বাধা ডিঙিয়ে সাফল্যের পথে

ব্র্যাক ব্যাংক ও প্রথম আলো ট্রাস্টের উদ্যোগে সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে স্নাতক ও ডিপ্লোমা পাস অদম্য মেধাবীদের সঙ্গে অতিথিরা। গতকাল রাজধানীর কারওয়ান বাজারের সিএ ভবন মিলনায়তন থেকে তোলা ছবি। প্রথম আলো
ব্র্যাক ব্যাংক ও প্রথম আলো ট্রাস্টের উদ্যোগে সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে স্নাতক ও ডিপ্লোমা পাস অদম্য মেধাবীদের সঙ্গে অতিথিরা। গতকাল রাজধানীর কারওয়ান বাজারের সিএ ভবন মিলনায়তন থেকে তোলা ছবি। প্রথম আলো

অভাব ও দারিদ্র্যের মধ্যেই ছোটবেলা থেকে বেড়ে ওঠা পঞ্চগড়ের বোদা উপজেলার নগর সাকোয়া গ্রামের মাহফুজা আক্তারের। সাকোয়া বালিকা উচ্চবিদ্যালয় থেকে বিজ্ঞান বিভাগে পায় গোল্ডেন জিপিএ-৫ সে।

 মাহফুজার ইচ্ছা ছিল চিকিৎসক হওয়ার। প্রথম আলো ট্রাস্টের আর্থিক সহায়তা পেয়ে রংপুর কারমাইকেল কলেজ থেকে উচ্চমাধ্যমিকে বিজ্ঞান বিভাগ থেকে জিপিএ-৫ পেয়ে স্বপ্নপূরণের পথে আরও একধাপ এগিয়ে যান। এ বছর সারা দেশের মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষায় ২৯০তম হয়ে মাহফুজা এখন স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজে পড়ার সুযোগ পেয়েছেন।

গতকাল শনিবার ঢাকায় সিএ ভবন মিলনায়তনে ব্র্যাক ব্যাংক-প্রথম আলো ট্রাস্টের দেওয়া সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে আর্থিক সহায়তার জন্য কৃতজ্ঞতা জানালেন মাহফুজা। আবেগে আপ্লুত তাঁর চোখ। বললেন, লেখাপড়া শেষে ভালো চিকিৎসক হয়ে মানুষের সেবায় নিজেকে নিয়োজিত করতে চান তিনি।

নিম্ন আয়ের পরিবারের সন্তান হৃদয় চন্দ্র দাস। জেএসসি ও পিইসিতে গোল্ডেন জিপিএ-৫ পান হৃদয়। পরে সুনামগঞ্জের ধরমপাশা উপজেলার বাদশাগঞ্জ পাবলিক হাইস্কুল থেকে বিজ্ঞান বিভাগে এসএসসিতে জিপিএ-৫ আর ময়মনসিংহ সৈয়দ নজরুল ইসলাম কলেজ থেকে এইচএসসিতে বিজ্ঞান বিভাগে জিপিএ-৫ পান। এই অদম্যকে বেঁধে রাখতে পারেনি দারিদ্র্য। প্রথম আলো ট্রাস্টের দেওয়া আর্থিক সহায়তা পেয়ে এ বছর তিনি হবিগঞ্জ মেডিকেল কলেজে পড়ার সুযোগ পেয়েছেন।

জান্নাতুল ফেরদৌসের পরিবারে অভাব-অনটন নিত্যসঙ্গী। লালমনিরহাটের হাতীবান্ধা উপজেলার হাতীবান্ধা এসএস মডেল উচ্চবিদ্যালয় থেকে এসএসসিতে বিজ্ঞান বিভাগে জিপিএ-৫ পেয়েছে। উচ্চমাধ্যমিক পড়া অনেকটাই অনিশ্চিত হয়ে পড়েছিল তার। এ সময় পাশে দাঁড়ায় প্রথম আলো ট্রাস্ট। উচ্চমাধ্যমিকে পড়াশোনার জন্য বৃত্তি পায় সে। এখন জান্নাতুল ফেরদৌস চিকিৎসক হওয়ার স্বপ্ন দেখে। গতকাল শনিবার বাবাকে নিয়ে অদম্য মেধাবী সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে এসেছিল সে। কণ্ঠে যেন ইস্পাতকঠিন দৃঢ়তা, চোখেমুখে সব বাধাকে জয়ের স্বপ্ন। জান্নাতুল বলে, ‘আমাকে চিকিৎসক হতেই হবে। আমি এ জন্য ভালোভাবে পড়াশোনা করব। প্রথম আলো ও ব্র্যাক ব্যাংককে ধন্যবাদ আমার মতো শিক্ষার্থীর পাশে দাঁড়ানোর জন্য।’

৮ স্নাতকের কথা

 তাঁদের সবার গল্প—দারিদ্র্য জয়ের, প্রেরণার। বন্ধুর পথ মাড়িয়ে সাফল্যের পথে ছোটার। ব্র্যাক ব্যাংক-প্রথম আলো ট্রাস্টের বৃত্তি নিয়ে স্নাতক ও ডিপ্লোমা সম্পন্নকারী ৮ জন বৃত্তিপ্রাপ্ত শিক্ষার্থীকেও সম্মাননা দেওয়া হয় অনুষ্ঠানে।

তাঁদেরই একজন ফেনীর কুটিরহাটের লিঙ্কন চন্দ্র ঘোষ। এসএসসিতে জিপিএ-৫ পেয়েও অর্থাভাবে থমকে গিয়েছিল পড়াশোনা। তখন বৃত্তি নিয়ে পাশে দাঁড়ায় ব্র্যাক ব্যাংক-প্রথম আলো ট্রাস্ট। ওই বৃত্তির সুবিধা পেয়ে উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষাতেও ধরে রাখেন সাফল্যের ধারা। পান জিপিএ-৫। সেই লিঙ্কন এবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ম্যানেজমেন্ট ইনফরমেশন সিস্টেমস বিভাগ থেকে স্নাতক সম্পন্ন করেছেন। লিঙ্কন বলেন, ‘বৃত্তি না পেলে হয়তো আমার পড়াশোনা করা হতো না। আমি এখন একই বিভাগে স্নাতকোত্তর করছি, সঙ্গে প্রস্তুতি নিচ্ছি বিসিএসের।’

লিঙ্কনের মতোই বাকিদের গল্প। তাঁদের মধ্যে আনোয়ার ইসলাম সম্প্রতি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে হিসাবিজ্ঞানে বিবিএ শেষ করেছেন; মেহেরপুরের রুনা লায়লা জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের হিসাবিজ্ঞানে স্নাতক; দিনাজপুরের হাজী দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ব্যবস্থাপনায় নীলফামারীর জয়ন্তী রায়; আবদুল কাদের ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেকট্রনিকস ইঞ্জিনিয়ারিং (ইইই) বিষয়ে স্নাতক করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে।

 ডিপ্লোমা প্রকৌশল সম্পন্ন করেছেন তিনজন। জামালপুরের ইমান আলী ঢাকা পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট থেকে অটোমোবাইল টেকনোলজি বিভাগে; সাতক্ষীরার ইমাম হোসেন ঝিনাইদহের ইনস্টিটিউট অব হেলথ টেকনোলজি থেকে ল্যাবরেটরি মেডিসিন বিভাগে; বগুড়ার ইনস্টিটিউট অব ইনফরমেশন টেকনোলজি থেকে মেকানিক্যাল বিভাগে ডিপ্লোমা শেষ করেছেন সিরাজগঞ্জের সেলিম রেজা।

স্নাতক ও ডিপ্লোমা সম্পন্ন করা এই তরুণদের কেউ উচ্চতর ডিগ্রির জন্য পড়াশোনা করছেন, কেউবা চাকরিপ্রত্যাশী। ইমান আলী বলেন, ‘২০১২ সাল থেকে আমার পাশে অভিভাবকের মতো ছিল প্রথম আলো ট্রাস্ট। তাদের সহযোগিতা ছাড়া আমি এত দূর আসতে পারতাম না।’