিমাণ দাঁড়াল ২,১৬,৫৭,৯২৩ (দুই কোটি ১৬ লাখ ৫৭ হাজার ৯২৩) টাকা। এখন পর্যন্ত মোট ব্যয় হয়েছে ১,৩৮,৯৪,২৯৬ ( এক কোটি ৩৮ লাখ ৯৪ হাজার ২৯৬) টাকা। এর মধ্যে সহায়তাপ্রাপ্ত ও তাঁদের পরিবারের সদস্যদের ঢাকায় আসা-যাওয়া, বিভিন্ন হাসপাতালে একাধিকবার চিকিৎসা ও যাতায়াত খরচ, খাবার খরচ ও প্রশাসনিক ব্যয় হয়েছে ১৫ লাখ ৫৪ হাজার ৬৮৪ টাকা।