লেখাপড়া শিখে মানুষ হওয়ার স্বপ্ন

মেরিল-প্রথম আলো সাভার সহায়তা তহবিলের শিক্ষাবৃত্তি নিয়ে লেখাপড়া করছে এই শিশুরা। ফাইল ছবি
মেরিল-প্রথম আলো সাভার সহায়তা তহবিলের শিক্ষাবৃত্তি নিয়ে লেখাপড়া করছে এই শিশুরা। ফাইল ছবি

সুমনা হক দ্বাদশ শ্রেণিতে পড়েন। লালমনিরহাটের হাতীবান্ধা উপজেলার বড়খাতা ডিগ্রি কলেজের এই শিক্ষার্থী এখন স্বপ্ন দেখেন বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার। অথচ ২০১৩ সালে সাভারের রানা প্লাজা ধসে মা হারানোর পর তাঁর পড়াশোনাই বন্ধ হয়ে যেতে বসেছিল। তখনই সুমনার পাশে দাঁড়ায় প্রথম আলো ট্রাস্ট। ব্যবস্থা করে শিক্ষাবৃত্তির।

সুমনা হক শুধু একা নন, ‘মেরিল-প্রথম আলো সাভার সহায়তা তহবিল’-এর আওতায় প্রতি মাসে শিক্ষাবৃত্তি দেওয়া হচ্ছে রানা প্লাজায় নিহত ২০ জনের সন্তানকে। এই শিক্ষার্থীদের মধ্যে যেমন স্নাতকপড়ুয়া শিক্ষার্থী আছেন, তেমনই আছে চতুর্থ শ্রেণির শিক্ষার্থীও।

২০১৩ সালের ২৪ এপ্রিল রানা প্লাজা ধসের দুদিন পর গঠিত হয় ‘মেরিল-প্রথম আলো সাভার সহায়তা তহবিল’। দেশের বিভিন্ন অঙ্গনের শিল্পী ও কলাকুশলীদের ৫৪ লাখ টাকার অনুদান নিয়ে শুরু হলেও পরবর্তী সময়ে তহবিলে সহায়তা করেন সমাজের সব স্তরের মানুষ।

সহায়তা তহবিলে বিভিন্ন সময়ে জমা হয় প্রায় ২ কোটি ২২ লাখ টাকা। এর থেকে প্রায় ৭০ লাখ টাকা ব্যয় হয় উদ্ধারকাজ এবং চিকিৎসায়। ১ কোটি টাকা খরচ হয় ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের পুনর্বাসন সহায়তা কাজে। তহবিলের বাকি টাকা থেকে ৫০ লাখ টাকার স্থায়ী আমানতপত্র করা হয় ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের ২০ সন্তানকে শিক্ষাবৃত্তি দেওয়ার জন্য।

এই শিক্ষার্থীদের পড়াশোনার জন্যই গেল ১৮ সেপ্টেম্বর প্রথম আলো ট্রাস্টকে অনুদান দিয়েছে বাংলাদেশ ডায়াবেটিক সমিতির অঙ্গপ্রতিষ্ঠান ন্যাশনাল হেলথকেয়ার নেটওয়ার্ক (এনএইচএন)। সংগঠনের কর্মকর্তারা সেদিন প্রথম আলো সম্পাদক মতিউর রহমানের হাতে ১ লাখ ৫৫ হাজার ৬২০ টাকার চেক ও পে অর্ডার তোলে দেন।

শিক্ষার্থীদের পড়াশোনার জন্য ১ লাখ ৫৫ হাজার ৬২০ টাকার অনুদান দেন বাংলাদেশ ডায়াবেটিক সমিতির অঙ্গপ্রতিষ্ঠান ন্যাশনাল হেলথকেয়ার নেটওয়ার্ক (এনএইচএন)। সংগঠনের কর্মকর্তারা প্রথম আলো সম্পাদক মতিউর রহমানের হাতে এই চেক তোলে দেন। ছবি:প্রথম আলো।
শিক্ষার্থীদের পড়াশোনার জন্য ১ লাখ ৫৫ হাজার ৬২০ টাকার অনুদান দেন বাংলাদেশ ডায়াবেটিক সমিতির অঙ্গপ্রতিষ্ঠান ন্যাশনাল হেলথকেয়ার নেটওয়ার্ক (এনএইচএন)। সংগঠনের কর্মকর্তারা প্রথম আলো সম্পাদক মতিউর রহমানের হাতে এই চেক তোলে দেন। ছবি:প্রথম আলো।

এ সময় ন্যাশনাল হেলথকেয়ার নেটওয়ার্কের পক্ষে উপস্থিত ছিলেন সংগঠনের উপদেষ্টা মোশারফ হোসেন, পরিচালক সিএম দিলওয়ার রানা এবং শহীদ খালেক-ইব্রাহিম জেনারেল হাসপাতালের পরিচালক নজরুল ইসলাম।

তহবিলের আওতায় শিক্ষাবৃত্তি পাওয়া ২০ জন শিক্ষার্থীর মধ্যে সাভারের একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে কম্পিউটার বিজ্ঞানে স্নাতক করছেন রায়মা জাহান। তাঁর ভাই ইমাম হাসান রাজধানীর একটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে স্থাপত্য বিষয়ে ডিপ্লোমা করছেন। এ ছাড়া উচ্চমাধ্যমিকে পড়ছেন সুমনা হক ও রেদোয়ান হোসেন, নবম শ্রেণিতে তাজভিদ হোসেন, হাসান মাহমুদ, মনিকা আক্তার ও শারমিন আক্তার, অষ্টম শ্রেণিতে আরজু শেখ, রঞ্জু শেখ, সুমা মনি দাস ও মাহিয়া আক্তার, সপ্তম শ্রেণিতে কামরুজ্জামান রোহান ও সুমি মনি দাস, ষষ্ঠ শ্রেণিতে মাহবুবা রহমান ও পাপিয়া আক্তার, পঞ্চম শ্রেণিতে মেহেদী হাসান, নয়ন ও জান্নাতুল ফেরদৌস এবং চতুর্থ শ্রেণিতে পড়ছে মৃদুল হোসেন।

রেদোয়ান হোসেন উচ্চমাধ্যমিকে পড়ছে রাজধানীর সরকারি বাংলা কলেজে। তাঁর মা হোসনে আরা বলেন, ‘বৃত্তির টাকা দিয়েই আমার ছেলে পড়াশোনা করছে। রানা প্লাজা ধসে আমার স্বামী মারা যাওয়ার পর দুই সন্তান নিয়ে পথে বসেছিলাম। প্রথম আলোর সেদিন পাশে না দাঁড়ালে ওর পড়াশোনা বন্ধ হয়ে যেত। তাদের এই ঋণ আমি কোনো দিন শোধ করতে পারব না।’

বৃত্তিপ্রাপ্ত প্রত্যেক শিক্ষার্থী স্নাতকোত্তর শেষ করা পর্যন্ত এই আর্থিক সুবিধা পাবেন বলে জানিয়েছে প্রথম আলো ট্রাস্ট।