নানা আয়োজন ছিল আলোর পাঠশালায়

মহান স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে বাবুডাইং আদিবাসী আলোর পাঠশালায় নৃত্য পরিবেশন করছে শিক্ষার্থীরা।
মহান স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে বাবুডাইং আদিবাসী আলোর পাঠশালায় নৃত্য পরিবেশন করছে শিক্ষার্থীরা।

বাবুডাইং আদিবাসী আলোর পাঠশালার শিক্ষার্থীরা গতকাল সোমবার নানা আয়োজনে উৎসবমুখর পরিবেশে স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস উদ্‌যাপন করেছে।

রাজশাহীর গোদাগাড়ী উপজেলার বরেন্দ্রভূমির গহিনে অবস্থিত ক্ষুদ্র জাতিসত্তার নিভৃত গ্রাম বাবুডাইং গ্রামে প্রথম আলো ট্রাস্ট পরিচালিত বিদ্যালয়ে সকাল আটটায় জাতীয় সংগীতের মধ্য দিয়ে শুরু হয় অনুষ্ঠান। এরপর বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের খেলাধুলার পাশাপাশি গ্রামবাসীদের নিয়ে তির ছোড়া ও হাঁড়িভাঙা খেলার আয়োজন করা হয়। এ ছাড়া নিজেদের বাল্যবিবাহ রুখে দেওয়ার জন্য বিদ্যালয়ের তিন শিক্ষার্থী জোনাকি কোল সাইচুরি, অনিতা হাসদা ও সিমতি টুডুকে সংবর্ধনা দেওয়া হয়।

মহান স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে বাবুডাইং আদিবাসী আলোর পাঠশালায় বিস্কুট দৌড়ে শিক্ষার্থীরা।
মহান স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে বাবুডাইং আদিবাসী আলোর পাঠশালায় বিস্কুট দৌড়ে শিক্ষার্থীরা।

বাবুডাইং ও ক্ষুদ্র জাতিসত্তার পার্শ্ববর্তী বাবুডাইং বনের পাশে আশ্রয় নেওয়া চাঁপাইনবাবগঞ্জের চর এলাকার নদীভাঙনকবলিত এলাকার বাঙালি নানা বয়সী নারী-পুরুষের অংশগ্রহণে অনুষ্ঠান হয়ে ওঠে ক্ষুদ্র জাতিসত্তা ও বাঙালি মিলন মেলায়।

তির ছোড়া প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণকারী ৬৮ বছর বয়সী দেবেন কোল হাসদা বলেন, ‘তির ছোড়া ভুলে গেছলাম। অনেক বছর পরে ইস্কুলের অনুষ্ঠানে তির হাতে নিতে পারলাম। খুব ভালো লাগছে। ইস্কুলে অনুষ্ঠানগুলাতে তির ছোড়ার খেলাটা জানি থাকে। তোবে হামরা এটা প্র্যাকটিস করব। আগে বাড়ি বাড়ি তির-ধনুক থাকতোক। এখুন গ্রামে দু-একটা বাড়ি ছাড়া পাবানা।’

তিনি তির ছুড়ে তৃতীয় পুরস্কার পান। যৌথভাবে তৃতীয় স্থান অধিকার করেন ভুটু কিসকু। গ্রামের তরুণ-যুবকেরাও তির ছোড়ায় অংশ নেয়। সনাতন টুডু নামের একজন প্রথম ও বিদ্যালয়ের শিক্ষক বিমল হাসদা পান দ্বিতীয় পুরস্কার।

অন্যান্য খেলার মধ্যে শিক্ষার্থীদের জন্য ছিল বিস্কুট দৌড়, মোরগ লড়াই, দড়ি খেলা, চামচ-গুলতির ভারসাম্য দৌড় ও দৌড় প্রতিযোগিতা। উন্মুক্ত খেলার মধ্যে ছিল বালিশ খেলা ও যেমন খুশি তেমন সাজো। খেলায় সবার হাতে পুরস্কার তুলে দেওয়া হয়।

মহান স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে বাবুডাইং আদিবাসী আলোর পাঠশালায় তির ছোড়া প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয়।
মহান স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে বাবুডাইং আদিবাসী আলোর পাঠশালায় তির ছোড়া প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয়।

অনুষ্ঠানে গত এক মাসে বিদ্যালয়ে শতভাগ উপস্থিত থাকার জন্য শিক্ষার্থীদের পুরস্কার দেন মনামিনা এগ্রো পার্ক। এ ছাড়া পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের হাতে একটি করে জ্যামিতি বক্স তুলে দেন চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর উপজেলার লক্ষ্মীপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পঞ্চম শ্রেণির ছাত্রী মুশফিকুন মিনহা। সে ঘুরে ঘুরে বিদ্যাদানকারী অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক তরিকুল আলমের নাতনি। প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করতে গিয়ে মুশফিকুন মিনহা বলে, ‘ক্ষুদ্র জাতিসত্তার শিশুদের এ অনুষ্ঠান দেখে আমাকে খুব ভালো লেগেছে। আমি আবারও অনুষ্ঠানে আসব এবং ওদের জন্য উপহার নিয়ে আসব। আমি ওদের বলেছি, তোমাদের এগোতেই হবে।’